E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরগুনায় আয়া পদে ৫ লাখে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

২০২৩ মে ৩১ ১৮:৩৭:৩১
বরগুনায় আয়া পদে ৫ লাখে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

আসাদ সবুজ, বরগুনা : বরগুনায় নিয়োগের আগেই নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির কথা জানেন না এলাকার অনেকেই।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৬নং কাজিরাবাদ ইউনিয়নের চান্দখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে সহকারী প্রধান শিক্ষক, সৃষ্ট পদে অফিস সহায়ক ও আয়া পদে (প্রতি পদে একজন করে) মোট তিনজন নিয়োগ প্রদান করার করে লক্ষ্যে নিয়মানুযায়ী ২১শে জুন ২০২২ তারিখ একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুলুর রহমান। ম্যানেজিং কমিটির অন্তর দ্বন্দ্বে ওই নিয়োগ স্থাগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী তারিখে দ্বিতীয় দফায় একটি জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দুটি দৈনিকে আবারও ওই তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করেন প্রধান শিক্ষক বাবুলুর রহমান। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আহবানে চান্দখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ০৬ জন, অফিস সহায়ক পদে ৮জন ও আয়া পদে ৫জন আবেদন করেন।

২৫ মে (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় নিয়োগ পরিক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়, সেখানে আবেদনকারীদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন কারী ৬জন, অফিস সহায়ক পদে আবেদনকারী ৮ জনের মধ্যে ৬, আয়া পদে ৫জন আবেদনকারীর মধ্যে ৪জন পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। নিয়োগ পরিক্ষায় ডি জি এর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম, বোর্ড প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফুলঝুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির হোসেন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেতাগী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুলুর রহমান।

এসময় প্রার্থীদের মেধা যোগ্যতা পরীক্ষা না করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বাবলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে নিয়োগ হতে পারে বলে নিয়োগের পরীক্ষার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের থাকার অনুরোধ করেন স্থানীয়রা।

নিয়োগ পরীক্ষার দিন বৃহস্পতিবার (২৫ মে)সকালে চান্দখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাজির হয় গণাধ্যমকর্মীরা বিদ্যালয়ে ঢুকতেই চোখে পড়লো ডেকরেটরের বাবুর্চি দিয়ে বিশাল রান্না বাড়ার আয়োজন। বাবুর্চিকে জিজ্ঞাস করলে বলেন স্যারদের জন্য পাক হচ্ছে মাছ,খাসির মাংস ও গরুর মাংস। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হুরো হুরি শুরু হয়ে যায় প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীদের। সকাল১০ টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি ও ডিজির প্রতিনিধি লাইব্রেরি থাকা অবস্থায় ভবনের তৃতীয় তলায় পরীক্ষা শুরু হয় ১১.৩০মিনিটে। এসময় পরীক্ষার কেন্দ্র ঘুরে দেখতে চাইলে গণাধ্যমকর্মীদের বাদা প্রধান করেন প্রধান শিক্ষক তিনি সভাপতি ও ডিজির প্রতিনিধির সাথে বসে কথা বলতে বলেন।

এর মধ্য গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খবর আসে আরেক নাটকীয়তার। আয়া পদে যে ৫ জন আবেদন করেছেন তারা সকলেই একই পরিবারের আত্মীয়স্বজন। আসলে পরীক্ষা কার্যকারিতা করার লক্ষ্যে বলা আছে প্রতি পদে কম পক্ষে তিন জনকে অংশগ্রহণ করতে হবে, না হলে সেই নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন যোগ্য হবে না। তাই তারা এক পরিবার থেকেই ৪ জন আবেদন করেছেন। স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, যে বরগুনা সদর উপজেলাধীন ৩ নং ফুলঝুরি ইউনিয়নের সাহেবের হাওলা এলাকার বাসিন্দা কাওসারের স্ত্রী লিমা বেগমের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া করছেন। ইতিমধ্যে জমি ও সোনা গহনা বন্ধক রেখে প্রার্থী লিমার পরিবার টাকাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে । তাইতো লিমার ননদ,ঝা ও চাচাত ভাইয়ের স্ত্রীকে দিয়েও আবেদন করিয়েছেন।আয়া পদে ৫ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে শুধু লিমার ৪ আত্মীয়। নিয়োগ পরিক্ষার শেষে ফলাফল প্রকাশ না করেই দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা একে একে চলে যান।

চান্দখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুলুর রহমান বলেন, পরিক্ষার পরে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফলাফল দুইদিন গোপন রেখে নিয়োগপ্রাপ্তরা জামাত বা জঙ্গী সংগঠনের কর্মী কিনা? সে বিষয়ে তদন্ত করেছেন। তারপর নিয়োগ দিয়েছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে বজলুর রহমান, অফিস সহায়ক পদে ছগীর হোসেন ও আয়া পদে লিমা আক্তারকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কে কার আত্মীয় তা আমার জানা নেই। আপনাদের কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে স্কুলে আসেন।

এ বিষয়ে ডিজি'র প্রতিনিধি বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম এর কাছে পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের বিষয় জানতে চাইলে, বিদ্যালয়ের সভাপতি দুইদিন পরে প্রকাশ করবেন বলে জানিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তার সাথে আবারো যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান ওইদিনই পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমরা অবগত নই। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এএস/এএস/মে ৩১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test