E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুয়াকাটায় আকস্মিক গুলি বর্ষণে আতঙ্কিত পর্যটক ও এলাকাবাসী

২০১৪ অক্টোবর ২৬ ১৫:৫৯:১০
কুয়াকাটায় আকস্মিক গুলি বর্ষণে আতঙ্কিত পর্যটক ও এলাকাবাসী

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটার লেম্ফুরচর-খাজুরা বনাঞ্চল সংলগ্ন সৈকতে বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার ১৫/১৬ কর্মীরা প্রায় ঘন্টাব্যাপী পিস্তল ও শর্টগানের শতশত রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়ে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা শতশত পর্যটক ও এলাকাবাসী।

শনিবার রাত ১০টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত বিরামহীন গুলির শব্দে হাজার হাজার মানুষ ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসে। ডাকাত আক্রমণ করেছে এমন আতংকে মানুষজন রাস্তায় লাঠি-সোঠা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আতংকিত পর্যটকরা কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোর দরজা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নেয়।

পরবর্তীতে স্থানীয়দের জড়ো হতে দেখে ভয়ে ওই মানবাধিকার কর্মীরা মোটরসাইকেল যোগে এলাকা ত্যাগ করে। রাতেই কুয়াকাটা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন রবিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত দেড় ডজন গুলির খোসা ও দু’টি বিদেশী মদের খালি বোতল উদ্ধার করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলনে আসা কর্মীদের সঙ্গে থাকা লাইসেন্সধারী দু’টি পিস্তল ও একটি শর্টগান দিয়ে ওই এলাকায় ফাঁকাগুলি ছোড়া হয়। পর্যটন হলিডে হোমস’র কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে এরা অবস্থান করে।

রাতেই পুলিশ ২০১ নম্বর কক্ষে অবস্থানকরা মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেয়া কামরুজ্জামান মিলন, নুরুদ্দিন ইমরান ও আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে লাইসেন্সকৃত দু’টি পিস্তল ও একটি শর্টগান জব্ধ করে। অস্ত্র জব্ধকালে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার ওই মোটেলে অবস্থান করছিলেন। তবে রোববার দুপুরে আটককৃত ওই অস্ত্র তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়।

কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় মন্ডল জানান, তাদের কাছে লাইসেন্সকৃত একটি শর্টগান ও দু’টি পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করা হয়েছে। ফলে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ’র সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলনের নামে মূলতঃ জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীর সমাবেশে পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য জাপা (এ) সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি লুৎফুন্নেছা আফরোজ।

দিনভর এ বিষয়টি স্থানীয় লোকজনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রশ্ন ছিল প্রকাশ্যে দীর্ঘ ৭ বছর বিএনপি-জামায়াত জোট কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় কোন কর্মকান্ড করতে পারেনি। অথচ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ব্যানারে এরা সবাই সমবেত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

তাদের অভিযোগ কমিশনের কুয়াকাটা শাখার দায়িত্বে রয়েছে এক শীর্ষ জামায়াত নেতা। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়িয়ে এভাবে মানবাধিকার কর্মীর নাম করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে সমাবেশকে নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। কেনইবা এ কর্মকান্ড সম্পর্কে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে নি, তাও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা একাধিক পর্যটক জানান, কোন পর্যটন কেন্দ্র এলাকায় এভাবে গুলিবর্ষন হলে এখানে আর পর্যটকরা আসবে না। কারন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আসে বিনোদনের জন্য। কিন্তু এখানে এসে তাদের হোটেলের রুম বন্ধ করে নির্ঘূম রাত কাটাতে হয়েছে।

খাজুরা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান বেপারী জানান, শনিবার রাতে প্রায় ঘন্টাব্যাপী গুলির শব্দে তারা জলদস্যু কিংবা সন্ত্রাসীচক্র জেলেপল্লীতে হানা দিয়েছে বলে ভীত হয়ে পড়েন। একই অভিযোগ আলী হোসেন জমাদ্দার, জুয়েল জমাদ্দার, মজিদ মোল্লাসহ অনেকে। খাজুরার এক দোকানি জানান, এদের অস্ত্র নিয়ে তান্ডব চালানোর দৃশ্য তিনি আগে কখনও দেখেননি।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানান, সবকিছুই আইন মাফিক করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিডি করা হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় কমিশনের কোন দায় নেই। কোন ব্যক্তি জড়িত থাকলেও এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। মানবাধিকার কমিশন এর দায় নিবে না।

কুয়াকাটার স্থানীয়রা জানান, একেতো জামায়াত ঘরানার সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের ডাকা হরতালের আগের রাতের এ ঘটনায় মানুষ বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এছাড়া ইতোপুর্বে কুয়াকাটা যুবলীগ সভাপতিসহ কয়েক কাউন্সিলরকে উড়ো চিঠিতে বোমা ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব কারনে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সুন্দরবন সংলগ্ন ফাতড়ার বনাঞ্চলসহ সাগর মোহনা এলাকায় বড় ধরনের কোন জলদস্যু চক্র অপহরণের জন্য কিনারে হানা দিতে পারে এমন শঙ্কায় জেলে জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

(এমকেআর/এএস/অক্টোবর ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test