E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এ জয় অনাকাংঙ্খীত নয়, ফরমালিন মুক্ত 

২০২৩ মে ২৭ ১৬:০৮:৩৫
এ জয় অনাকাংঙ্খীত নয়, ফরমালিন মুক্ত 

মোঃ জসিম উদ্দিন জুয়েল, টঙ্গী : টঙ্গীর কোনো একটি কেন্দ্রেও টেবিল ঘড়ি মার্কার একজন এজেন্ট ছিলো না। তখন ভরদুপুর কেন্দ্রের কিছুটা দূরে অনেক প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটারস্লিপ ও নানা তথ্য দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করছিলেন। প্রার্থী  সমর্থকদের দৌড়ঝাপ ছিলো চোখে পড়ার মতো কিন্তু মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কর্মী সমর্থক কেন্দ্রের আশেপাশেও দৃশ্যমান নেই। প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিচ্ছে সবাই। ধীর গতিতে চলছিলো ভোট গ্রহণ কিন্তু তরুণ-যুবক ভোটারদের দ্রুত ভোট দিতে কোনো অসুবিধা হইনি। প্রতিদন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সংঘবদ্ধ কার্যক্রম না থাকায় এবং ঘরের মধ্যেই নিরব প্রতিযোগিতার লড়াইয়ের কারনে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিনের এমনই চিত্র ছিলো। 

এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদন্দ্বী ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খান এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এড. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে জায়েদা খাতুন একাধিকবার হামলা-বাঁধার সম্মুখীন হন। অপরদিকে নৌকার প্রার্থী সরকারী দলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতাসহ সকল কর্মী-সমর্থক নিয়ে বিনা বাঁধায় পুরো সিটি চষে বেড়ান। এমনকি নির্বাচনী প্রচারে তিনি ঢাকাই সিনেমার নায়ক নাইকাদেরও নিয়ে আসেন। অবশেষে সকল প্রচেষ্ঠা সত্বেও জয় নিয়ে ঘরে ফেরা হলো না নৌকা প্রার্থী আজমত উল্লা খানের। গাজীপুরের সচেতন ভোটারদের মধ্যে সিদ্ধান্ত ছিলো শুরুতেই। এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় ছিলো তরুণ ও ভাসমান ভোটারদের হাতে। তারা তাদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় নগর বান্ধব প্রানবন্ত নের্তৃত্ব বেছে নিতে মরিয়া ছিলো। পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। অন্যান্য প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত এর প্রমান।

“না এজেন্ট, না মিছিল, না হুংকার, কেবল নিরব প্রচারণা এবং অটল সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মানুষ এনেছে এক ফরমালিন মুক্ত বিজয়”

মানুষ জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার প্রধানতম আসামী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের পুত্র সরকার শাহনুর রনিকে প্রত্যাখান করেছে। গাজীপুরের উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীর আলমের সাথেসাথে তাদের উপর নেমে আসা অভ্যন্তরীণ খড়গ-বিভাজনে ব্যথিত। তাই তারা ব্যক্তির বিপক্ষে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকেই নৌকায় ফেরাতে চায়। তারা অন্তরের ভালোবাসাকে মুখের অভিনয়ে লুকিয়ে ছিলো। একজন সরল নারীর চোখেমুখে সন্তানের জন্য সংগ্রামের দৃঢ়তা ভাসমান কর্মজীবি শ্রমিক ভোঠারদের আরো বেশি আকৃষ্ট করেছে। আর তাই জায়েদা খাতুনকে তারা মায়ের রূপে দেখছে। মানুষ চায় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কাজ করতে সুযোগ দেয়া হউক।

প্রসংগত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করে সিটির জন্য যে বাজেট আনেন তা দিয়ে ফোর জি গতিতে যোগাযোগ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটান। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় রাজনীতিতেও আনেন গতি ও ঐক্য। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সবাইকে নিয়ে খুব দ্রুত অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি গঠন করেন। ধর্মীও প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, ক্রিড়া সংগঠনসহ অসহায় নিপিড়িত মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। যোগাযোগ উন্নয়েনের ফলে গাজীপুর থেকে বিভিন্ন রুটে মানুষ এখন সহজেই চলাচল করতে পারছে। এর ফলে মানুষের জমিজমার মূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বেডেছে বহুগুণ। নতুন নতুন কারখানাসহ হোটেল-রেস্তোরা, পার্ক গড়ে উঠেছে। এমনাবস্থায় সিটি মেয়র পদ থেকে তিনি বহিস্কার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের এই ধারাকে নির্বাসিত করে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষ ফাঁকা বুলিতে প্রলুব্ধ হয় না।

মানুষ তাদের অধিকার, সুবিধা-অসুবিধায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে একক ক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা এখন হাতের মুঠোয় বিশ্বকে জানে। আর তাই এই মানুষগুলো জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি আস্থা রেখে মূলত সরকারকে তাদের বার্তা দিতে চায়। তারা নৌকা নয়, ব্যক্তিকে না বলেছে। মানুষ চায় সরকার যেনো জাহাঙ্গীর আলমের পাশে থেকে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে সুযোগ পায়। এজন্যেই যখন মানুষ জাহাঙ্গীর আলম ও তার মায়ের উপর হামলা দেখেছে তারা চুপচাপ ব্যালেটে নিজেদের জবাব দিয়ে দিয়েছে। না এজেন্ট, না মিছিল, না হুংকার, কেবল নিরব প্রচারণা এবং অটল সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মানুষ এনেছে এক ফরমালিন মুক্ত বিজয়।

(জেজে/এসপি/মে ২৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test