E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ব্যবসায়ি ও নেতাদের দফায় দফায় কাজে ব্যাঘাত

কর্ণফুলীতে বাঁধা ডিঙিয়ে সিডিএ’র এ্যাকশন অভিযান

২০২৩ মে ৩০ ১৫:০৯:১৯
কর্ণফুলীতে বাঁধা ডিঙিয়ে সিডিএ’র এ্যাকশন অভিযান

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের পুরাতন ব্রিজঘাটে পিসি সড়কের উভয় পাশ ঘেষে গড়ে উঠা দোকানঘর, হাটবাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৃতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ করতে গেলে প্রচন্ড বাধার মুখে পড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।


৩০ মে (মঙ্গলবার) সকাল ১১টা থেকে পূর্ব দুই দিনের উচ্ছেদকৃত জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ শুরু করলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সিডিএ’র এস্টেট শাখার লোকজন ও সিএমপির শতাধিক পুরুষ ও নারী পুলিশ সদস্য।

শুরু থেকেই এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১১ টার দিকে সিডিএ’র লোকজন ব্রিজঘাট কাঁচাবাজারে দেয়াল নির্মাণ শুর করেন। এসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা বাঁধা না দিলেও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব দীপক পাল ভবন এসে সিডিএ রোড ম্যাপ নিয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম্যপুলিশসহ বাঁধা দিতে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে সিডিএ এস্টেট শাখার লোকজনের সাথে তর্কে জড়ান এবং বুঝাতে চান, কোন নোটিশ ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসায়িদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। রোডস এন্ড হাইওয়ের জায়গায় সিডিএ এভাবে দেয়াল দিতে পারে না। কিন্তু এসব মানতে নারাজ সিডিএ’র লোকজন।

সিডিএ দাবি করেন, ‘জমিটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) কতৃক বাস্তবায়িত ব্রীজঘাট হতে পিসি রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এল.এ মামলা নং-১২/৬৭-৬৮ এবং ১৫৪/৬৭-৬৮ মূলে চরপাথরঘাটা মৌজার আর.এস ৩৩৫ ও ৩৫৩ দাগের আন্দর বি.এস ৩ নং খতিয়ানভূক্ত বি.এস দাগ নং-৬৬ ও ৮৪ চউক কতৃক অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগৃহীত জমিতে রাস্তা নির্মাণ করে অবশিষ্ট জমি ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এল.এ মামলা ও বি.এস খতিয়ান মূলে উক্ত জমিটি চউক এর দখলীয় ও মালিকানাধীন।’

এক পর্যায়ে ইউপি সচিব ও সিডিএ লোকজনকে ঘিরে শত শতে লোক মুহূর্তেই জমায়েত হয়ে যায়। এসব বাড়াবাড়ি দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কর্ণফুলী থানার ওসি মো. দুলাল মাহমুদ ইউপি সচিবকে ডেকে পাশের আনোয়ার সিটির খালি মাঠে নিয়ে যান। পরে তাঁকে বুঝান এখনো সিডিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট স্যার আসেননি। উনি আসলে সিদ্ধান্ত হবে। আপনারা যে যার মতো করে চলে যান। তখন সচিব ইউনিয়ন পরিষদের দিকে হাঁটতে শুরু করেন।

তার কিছুক্ষণ পর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমদ রাজা ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার এবং সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক জড়ো হয়ে আবারও উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দিয়ে শত শত লোকজন নিয়ে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। মূলত তাঁদের উদ্দেশ্য সাধারণ ব্যবসায়িদের স্থায়ী ভাবে পুনর্বাসন করা।

অনেকে তখন সীমানা দেয়াল না দিতে মানা করেন। পরক্ষণেই আবার উচ্ছেদ অভিযান থমকে যায়। কাজ বন্ধ থাকে কিছু সময়। এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী। উনার গাড়ি দেখে আরও বেশি হট্টগোল ও বিক্ষোভ করতে থাকেন ব্যবসায়িরা।

কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নেমেই জনতার দাবি দাওয়া শোনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, উচ্ছেদ অভিযান ও দেয়াল নির্মাণ কাজে কোন ধরনের বাঁধা দেওয়া যাবে না। যদিও ব্যবসায়িদের কোন কথা থাকে তাহলে সিডিএ অফিসে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। আরওর জানান, ভূমিমন্ত্রী মহোদয় যদি সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে কথা কোন নতুন নির্দেশনা দেন তাহলে কাজ বন্ধ রাখা হবে।

পরে আধ ঘন্টা সময় ধরে বাজারের নানা বাস্তব পরিস্থিতি ও বাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও যুবলীগ নেতারা উপস্থাপন করলেও সিডিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী ছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তে অটল।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, উচ্ছেদে বাধা ও সিডিএ’র লোকজনের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে নানা তর্ক বিতর্ক চলাকালিন সময়ে ওসি মুঠোফোনে সরাসরি স্পট থেকে ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী সাহেব কে অবগত করেন। তাঁতে মৌন সম্মতি পান সিডিএ’র কাজে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার।

এ বিষয়ে সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বলেন, ‘ব্রিজঘাট কাঁচাবাজার থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত দুপাশ যতটুকু দোকানঘর ভেঙেছে তাতে সিডি অস্থায়ী বাউন্ডার নির্মাণ করছেন। এতে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়িরা বাধা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট স্যার তাঁদের কে বুঝিয়ে বলায় চলে যান। তবে সিডিএ’র পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়িদের জন্য স্থায়ী ভাবে কিছু করার।’

সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে। যে সব স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ বা ভাঙা হয়নি। সামনে ধারাবাহিকভাবে সব উচ্ছেদ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

অপর একটি সূত্রে জানায়, সিডিএ’র পক্ষে মো. হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যাতে ব্রিজঘাট বাজার ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ বা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। যার রিট মামলা নং-৬১৫৫/২৩ ও ৬৪০১/২৩ ইং।

চট্টগ্রাম দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘এভাবে সড়ক ও জনপথের রাস্তার উপর বাজার বসানো যায় না। এতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। আইনে সড়কের উপর বাজার বসা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব বাজারের কারণে নিরাপদ সড়ক গড়ার উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।’

(জেজে/এএস/মে ৩০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test