E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধামইরহাটে চারটি খাল সংস্কার না করায় কৃষকের কোন উপকারে আসছে না

২০২৩ মে ০৪ ১৭:৩৮:২৯
ধামইরহাটে চারটি খাল সংস্কার না করায় কৃষকের কোন উপকারে আসছে না

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাটে চারটি খাল সংস্কার না করায় কৃষকের কোন উপকারে আসছে না। খালগুলো আংশিক খনন করা হলেও বাকী অংশ খনন না করায় কৃষকরা কাঙ্খিত সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বর্ষার আগে চারটি খালের অখননকৃত অংশ খননের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার শত শত কৃষক।

জানা গেছে, উপজেলার চারটি খাল কে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতায় এবং এলজিইডির মাধ্যমে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃ খনন করা হয়। খালগুলো হলো টুটিকাটা খাল, মঙ্গল খাল, ঘুকসি খাল এবং লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। খালের দুই পাড়ের শত শত কৃষক এসব সমবায় সমিতির সদস্য। খালগুলো ১৫-২০ বছর পূর্বে খনন করা হয়। খননের কয়েক বছরের মধ্যে খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ করে রবি মৌসুমে সেই পানি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খালের দুই পাড়ের কৃষকরা কাঙ্খিত সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।

ধামইরহাট মূলত বরেন্দ্র অঞ্চল। বরেন্দ্র অঞ্চলে খাল বিলের সংখ্যা কম। তার উপরোন্ত দির্ঘদিন ধরে এসব খালে পলিজমে ভরাট হওয়ার কারণে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব খাল পুনঃ খনন করলে সারা বছর খালে পানি সংরক্ষিত থাকতো। ফলে কৃষকরা সুবিধা মতো ফসলে সেচ দিতে পারতো। এছাড়া এসব খালে মাছ চাষ ও হাঁস পালন করা সম্ভব। চারটি খালের সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৫শ’ ৭৬ জন।

মঙ্গলখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক মো.নুরুজ্জামান হোসেন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মঙ্গল খালের পৌণে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১ কেটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার পুনঃ খনন করা হয়। খালের বাকী অংশ খনন না করায় কৃষকরা কাঙ্খিত সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।

টুটিকাটা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো.মোতারফ হোসেন মাস্টার বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে টুটিকাটা খালের মোট সাড়ে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ হাজার ১শ’ মিটার খালটি পুনঃ খনন করা হয়। পুনঃ খননকৃত অংশের কৃষকরা সুফল পেতে শুরু করেছে। কিন্তু খালের বাকী অংশ খনন না করায় ওই এলাকায় কৃষকরা পানির অভাবে চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন।

লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খাল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরের লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খালের মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে চার কিলোমিটার ২শ’ মিটার খাল পুনঃ খনন করা হয়।

টুটিকাটা খালের পশ্চিম পাড়ের শালুককুড়ি গ্রামের সুবিধাভোগি আমেনা বেগম বলেন, দীর্ঘদিনে খালে পলি জমায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে খাল থেকে পানি উপচে ফসল ডুবে যায়। এছাড়া বন্যায় বাড়িঘরও তলিয়ে যায়। খাল পুনঃ খনন করায় এ সমস্যা আর থাকবে ন। শুস্ক মওসুমে খালের পানি সংরক্ষণ করে এ পানিতে তিনি হাঁসপালনের করেছিলেন। কিন্ত দির্ঘদিন খাল পুনঃ খনন না করায় পানির অভাবে তার হাঁস পালন বন্ধ হয়ে গেছে।

মঙ্গল খালের আওতাধীন উত্তর চকযদু গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, খালের পানি ব্যবহার করে বোরো ধানের চারা (বিছন) রোপন করা হয়েছিল। তাছাড়া এ পানি ব্যবহার করে রবি মৌসুমে আলো, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি উৎপাদন করা হতো। স্লুইস গেট বন্ধ করে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করে রাখার ফলে ১২ মাস খালে পানি থাকতো। কিন্তু খালের কিছু অংশ পলিজমে ভরাট হওয়ায় কৃষকরা আর আগের মতো এ খাল ব্যবহার করতে পারছে না।

এলজিইডির নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষির প্রসার ঘটিয়ে, মৎস্যচাষ ও হাঁস পালনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি প্রধান লক্ষ্য। এতে করে সমিতির সদস্যের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এ উদ্দেশ্যে খালগুলো খনন করা হয়েছিল। পলিজমার কারণে অনেক খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে অনেক খাল পুনঃ খনন করা হয়েছে। যেসব খাল ভরাট হয়ে গেছে সেই খালগুলো পুনঃ খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব খালের নামে কৃষকদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন রয়েছে। যে সমিতির কার্যক্রম ভালো সেই খাল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃ খনন করা হবে। একবারে হয়তো চারটি খাল পুনঃ খনন করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে গ্রেডিং পয়েন্ট অনুসারে খনন করা হবে।

(বিএস/এসপি/মে ০৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test