E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীতে ডিজিটাল পাল্লায় ‘ডিজিটাল চুরি’

২০২৩ এপ্রিল ২৮ ১৬:৪৮:৫৮
কর্ণফুলীতে ডিজিটাল পাল্লায় ‘ডিজিটাল চুরি’

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার সবকটি বাজারে ডিজিটাল ওজন স্কেলের ফাঁদে ঠকছেন ক্রেতারা। চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাট মাংসের দোকান, সবজির দোকান ও মাছের দোকানের প্রতিটি স্কেলে কেজি প্রতি ৩০-৫০-১৫০ গ্রাম ওজনে কম। বিশেষ করে মাছ, মুরগি, মাংস ও ফলের দোকানগুলোতেই চলছে ঠকানোর কারবার। শুধু কী চরপাথরঘাটা বাজার, শিকলবাহার মাষ্টার হাট, চরলক্ষ্যার বোর্ড বাজার, মইজ্জ্যারটেক মোড়, ফকিরনিরহাট ও জুলধা পাইপের ঘোড়া বাজারেও চলছে একই সমস্যা।

এসব বাজার থেকে পণ্য ক্রয়ের পর বিশ্বস্ত কোনো দোকানে বাটখারায় তা পুনরায় ওজন করার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করলেও বিক্রেতাদের কাছে অসহায় ক্রেতারা। কারণ তারা সকলেই দলবদ্ধ সিন্ডিকেট। আর বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল স্কেলে চুরির মাধ্যমে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চরপাথরঘাটার গরু ও মহিষের মাংস বিক্রির ক্ষেত্রেও ডিজিটাল চুরি। ওজন করার পর বিনে পয়সায় মাংস কুটে দিচ্ছে বিক্রেতারা। এ সুবাদে পঁচা-বাসী মাংসও মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলে, ডিজিটাল স্কেলে ওজনে চলছে কৌশলী কারচুপি। কিছু দিন আগে উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরীর অভিযানে ব্রিজঘাট মাংস বিক্রেতা শফি সওদাগরের দোকানে ধরা পড়ে ওজনে কারচুপি। প্রতি কেজিতে এই দোকানদার ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম কম দেন। ৫ মণ ওজনের একটি গরু বিক্রি করলে ওজনে ৬ কেজি কম। ৮৫০ টাকা কেজি হলে এই ফাঁকে ৫ হাজার ১০০ টাকা বাড়তি লাভ।

এ ছাড়াও পুরাতন ব্রিজঘাট ঘাটের মাথা ও কাঁচা তরকারি সংলগ্ন মাছের বাজারেও একই অবস্থা। ছেনোয়ারা নামে এক নারী মাছ কিনে তা পাশের মুদির দোকানে যাচাই করলে তাতে ১৫০ গ্রাম ওজনে কম। যা দেখে উপস্থিত অনেকেই কারচুপির কথা বলেন। নিরুপায় ক্রেতারা ডিজিটাল চুরি বলে ক্ষোভ ঝরাতে থাকেন।

ওদিকে, দিন দিন বাড়ছে ডিজিটাল ওজন স্কেল, কমছে বাটখারা। ক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে ডিজিটাল স্কেল। তবে এ ধরনের স্কেলে বৈদ্যুতিক চার্জ কমে গেলে কিংবা চার্জার ডিস্টার্ব করলে সঠিক ওজন ও মোট মূল্যে হেরফের হয়ে থাকে বলে অনেকেই জানান।

কর্ণফুলীতে বাজারের সব বিক্রেতার ডিজিটাল স্কেলে একই মাপ। এর বাইরে নেই কোন উপায়। মাছের দোকান, মুরগির দোকান, তরকারির দোকান, ফলের দোকানের মতো ভাসমান দোকানগুলোতে সঠিক ওজন যাচাই করার সুযোগ নেই। ফলে এসব দোকানীরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। ডিজিটাল স্কেলে কম দেওয়ার পদ্ধতি কি জানতে চাইলে রহিম নামে এক ক্রেতা জানান, কেন স্কেলের ভেতরে ওজনের স্প্রিংয়ের সাথে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের কোনো চুম্বক বা লোহা লাগিয়ে দিলে তো হয়।

চট্টগ্রাম বিএসটিআই’র পরিদর্শক (মেট্রোলজি) মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জানান, ‘বছরে একবার ওজন যন্ত্র বা বাটখারা বিএসটিআইয়ের কার্যালয়ে এনে কিংবা বিএসটিআইয়ের বাজার পরিদর্শনের সময় পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ডিজিটাল স্কেলে যাতে কোনো ধরনের টেম্পারিংয়ের সুযোগ না থাকে, নিম্নমানের ডিজিটাল স্কেল তৈরি বা আমদানি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে।

এ ব্যাপারে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ওজনে কারচুপি করা মারাত্মক অপরাধ। আগে কম ওজনের বাটখারা চোরাই বাজার থেকে কিনে ওজনে ঠকানো হতো। এখন ডিজিটাল স্কেলেও কারচুপি করছে ব্যবসায়ীরা। এটা ক্রেতাদের বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত। এ ব্যাপারে শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test