E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালথায় সাতমাস ধরে বীর নিবাসের নির্মাণ কাজে ধীরগতি 

২০২৩ মে ১৭ ১৭:৫৮:০০
সালথায় সাতমাস ধরে বীর নিবাসের নির্মাণ কাজে ধীরগতি 

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : ফরিদপুরের সালথায় গত সাত মাসধরে বীর নিবাসের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সালথার মোট ১১টি বীর নিবাসের মধ্যে ৬ টিরই অর্ধেক কাজ করার পর বাকি কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ৯ জুলাই এসব বীর নিবাসের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বীর নিবাসের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এতে উপজেলার উপকারভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার চরম ভোগান্তীতে পড়েছেন।    

জানা গেছে, সালথায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন ১১টি বাড়ি (বীর নিবাস) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৬৩৪ বর্গফিট প্রতিটি বীর নিবাসে দুটি বেড, দুটি টয়লেট, ডাইনিং ও কিচেন রুম তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি বীর নিবাসের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। উক্ত বীর নিবাসগুলোর দরপত্র আহ্বান করে কাজগুলো পান ফরিদপুরের মাসুম ফার্নিচার নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ১১টি বীর নিবাসের কাজ ২০২৩ সালের ৯ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করা কথা থাকলে এরমধ্যে ৬টির কাজ এখনো শেষ হয়নি। ওই ৬টি বীর নিবাসের অর্ধেক কাজ করে গত ৬-৭ মাস ধরে বাকি কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণসামগ্রী ব্যবহার হয়েছে। বেশিরভাগ বীর নিবাসের লিনটেল ও দেওয়াল পর্যন্ত ইট দিয়ে গেঁথে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতে দেওয়ালে ধরছে নোনা ও ইট ভেঙ্গে পড়ছে। কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নতুন ঘরের আশায় পুরনো বসতঘর ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁরা সময় মতো নতুন ঘরে উঠতে না পেরে পুরনো ঘর পুনরায় ঠিক করে বসবাস শুরু করেছেন।

উপজেলার ভাওয়াল ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এ জামান বুধবার বিকালে এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরকার আমাকে একটা বীর নিবাস বরাদ্দ দিয়েছে। ৯ মাস আগে আমার নিজের বসত-বিটায় ওই বীর নিবাসের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ৬ মাস ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারেরও কোন খোঁজখবর পাচ্ছি না। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। ইট খুলে খুলে পড়ার কায়দা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন নিয়ে বিপাকে আছি। তিনি বলেন, এই ঠিকাদারকে পাল্টিয়ে নতুন ঠিকাদার দিয়ে আমাদের বীর নিবাসগুলোর নির্মাণকাজ তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার দাবী জানাই।

কে এ জামানের মতো উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাদাত হোসেন বাদশা, যদুনন্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোসলেম শেখ, মাঝারদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস মিয়া, কুমারপট্টি গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছলেমান মাতুব্বর, যদুনন্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমানের নামে বরাদ্দকৃত বীর নিবাসের একই অবস্থা।

মাঝারদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বীর নিবাসের ঘর নির্মান করা হচ্ছে। যার ফলে পলেস্তার খুলে পড়তেছে। ঘরের সমস্ত খরচ সরকার বহন করার কথা থাকলেও মিস্ত্রিদের খাবারের খরচ আমাদের দেওয়া লাগছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুম ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বীর নিবাসের ঘর নির্মাণ কাজে কোন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না। সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমাদের কথা হয়েছে, খুব শিঘ্রই আমরা বীর নিবাসের কাজ শুরু করবো।

সালথা উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন কয়েকটি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ আবার শুরু হয়েছে। এই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে কাজগুলো শেষ করতে না পারলে টেন্ডার বাতিল করা হবে। পরে আমরা নিজেরাই কাজ সম্পন্ন করবো। আর নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয় খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এএন/এসপি/মে ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test