E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীর ইছানগর

কালো ধোঁয়ায় ধুঁকছে মানুষ, বিপন্ন পরিবেশ

২০২৩ মে ০৭ ১৭:৪৯:০৮
কালো ধোঁয়ায় ধুঁকছে মানুষ, বিপন্ন পরিবেশ

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর ইছানগর গ্রামে গড়ে উঠেছে একাধিক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, কারখানা ও জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড। এসব ভারি প্রতিষ্ঠানের কালো ধোঁয়ায় গ্রামবাসীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে শত শত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ বসবাসের কাছাকাছি লোকালয় ঘেঁষে এসব ফ্যাক্টরী গড়ে ওঠায় পরিবেশের বারোটা বাজিয়েছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ইছানগর গ্রামের এক সময়ের সবুজ প্রকৃতি। মানুষের জনবসতি আজ বিষিয়ে ওঠেছে। সন্ধ্যা হলেই কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। এতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব ফ্যাক্টরীতে দীর্ঘ সময় কালো ধোঁয়া বের হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ইছানগর গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। এতে ফসলি জমিও নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চরপাথরঘাটা ইউনিয়নেরই একটি গ্রাম ইছানগর। এ গ্রামে হতো শুঁটকি শুকানোর ধুম। শুঁটকির জনপ্রিয়তা আঞ্চলিক সীমা ছাড়িয়ে ছিল সারাদেশ। এমনকি ইছানগরের শুঁটকি এক সময় বিদেশেও রফতানি হতো। বসতো শুঁটকির মেলা। কিন্তু সেই সব অতীত এখন। ইছানগর গ্রামের জনবসতিপূর্ণ এলাকা এখন গ্রাস করেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও ফ্যাক্টরী। উন্নয়ন যদিও দরকার কিন্তু নিজেদের বিপন্ন করে এ কেমন উন্নয়ন বলে হা-হুতাশ করেছেন এলাকাবাসী।

এরমধ্যে গড়ে উঠেছে এস আলম অয়েল ট্যাঙ্ক টার্মিনাল লিমিটেড (অয়েল স্টোর), ব্লু বে জেটি ফিশিং স্টোর, দেশ শীপ বিল্ডিং এন্ড ইন্জিনিয়ারিং লিমিটেড, পেনিনসোলা ফিশিং লিমিটেড, দেশ সী ফিশার লিমিটেড, সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্স, এসআরএল কসমস ট্রেওয়েল, ইউএশা ব্যাটারি ফ্যাক্টরী, মাসুদ এগ্রো প্রসেসিং ফুড প্রোডাক্ট লি, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিঃ, পরে মনেহয় প্রিমিয়াম সিমেন্ট, ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড ও মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়েসহ একাধিক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

ইছানগর গ্রামের হাজী শাহ আলম বলেন, ‘এসব কারখানা ও ফ্যাক্টরীর কারণে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অথচ সব প্রতিষ্ঠান নিয়ম মানলে পরিবেশ সম্মত উপায়ে সব ফ্যাক্টরী ও কারখানা চালানো যায়। কিন্তু তারা ধোঁয়া রোধক মেশিন ব্যবহার করছেন না। ফলে, বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছেন। এসব দেখার দায়িত্ব পরিবেশ ও বেলা’র। না হয় এলাকাবাসীকে বাঁচার তাগিদে হাইকোর্টে রিট করা দরকার হবে।’

ইছানগর ৭ নং ওয়ার্ডের রফিক ও ইসহাক বলেন, ‘সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর ধোঁয়ার কারণে ঘরের বাইরে শিশুদের নিয়ে যাওয়া যায় না।’ একই এলাকার হাজী বাবুল হক বলেন, ‘সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর ধোঁয়া ও শব্দদূষণে কি রকম যে যন্ত্রণা ও কষ্টে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আপনারাও এখানে না আসলে বুঝবেন না। আসলে কি ঘটে এখানে। এসব ফ্যাক্টরীগুলো কেন যে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত হয়েছে। সেটা জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে অনুমোদন দিয়েছেন তাও বোধগম্য নয়।’

লোকালয়ে এসব কারখানা স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ম্যানেজার, এডমিন ও ব্যবস্থাপকরা বলেন, ‘এসব আমাদের বলে কি হবে। আমরা তো চাকরি করি, মালিকেরা ব্যবসা করে। এসব অভিযোগ যে মিথ্যা সেটাও বলব না , তবে নতুন মেশিন বসানো হলে আশাকরি ধোঁয়া কমবে।’

ইবনে সিনা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তৈয়ব আলী বলেন, ‘নির্গত ধোঁয়ায় আশপাশের মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও নানা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘উচ্চতা বজায় না রাখলে কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ফসলি জমি ও নদীদূষণ করে কোনো প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে না। আমাদের পক্ষ থেকে ওই কারখানার মালিককে সতর্ক করা হবে। তারপরও নির্দেশনা না মানলে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, ‘স্থানীয়রা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলে বিবেচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(জেজে/এসপি/মে ০৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test