E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কোটচাঁদপুরে সুদের কারবারির মামলায় বাড়ি ছাড়া কয়েকটি পরিবার

২০২৩ মে ২৪ ১৮:৩৮:৪০
কোটচাঁদপুরে সুদের কারবারির মামলায় বাড়ি ছাড়া কয়েকটি পরিবার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রভাবশালী এক সুদ কারবারির মামলার বাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। এসকল হয়রানীমুলক মামলা ও এলাকায় বসবাসের জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অভাবগ্রস্থ মানুষের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পের বিনিময়ে চড়া সুদে টাকা দিয়ে আসছে মোঃ বাকেরুজ্জমান। তিনি প্রতি লাখে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ নেয়। এতে কেউ অপারগতা স্বীকার করলে তার নামে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। অনেক সময় আবার নিজেস্ব বাহিনী দিয়ে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকে। এমন ঘটনায় বাকেরুজ্জামানের ভয়ে বাড়ি ছাড়া রয়েছে পৌরসভা কাজীপাড়া এলাকার সাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছাঃ বিউটি আক্তার, আদর্শপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন, একই এলাকার আবুল কাসেম ও আবুল খায়ের, দুর্গাপুর এলাকার সামাউল বিশ্বাস,ভোমরাডাঙ্গা বায়েজিদ খান ও মসিউর ড্রাইভারসহ অনেকে।

ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান জানান, ২০১৩ সালে ব্যবসায়িক কাজের জন্য আমার স্ত্রী মোছাঃ বিউটি আক্তার স্বাক্ষরিত সাদা ষ্ট্যাম্প ও ৩টি চেকের পাতা জমা রেখে সুদ কারবারি বাকেরুজ্জামানের কাছ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহন করে। এ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে ৩১ হাজার টাকা করে সুদ প্রদান করে আসছিলাম। এভাবে ৬ বছরে তাকে সুদের টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা পরিশোধ করি। টাকা পরিশোধ করার পরও বাকেরুজ্জামান গচ্ছিত ষ্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না দিয়ে আমার কাছে উল্টো আরো টাকা দাবী করে। এই টাকা দিতে আমি অপারগতা স্বীকার করলে আদালতে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর নামে দুইটি চেক ডিজনার মামলা করে বাকেরুজ্জামান।

হয়রানীমুলক মামলায় জামিনে আমরা মুক্তি পেলেও সুদ কারবারি এলাকার প্রভাবশালীদের দিয়ে আমাদের উপর হুমকি-ধমকি প্রদান করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। খবর পেয়ে বাবার দাফনের জন্য বাড়িতে আসি। পরের দিন সন্ধ্যায় বাকেরুজ্জামান তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমার বাড়ীতে এসে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবী করে ও এক পর্যায়ে বলে টাকা না দিলে আমাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন জখম করবে। তখন আমাদের আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তারা চলে যায়। পরে ওই রাতেই আমরা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি।

আরেক ভুক্তভোগী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মোটরসাইকেলের শো-রুম ছিল। আমি ২০১২ সালে আমার ব্যবসায়িক কাজের জন্য বাকেরুজ্জামানের কাছ থেকে নগদ টাকা প্রয়োজন হলে ব্ল্যাঙ্ক চেকের পাতা জমা রেখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিই। প্রতি মাসে লাখ প্রতি ৮ হাজার টাকা সুদ দিই তাকে। টাকা নেওয়ার পর থেকে ৫ বছরে আমি সুদসহ মোট ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। টাকা পরিশোধ করার পরও বাকেরুজ্জামান আমার গচ্ছিত চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো আরো টাকা দাবী করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আমার নামে চেক ডিজনার মামলা দেয়। আমি জামিন নেওয়ার পর থেকে বাকেরুজ্জামান তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাকে প্রাাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসি।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে বাকেরুজ্জামান জানান,আমি কোন সুদ কারবারি করি না । ব্যবসায়িক কাজের জন্য অনেকে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে। এখন টাকা ফেরৎ দিতে না পেরে তারা নানা রকম তালবাহানা করছে। আমি এখন এমপির শ্যালক কারুজ্জামান সাচ্চুর সাথে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত রয়েছি। ফ্রি হয়ে পরে বিস্তারিত সাক্ষাতে কথা বলবো।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মঈন উদ্দিন জানান,বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ কোন লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(একে/এসপি/মে ২৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test