E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইজারাদারের আজব টোল রেইট 

খাস করা হচ্ছে ব্রিজঘাট বাজারের জমি!

২০২৩ এপ্রিল ২০ ১৬:২৮:১১
খাস করা হচ্ছে ব্রিজঘাট বাজারের জমি!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ব্রিজঘাট সন্ধ্যা বাজারটি দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারো ইজারা দেয়া নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে বাজার ইজারা নিয়ে ইজারাদাতা উপজেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়িদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মাইকিং হয়েছে। ব্যবসায়িদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যবসায়িরা মানববন্ধনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

জানা যায়, বাজারটি যে জায়গায় গড়ে ওঠেছে তা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) এর দখলীয় ও মালিকানাধীন জমি দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার চিঠি দিলেও ইজারা দরপত্র বাতিল করা হয়নি।

সিডিএ বার বার জানিয়েছেন, অধিগ্রহণ করা জমিটি রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট জমি। ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এলএ মামলা ও বিএস খতিয়ান মূলে জমিটি সিডিএ'র। কিন্তু সম্প্রতি জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, বাজারের জমিটি খাস করা হয়েছে। সকল নিয়ম মেনেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষে বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

অধিগ্রহণকৃত জমির অপব্যবহার বিষয়ে ভূমি প্রশাসন বলছেন, ভূমি মন্ত্রনালয় কতৃক সংগৃহীত অধিগৃহীত জমির প্রায় এক চতুর্থাংশ অব্যবহৃত অথবা অবৈধ দখল অবস্থায় থাকলে, প্রচলিত আইনে এসব জমি পূনরুদ্ধার করা সম্ভব। উদ্ধারকৃত জমি সরকার খাস জমি হিসেবে সহজেই পূনগ্রহণ (Resume) করতে পারে। খাস জমির তালিকায় পূনঃগৃহীত জমির পরিবর্তন করে সংশোধন করতে পারে।

এতে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের দাবি, নিয়ম মেনে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের পুরাতন ব্রিজঘাট সন্ধ্যা বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। এমনকি টোল আদায়ে (রাজস্ব) নির্ধারিত তালিকা এডিসি রাজস্ব থেকে অনুমোদন নিয়ে ব্যবসায়িদের সুবিধার্থে টাঙানো হবে। কিন্তু এর আগেই গত দুদিন ধরে ইজারা আদায়ের অভিযোগ বাজারের ব্যবসায়িদের।

তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত টোল ছাড়াও কয়েক গুণ বেশি ইজারা আদায় করায় বাজারে সাধারণ কৃষক ও লোকজন কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। অতিরিক্ত খাজনা দিতে গিয়ে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেও ব্যবসায়িরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমনকি প্রভাবশালী ইজারাদার কারও কোনো কথা না শুনে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে চলেছেন।

যদিও হাট বাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালে স্পষ্ট লিখা রয়েছে, উপজেলার প্রতিটি হাট বাজার ভৌগলিক সীমার মধ্যে সকল হাট বাজার ইজারা প্রদানের এখতিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। তাতে ইজারা দলিল চুক্তি সম্পাদন করবেন। বিভিন্ন দ্রব্যের উপর তোলা আদায়ের রেট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কতৃক অনুমোদন করে রেট এর তালিকা বাজারের বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণের জন্য টাঙানো হবে। হাট বাজারের আয়ের ২৫ ভাগ অর্থ বাজার সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হবে।

কোন কারণে হাট বাজার ভেঙে দিতে হলে জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হয়। সকল হাট বাজারের মালিকানা একক ভাবে সরকার। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হাট বাজারের মালিক থাকতে পারেন না।

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভিড়ে বাজারটি জমজমাট। দোকানের বাহিরে কমলা আপেল ব্যবসায়ি জসিম উদ্দিন বলেন, এখন থেকে দৈনিক ১০০ টাকা ইজারা দিতে হয়। মাসে ৩ হাজার টাকা ইজারাদারকে দিতে হবে। যার প্রভাব পড়বে সাধারণ ক্রেতাদের উপর।

এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসন কিংবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কর্মকর্তার স্বাক্ষর বিহীন একটি দৈনিক টোলের মূল্য তালিকা ফেসবুক জুড়ে ভাইরাল হয়েছে। তাতে লিখা রয়েছে-মাংসের প্রতি দোকান দৈনিক ৫০০ টাকা, মাছ বিক্রেতা ৩০০ টাকা, খুচরা মাছ বিক্রেতা ১৫ টাকা, মাছ কাটা ২০০ টাকা, মুরগির দোকান-সবজি দোকান ও পান বিক্রেতা দৈনিক ১৫০ টাকা, প্যাকেটের দোকান-ফলমূল-চায়ের দোকান ও কাপড় এবং মুদি দোকান ১০০ টাকা, মসল্লা দোকান ১৫০ টাকা। যা নিয়মের বাহিরে অত্যধিক টোল নির্ধারণ বলে ব্যবসায়িদের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে ইজারাদাতা সাজ্জাদ হোসেন সাজিদ বলেন, ‘দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে নিয়ম মেনে ব্রিজঘাট বাজারটি ইজারা পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে। সকল নিয়ম মেনেই খাস কালেকশন করা হচ্ছে।'

পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইজারাদাতা বাজারে কোন টোল রেট টাঙালেন না, সীমানা নির্ধারণ করলেন না, সাদা কাগজে একটি টোলের মূল্য তালিকা দেখিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইজারা টোল আদায় করছেন।’

সিডিএ এস্টেট অফিসার মোঃ আলমগীর খান বলেন, ‘ব্রিজঘাট বাজারের জমি চউকের অধিগ্রহণকৃত। এ জমি উপজেলা ইজারা দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এর সদ্য বদলি হওয়া সচিব অমল গুহ জানিয়েছেন, ‘বাজারের জায়গাটি চউক এর মালিকানাধীন, উপজেলা প্রশাসনের নয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, 'সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করলে ইজারা বাতিল করা হবে। প্রতিটি বাজারে সরকার নির্ধারিত ইজারা তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে দেওয়া হবে না। বিধি সম্মত উপায়ে বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। কোন অনিয়মে তা করা হয়নি।'

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, 'বাজারটি সরকারি নিয়ম মেনেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাজারের জায়গাটি সিডিএর নেই। ওটা রি-জুম করে খাস করা হয়েছে। তারপর সকল বিধি বিধান মেনে ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছিলো তা ব্যবসায়িদের আপত্তির প্রেক্ষিতে পরে আশেপাশের বাজার গুলোর সাথে সমন্বয় করে পূনরায় টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।'

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test