E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজৈরে ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা শুরু   

জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বনিতে মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ 

২০২৩ মে ২৮ ১৯:০৫:২৪
জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বনিতে মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ 

বিশেষ প্রতিনিধি, মাদারীপুর : মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শ্রী শ্রী মহামানব গণেশ পাগলের সেবাশ্রমে রবিবার (২৮ মে) শুরু হয়েছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা। মূলত রাতে হবে মূল পুর্জা। আগে এক রাতের জন্য এই কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হলেও এখন চলে সপ্তাহব্যাপী।

স্থানীয় ও আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বাংলা ১২৯৯ সনের ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে এ পূজা শুরু করেন। কথিত আছে, সত্যযুগে দেবতারা সমুদ্র মন্থন করে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে অমৃতসুধা চারটি কুম্ভপাত্রে রাখেন। এরই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ১৩১ বছর আগে ভারতের কুম্ভমেলা অনুকরণে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীতে শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের আশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথম কয়েক বছর এই মেলা এক রাতের হলেও পরবর্তীতে তা ৩দিন করা হয়। তবে ভক্ত ও দোকানীদের স্বার্থে বর্তমানে মেলা থাকে ৭ দিন। পূজা ও মেলা উপলক্ষে এখানে ১৫ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এই মেলাকে কেউ কুম্ভমেলা আবার কেউ কামনার মেলায়ও বলে থাকে। এ দিকে মেলায় আগত মানুষের নিরাপত্তায় তিনস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে শতাধিক পুলিশ।

আরো জানা যায়, রবিবার সকাল থেকেই দলে দলে জয় ডংকা ও নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয় হরিবল ও জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বনি করতে করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু সন্যাসী ও ভক্তবৃন্দরা আসছে মেলা প্রাঙ্গণে। বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগাং, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে মানুষ এই মেলায় আসেন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও অন্যান্য রাষ্ট্র থেকেও ভক্তবৃন্দ আসেন। এ মেলা উপলক্ষ্যে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে সারি সারি নানা রকমের দোকান।

ভারত থেকে আসা সনজিব কুমার বলেন, আমি প্রতি বছরই এখানে আসি। এই কুম্ভমেলায় আসার জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। এখানে এতো মানুষ আসে, যা আমার খুব ভালোলাগে।

হরেক রকম দোকানের ব্যবসায়ি হরিতষ চন্দ্র বলেন, আমি টাঙ্গাইল থেকে এখানে এসেছি। প্রতিবছরও আসি। বেচাকেনা ভালো হয়। তাই আসি।

গোপালগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা প্রদীপ বিশ^াস বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। এই কুম্ভমেলা আমাদের ভালোলাগে, দেশ বিদেশ থেকে মানুষ আসে এখানে।

গনেশ পাগল সেবাশ্রমের প্রধান সেবায়েত অতূলনন্দ গোস্মমী বলেন, গনেশ পাগলের এই কুম্ভ মেলায় মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই অনেকেই এখানে আসেন নানা মানত করতে। দিন দিন এই মেলার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে।

আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রণব বিশ^াস বলেন, মেলায় আগত ভক্তদের জন্য চিড়ামুড়ি ও স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ। তাছাড়া হাজারও বেশি সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন মেলা প্রাঙ্গণে।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মেলা শান্তিপূর্ণ করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য ১২০ জন পুলিশ ও একাধিক সাদা পোশাকে পুলিশ মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, মেলাকে ঘিরে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টি না হয়, সেই লক্ষে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

(এএসএ/এসপি/মে ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test