E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

২০২৩ জুন ২০ ১৯:১২:২৩
ঝিনাইদহে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

বিশেষ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহে হাত বাড়ালেই মিলছে সকল ধরণের মাদক। সংশ্লিষ্টদের যেন মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই নেই। যে কারণে মাদক জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মাদকের এমন প্রসারের কারণে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণেরাও আশঙ্কাজনকভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। জেলায় গাঁজা থেকে শুরু করে ভারতীয় মদ, বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা রকম মাদক কেনাবেচা হচ্ছে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারিদের সাথে যোগসাজস করে এ জেলায় মাদক আমদানি করছে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। শীর্ষ এই মাদক কারবারিরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা,সরকারি আমলা, নামধারী সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সদস্যদের সহায়তায় বেশ শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে বলে অনুসন্ধানে প্রতিয়মান হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলায় অবৈধ মাদকের চালান আসছে। ছোট ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে গ্রেফতার হলেও মাদকের শীর্ষ গডফাদারদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ স্থানীয় প্রশাসন।

প্রতিদিন আনুমানিক এক হাজার ইয়াবা ও প্রায় ৫০০ বোতল ফেন্সিডিল বিক্রি হয় শুধুমাত্র সদর উপজেলাতেই। ভারতের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা জেলার মহেশপুর উপজেলা ও চুয়াডঙ্গা জেলা হয়ে খুব সহজে মাদকসেবীদের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছে শীর্ষ এই মাদক ব্যাবসায়ীরা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের শীর্ষ মাদক গডফাদারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে মাদকের চালান সরবরাহ করছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

ঢাকার একটি মাদক চক্রের সাথে যোগসাজস করে কক্সবাজার থেকে ঝিনাইদহে মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে আসে বিজিবি থেকে চাকরিচ্যুত তৌহিদুল ইসলাম। পুলিশের খাতায় ছদ্ম নামধারী এই ডেবিটবক্সের বিরুদ্ধে মাদকের চালান সরবরাহের বিষয়টি নজরদারীতে থাকলেও হাতেনাতে চালান ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বলে গোপনসূত্রে জানা যায়।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে আরো জানা যায়, ঢাকার একটি চক্রের সাথে যোগসাজসে মাদকদ্রব্য ইয়াবার বড় চালান ঝিনাইদহ শহরে আসে তৌহিদুল ইসলাম ওরফে ডেবিট বক্সের মাধ্যমে। নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও ৫হাজার থেকে ১০হাজার পিচ ইয়াবার চালান আসে বলে ওই সূত্র জানায়।

ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিল জেলার মহেশপুর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা উপজেলা হয়ে ঝিনাইদহের গডফাদারদের নিকট এসে পৌঁছায়। এই চক্রের সাথে সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের বাবু ওরফে ফেন্সি বাবু, উদয়পুর গ্রামের জসিম,পবহাটি গ্রামের রাজন ও রাসেল।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এরা সবাই দলগতভাবে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করত। মাদক ব্যবসায়ের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় তারা প্রত্যেকে আলাদাভাবে আলাদা আলাদা স্থানে মাদকের স্পট তৈরি করে রমরমা অবৈধ মাদক ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চক্রটি একাধিকবার পুলিশের কাছে আটক হলেও কাঙ্খিত মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের অভিযানের কারণে তারা অনেকটাই পর্দার আড়ালে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে জানা গেছে।

যশোরের বেনাপোল থেকেও ঝিনাইদহে ইয়াবা ও গাঁজার চালান প্রবেশ করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এই চালান ঝিনাইদহের বিভিন্ন খুচরা মাদকব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার শিমুল। বিভিন্ন সময় মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া আসামির মুখে এই নাম শোনা গেলেও এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

মাদকের শীর্ষ এই চক্রগুলোর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা,সাংবাদিক ও সরকারী আমলাদের যোগসাজস আছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। অনুসন্ধানকালে এসব ব্যক্তিদের মাদক সেবনের সাথে সম্পৃক্ততার সত্যতাও পাওয়া গেছে। তবে মাদক সেবনের পাশাপাশি তারা মাদক ব্যবসায়ের সাথে কোনভাবে যুক্ত আছে নাকি ব্যবসায়ীরা ওইসব ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা থাকায় ওইসব নাম ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধা গ্রহন করছে সেটা নিশ্চিত হতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সঠিক তদন্তের প্রয়োজন।

জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মাদকের ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়াসহ জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মাদ সোহেল রানা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। মাদকসেবী সন্দেহভাজন তরুণদের কর্মকান্ডের উপর তীক্ষ্ম নজর রাখা হচ্ছে। মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের খবর পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

(একে/এসপি/জুন ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test