E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীতে বেদখল ও বেহাত হচ্ছে অধিগ্রহণের জমি, পিছনে কারা?

২০২৩ মে ১৯ ১৭:১১:৫০
কর্ণফুলীতে বেদখল ও বেহাত হচ্ছে অধিগ্রহণের জমি, পিছনে কারা?

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সরকারি কাজের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কর্ণফুলী আওতাধীন নতুনব্রিজ থেকে ভেল্লাপাড়া পাড়া ব্রিজ ও আনোয়ারার চাতরী চৌমুনীর আগ পর্যন্ত রোডস এন্ড হাইওয়ে জমি অধিগ্রহণ করেছেন সড়কের জন্য। কিন্তু সরকারি এ সংস্থাটি জমি অধিগ্রহণ করলেও মূল জমির মালিক থেকে কেনা সেই জমি তাঁদের নামে নামজারি খতিয়ান সৃজন করেননি। ফলে উপজেলা ভূমি অফিস ও সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসে কাগজে কলমে এখনো মূল মালিকের নাম রয়ে গেছে।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় ভূমিদস্যু ও সিন্ডিকেট অধিগ্রহণ করা সেই জমি পুনরায় খতিয়ান করে বেচাকেনা করছেন। এমনকি কেউ কেউ কলাকৌশলে নামজারি খতিয়ান সৃজন করে ব্যাংকে দিচ্ছেন। পরে অতি কৌশলে এরা ক্রেতার নামে নামজারিও করে দিচ্ছেন। এভাবে একরের পর একর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জমি বেহাত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বেহাত হওয়ার পেছনে নাম উঠেছে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো ও উপজেলা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দালালচক্রের যোগসাজস।

সম্প্রতি, কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী’র কার্যালয়ে এ রকম একাধিক নামজারির আবেদন ফাইল জমা পড়ে। পরে তিনি এসব ফাইল সন্দেহজনক হওয়াতে জেলা ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস ও জেলা রাজস্ব শাখা হতে ৬টি অধিগ্রহণ গেজেট উত্তোলন করেন। এসব গেজেট নিরীক্ষা যাচাই বাছাই করে দেখা যায় আবেদিত জমির অধিকাংশই রোডস এন্ড হাইওয়ের (অধিগ্রহণ করা)। পরে এসব নামজারি আবেদনগুলো তিনি খারিজ করে দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইতোমধ্যে কর্ণফুলীতে জমি অধিগ্রহণ করেছেন ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি), সিএমপি কর্ণফুলী থানা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থা। কিন্তু স্ব স্ব সংস্থ্যা গুলো জমি অধিগ্রহণ করে তাঁদের নিজস্ব নামে খতিয়ান সৃজন করলেও, সেক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

তাঁরা তাঁদের জমিগুলো এখনো খতিয়ান সৃজন করেননি। এমনকি কর্ণফুলীতে প্রধান সড়কের দুপাশের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গাগুলোও বেহাত হচ্ছে। প্রভাবশালীরা এসব দখল করে নিচ্ছেন। একের পর এক জমিতে দোকান মার্কেট করছেন। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনিয়মের কথা শোনা যাচ্ছে। তহশিলদার উজ্জ্বল কান্তি দাশ এসব অধিগ্রহণ করা জমিরও নানা প্রস্তাব ও প্রতিবেদন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছেন।

ওদিকে, ভূমি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল অনুযায়ী অধিগ্রহণের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে নামজারি করতে হয়। এক্ষেত্রে কর্ণফুলীর বেলায়ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে ওই সমস্ত জমির নামজারি করার কথা ছিল। কিন্তু যথাসময়ে সে কাজটি করা হয়নি। আর গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে প্রত্যাশী সংস্থার (যে সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলো) নামে নামজারি করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানানোর বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোডস এন্ড হাইওয়ে কোন নামজারিও করেননি, আবার বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়নি। ফলে হিমশিম খাচ্ছেন এসিল্যান্ড অফিস। যদিও কর্ণফুলী উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর বিচক্ষণতায় এ ধরনের অনেক ফাইল ধরা পড়েছে। তবে পূর্বের এসিল্যান্ড থাকা অবস্থায় এ ধরনের অধিগ্রহণ করা কত জমি নামজারি হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

কর্ণফুলী উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধিরা জানান, ‘অধিগ্রহণের প্রত্যাশী সংস্থার নামে নামজারি না করায় জমির আগের মালিক এলাকায় প্রচার করতে থাকেন- ওই সমস্ত জমির মালিক তিনি। তার নামেই নামজারি করা আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি না হওয়ায় এলাকার মানুষও ধরে নেয় ওই জমির মালিক সরকার নয়, ভোগদখলকারী নিজেই। এরপর তিনি অন্য ব্যক্তির কাছে ওই জমি বিক্রি করেন। এবার এই ক্রেতার নামে নামজারি করা হয়। এভাবে ওই জমি বিক্রি ও নামজারি হয়। অনেকেই ব্যাংকে দিয়ে কোটি কোটি টাকা লোন নিচ্ছেন।’

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি করা হলে ওই জমি কোনো ব্যক্তির নামে নামজারি করা সম্ভব হতো না। নামজারি না হওয়ায় এ ধরনের অধিগ্রহণ করা জমি বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে চলে যায়। পরে তার নামে নামজারিও করা হয়। আগামী ২৬ তারিখ কর্ণফুলীতে আমি যোগদানের এক বছর পূর্ণ হবে। আমার এই সময়ে এ ধরনের অনেক ফাইল জমা পড়েছে। কিন্তু একটাও অনুমোদন করা হয়নি। সব খারিজ করা হয়েছে। বেশির ভাগ নিরীহ মানুষের নাম দিয়ে এসব আবেদন করা। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে অনেক প্রভাবশালীরাও। এমনকি উপজেলা ভূমি অফিসের বিভিন্ন নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। পরে আমি এ ধরনের অধিগ্রহণকৃত জমি বেহাত যাতে নাহয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি এবং উপজেলা ভূমি অফিসে বিধি মতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলাতে রাস্তার জন্য অধিগ্রহণ করা জমিগুলো বেহাত হচ্ছে তা আমি জানতাম না। এমনকি রোডস এন্ড হাইওয়ের নামে যে এখনো নামজারি করা হয়নি। তাও আমি জানতাম না। এখন জানলাম। বিষয়টি অতি জরুরী। তাই এস্টেট শাখাকে বলা হবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি এসব জমি ব্যক্তিমালিকানা থেকে উদ্ধার ও তাদের নামে করা নামজারি বাতিল করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে নামজারি করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

(জেজে/এসপি/মে ১৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test