E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুর খেয়াঘাটের সরকারি ভাড়ার পাঁচগুণ দিতে হচ্ছে চরবাসীদের

২০২৩ মে ২৯ ১৯:১৫:১৩
ফরিদপুর খেয়াঘাটের সরকারি ভাড়ার পাঁচগুণ দিতে হচ্ছে চরবাসীদের

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : খেয়াঘাটের সরকারি ভাড়ার পাঁচগুণ দিতে হচ্ছে চরবাসীদের ফরিদপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর দুর্গম পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত। অবহেলিত চরাঞ্চলবাসীর শহরের আসার প্রধান বাহন ঘোড়ার গাড়ি, মোটরসাইকেল ও নৌকা। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্বের জেলা শহরে আসা-যাওয়ার মাধ্যম এই তিনটি বাহন। তবে নৌকায় করে খেয়া পারাপারে এই দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সরকারনির্ধারিত ভাড়ার পাঁচগুণ পরিশোধ করতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা নদীবেষ্টিত ফরিদপুরের চরাঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করে। পদ্মার এই দুর্গম চরের মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম কৃষিকাজ, পশুপালন ও মাছ ধরা। সদর উপজেলার সিঅ্যান্ডবি নদীবন্দরে পাশ থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের শহরে আসা-যাওয়া করতে হয়। টেপুরাকান্দি ও ধলারমোড় নামে দুটি খেয়াঘাট থেকে নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নে যাতায়াতসহ মালামাল পরিবহন করে থাকে চরাঞ্চলে বসবাস করা মানুষগুলো।

ফরিদপুর সদর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শহরতলীর পদ্মা নদীর সিঅ্যান্ডবি বন্দরের টেপুরাকান্দি ও ধলারমোড় ঘাটে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে সরকারনির্ধারিত একমুখী ভাড়া প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ১০ টাকা, গরু ৫০ টাকা, ছাগল ১০ টাকা, মালামাল পরিবহনে প্রতি মণ দুই টাকা হারে ইজারার টেন্ডারে অংশ নিয়ে ঘাট দুটি ইজারা পান মো. ফজল মোল্লা ও শেখ আমানত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে ফরিদপুরের টেপুরাকান্দি ও ধলারমোড় ঘাট থেকে পদ্মার চরগুলোতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাতায়াতে চরবাসীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। জনপ্রতি সরকার নির্ধারিত ১০ টাকা হারে ভাড়া আদায়ের শর্ত থাকলেও মানছে না কেউ। গত কয়েক বছর এই দাম বাড়তে বাড়তে এখন তা ৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ।

নর্থচ্যানেলের কবিরপুর চরের বাসিন্দা মো. রহিম মিয়া বলেন, সরকারি নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা হলেও ক্রমান্বয়ে তা ২০ থেকে ৩০ টাকা নেওয়া হতো। এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা করে। আমরা চরের গরিব মানুষ। শহরে যাচ্ছি ডাক্তার দেখাতে। স্ত্রী-সন্তানসহ প্রায় সবমিলিয়ে আমাদের যাতায়াত খরচ লাগছে হাজার টাকার মতো।

আরেক বাসিন্দা রফিক মোল্লা বলেন, শহরের নিত্য ও জরুরি প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করতে হলে ঘোড়ার গাড়ি, মোটরসাইকেল, নৌকা ভাড়া, অটোভাড়া দিতে আসা-যাওয়ার জন্য ৪০০ টাকার ওপরে খরচ হয়ে যায়। মাত্র ১২ কিলোমিটারের মতো এই যাত্রাপথের বাড়তি ভাড়া দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

পদ্মার ৩৮ দাগের বাসিন্দা গফুর মোল্লা বলেন, তিনি গবাদি পশুপালন করে জীবিকানির্বাহ করেন। প্রতিদিন তাকে দুধ বিক্রি করতে শহরের আসতে হয়। দুধ বিক্রির প্রায় অর্ধেক টাকা যাতায়াতে খরচ হয়ে যায়। আগে এমন হতো না, ১০ টাকার নৌকা ভাড়া এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা।

এ বিষয়ে ধলারমোড় খেয়াঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. রুবেল মীর বলেন, অধিক মূল্যে ইজারা নেওয়া, তেল, মবিল, নৌকা চালকদের মজুরিসহ যে খরচ তাতে বাড়তি ভাড়া না নিলে কীভাবে পোষাবো? তাই বাড়তি ভাড়া না নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।

নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজেল হোসেন বলেন, সদর উপজেলার এই ঘাট দুটিতে সরকার নির্ধারিত নৌকা ভাড়ার চার্ট না থাকায় ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। নৌপথের যাত্রী, মালামাল, গরু ছাগলসহ কোন পণ্যের টোল বা ভাড়া কত টাকা সেটির একটি মূল্যতালিকা টাঙানোর দাবি এখানকার মানুষের।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। সত্যতা পাওয়া গেলে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, কোনো ধরনের ভাড়া বা টোল নির্ধারণের চার্ট না থাকায় দ্রুত সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়সহ ঘাট এলাকায় টোল চার্ট টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইজারায় উল্লিখিত শর্ত না মানলে এবং নিয়ম ভঙ্গ করলে তাদের ইজারা বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ডিসি/এসপি/মে ২৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test