E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মৌলভীবাজারে ভাতিজাদের হামলায় গুরুতর আহত চাচার মৃত্যু  

২০২৩ মে ০৬ ১৯:১৬:৫৭
মৌলভীবাজারে ভাতিজাদের হামলায় গুরুতর আহত চাচার মৃত্যু  

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে বাড়ির চলাচলের রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিবেশী ভাতিজাদের এলোপাতাড়ি হামলার ঘটনার ১০ দিন পর অবশেষে হাসপাতাল থেকে ফিরে নিজ বাড়িতেই গুরুতর আহত মসু মিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত মসু মিয়ার স্ত্রী সোনা বেগম (৬৫)ও ছেলে আনছার মিয়াও গুরুতর আহত হয়েছেন।

গত ২৩ এপ্রিল রবিবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুর গ্রামে ঈদের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার আগে এ ঘটনা ঘটলেও এঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মসু মিয়া। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা ৪ মে বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র পেয়ে নিজ বাড়িতে আসেন। উদ্দেশ্য ছিলো ফের চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করাবেন। কিন্তু রাত শেষে হাসপাতালে নেয়ার আগেই শুক্রবার ভোরের দিকে নিজ ঘরে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই দিন বিকেলে হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এবং রাতে জানাযা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারসহ পুরো আকবরপুর গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসীও জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সুষ্টু বিচারের দাবী জানান। শুক্রবার সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে গেলে হৃদয়বিদারক দৃশ্য’র অবতারণা হয়। ঘরের একটি কক্ষের বিছানায় শুয়ে আছেন গুরুতর আহত মসু মিয়ার ছেলে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতের বেশ কিছু চিহ্নও চোখে পড়ে। আরেকটি কক্ষের ফ্লোরে বিছানায় সাদা কাপড় পড়ে ছটপট করতে দেখা যায় নিহতের স্ত্রী সোনা বেগমকে। এসময় তিনি সাংবাদিক দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।

পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঈদের পরদিন দুপুরে মসু মিয়া ও তাঁর পরিবারের সাথে আপন বড় ভাই মৃত মনফর মিয়ার ছেলেদের রাস্তা নিয়ে পূর্বের বিরোধের জেড়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। কথা-কাটাকার্টি হলেও পরে দু পক্ষই ফিরে যার যার ঘরে। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে কিছু বুঝে উঠার আগেই মনফর মিয়ার ছেলে মেহের মিয়া চাচা মসু মিয়ার উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এলোপাতাড়ি হামলা চালান, মুহুর্তেই মসু মিয় লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। বেধরক হামলায় মসু মিয় প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও কর্ণপাত করেননি ভাতিজা মেহের। হামলায় অংশ নেন মেহেরের ভাই সাজ্জাদ মিয়া, শহিদ মিয়া, রাজু মিয়া, মেহের মিয়ার ছেলে শাকির মিয়া, সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে ইজাজুল মিয়া, শহিদ মিয়ার ছেলে জাকির মিয়া, মেহের মিয়ার ছেলে সায়েম মিয়া, মেহের মিয়ার স্ত্রী নুরফা বেগম ও সাজ্জাদ মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম। শুধু চাচাকে আহত করেই ক্ষ্যান্ত হনননি।

পরবর্তীতে ঘরে ঢুকে মসু মিয়ার ছোট ছেলে আনছার মিয়া ও মসু মিয়ার স্ত্রী সোনা বেগমকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। হামলাকারীরা সবাই দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হওয়ায় তাদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি বলেও জানান নিহতের মেয়ে মনোয়ারা বেগম। মুহুর্তেই এ ঘটনার খবর পৌঁছে মৌলভীবাজার সদরের পাগুলিয়ায় স্বামীর বাড়িতে থাকা মসু মিয়ার একমাত্র মেয়ে মনোয়ারা বেগমের কাছে। তিনি ৯৯৯ নাম্বারে আহতদের উদ্ধারে পুলিশি সহায়তা চাইলে পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

নিহতের একমাত্র মেয়ে মনোয়ারা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, সঠিক সময়ে আমার আব্বাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি। সময় মতো হাসপাতালেও নেয়া যায়নি। নিতে পারলে হয়তো তিনি সঠিক চিকিৎসা পেতেন একথা বলে অঝোরে কান্না শুরু করে দেন তিনি। কান্না থামিয়ে তিনি বলেন, এখন তো আর আব্বাকে ফিরে পাবোনা, তবে সুষ্টু বিচারটা যেন দেখে যেতে পারি এটি আমাদের প্রত্যাশা।

প্রতিবেশী সিদ্দেক মিয়া ঘটনার বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান, মূলত রাস্তা নিয়ে তাদের দু পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। ঘটনার দিন দুপুরে মসু মিয়ার ভাতিজা সাজ্জাদ মিয়ার সাথে মসু মিয়ার কথা-কাটাকাটি হলে সন্ধ্যার আগে পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, এটি একটি নারকীয় ঘটনা, কেউ তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।

এদিকে পরিবারের সবাই গুরুতর আহত হওয়ায় ঘটনার প্রায় ৯ দিন পর গত ২ মে নিহতের ছোট ছেলে আনছার মিয়া বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েককজনকে আসামী করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২ তারিখ ২/৫/২৩ ইং। ওই মামলায় শরিফ মিয়া নামে একজন আসামীকে পুলিশ আটক করলেও পরবর্তীতে তিনিসহ অভিযুক্ত অন্যরা জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়।

মামলায় অভিযুক্ত ১০ আসামীর মধ্যে রয়েছেন মৃত মনফর মিয়ার চার ছেলে মেহের মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, শহিদ মিয়া ও রাজু মিয়া। আর অন্য অসামীরা হলেন, মেহের মিয়ার ছেলে শাকির মিয়া, সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে ইজাজুল মিয়া, মেহের মিয়ার ছেলে সায়েম মিয়া, মৃত তোরব মিয়ার ছেলে শফিক মিয়া, মেহের মিয়ার স্ত্রী নুরফা বেগম ও সাজ্জাদ মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হোসেন জানান, এখন ওই ঘটনায় আহত বৃদ্ধার মৃত্যু হওয়ায় নতুন করে ৩০২ ধারায় আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। এখন যেহেতু ওই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে তাই পুলিশ সুষ্টু তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে যাতে বিচার নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা করবে।

(একে/এসপি/মে ০৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test