E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীতে যত নেতা, তত গ্রুপ!

২০২৩ জুন ১৪ ১৬:৫৭:৫৪
কর্ণফুলীতে যত নেতা, তত গ্রুপ!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : ব্যক্তিগত কোন্দল, দ্বন্ধ, গ্রুপ ও বলয়প্রথা—কর্ণফুলী উপজেলার রাজনীতিতে বেড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে সব সময় উষ্ণ রাখছে গ্রুপগুলো। যদিও অনেকে এই দ্বন্ধ ও গ্রুপ করাকে রাজনীতির বিউটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে ভেতরে ভেতরে ঘোষিত নানা কমিটি নিয়েও চলছে অসন্তোষ।

কেননা, দলের বিরোধিতা করেও অনেকে সহ-সভাপতি, আবার অনেকে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সম্পাদক হিসেবে পদ পাচ্ছেন। নাটকীয়তার শেষ নেই কর্ণফুলী রাজনীতিতে। এখানে পুরস্কার আর বহিষ্কার কোন ফ্যাক্টর হিসেবে কারো কাছে গন্য নেই। যদিও এ নিয়ে তৃণমূলে নানা ক্ষোভ। সেখান থেকে মুখরোচক আলোচনা—কর্ণফুলীতে ক্ষমতাসীন দলে এখন ‘যত নেতা তত গ্রুপ’। ত্যাগিরা চিন্তা করছেন, এই অবস্থায় চট্টগ্রাম ১৩ আসনের কর্ণফুলী উপজেলায় আ.লীগকে গ্রহণযোগ্য একক নেতৃত্বের অধিকার করতে ভূমিমন্ত্রীর হাত কে শক্তিশালী করতে সবাইকে এক হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু।

স্থানীয় আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জানান, একটা সময় যখন সৈয়দ জামাল আহমেদ ছিলেন তখন ছিলো আওয়ামী লীগের একক নেতা। এরপর ফারুক চৌধুরী ও হায়দার আলীর উত্থান হলে দুই ধারায় সক্রিয় হয় কর্ণফুলী উপজেলা আ.লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। পরে সদ্য উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে হায়দার আলী দূরে ছিঁটকে পড়লে দলের ভেতরে আর ঐক্যতা ফিরে আসেনি। উল্টো নতুন সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার ও সভাপতি ফারুক চৌধুরীর মধ্যে বলয় বেড়েছে, বলয়ের ভেতরে তৈরি হয়েছে উপ-বলয়ে অন্তঃস্রোত। ফলে দ্বন্দ্ব, রেষারেষি বেড়েছে। যা সহজেই খালি চোখে ধরা পড়ছে না। তবে প্রকৃত রাজনীতিবিদ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা ঠিকেই আচ করতে পারছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্ণফুলীর একাধিক নেতারা জানান, এখন দলের বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোলায়মান তালুকদার ও দিদারুল ইসলাম চৌধুরী। দল ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটির বেশির ভাগ নেতা তাঁদের বলয়ের। বাকি নেতারা পেছনে আছেন। এর বাইরে নতুন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম হক ও যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার অনুসারীদের নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি বলয়।

যদিও কর্ণফুলীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ ইউনিয়নের ৪৫ টি ওয়ার্ডে দলকে সুসংগঠিত করতে হলেই এখনই সঠিক সময় ‘সব বলয় ও উপগ্রুপ’ ভেঙে দলের স্বার্থে এক হওয়া। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচন একেক নেতার একক বলয় ও গ্রুপ তৈরি করে দলকে বিভক্ত করলে দুঃসংবাদ দাঁড়াতে পারে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ কর্ণফুলীতে বিএনপি ভেতরে ভেতরে অনেকটা সক্রিয়। তাঁর প্রমাণও দেখা গেছে গত রমজানের ইফতারি পার্টিতে।

অন্যদিকে, কর্ণফুলীতে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা ও গুটি কয়েক ইউপি চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে রয়েছে আলাদা আলাদা গ্রুপ। এই উপ-বলয়ের নেতৃত্বেও দলের জেলা পর্যায়ের নেতারা আশ্রয় হিসেবে আছেন বলে প্রচার রয়েছে। স্থানীয়ভাবে দলে চলমান অসন্তোষের একটা বড় কারণ, যারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তাঁদের কমিটিতে পদ ও ঠাঁই পাওয়া। গত কয়েক বছরে এই মেরুকরণ স্পষ্ট হয়েছে। তাতে অন্য গ্রুপগুলোর নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এতে দলের ভেতরে বাহিরে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়। অস্থিরতা তৈরি হয় বলে অনেকে জানান।

নেতা-কর্মীরা জানান, সব মিলিয়ে কর্ণফুলী রাজনীতির নেতৃত্ব অনেকটা দিদার-সোলায়মানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাঁদের উপর আস্থা বাড়াবে তৃণমূলও। কারণ তাঁরা রাজনীতিতে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার জানান দিচ্ছেন। রাজনীতি মানেই কুটকৌশল। যেভাবে দাবা খেলতে হয়। তাঁরা সে ভাবেই খেলছেন। এখন দলের বিভিন্ন কমিটিতে থাকা নেতাদের অন্তত ৭০ ভাগ তাঁদের অনুসারী।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নির্বাহী সদস্যের মধ্যে কয়েকজন জানান, ‘দীর্ঘদিন দলের আদর্শিক কর্মীদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। দলের স্বার্থে আমরা যেসব কথা বলছি, তা শোনা হচ্ছে না। অথচ এই দলের পেছনে আমার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। আজ আমরা অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছি। বিষয়টি নীতিনির্ধারণী মহলের খেয়াল রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন।’

তবে সব পক্ষের অভিযোগের আঙুল যে একজনের দিকে, সেই তিনিও স্থানীয় বিভেদের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে একাধিকবার কল করেও ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘আমরা কোনো গ্রুপিং দেখতেছি না। আমরা সবাই মন্ত্রী মহোদয়ের কর্মী। আমরা উনার সিদ্ধান্তেই ঐক্যবদ্ধ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে সবাই কাজ করব।’

(জেজে/এসপি/জুন ১৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test