E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রশাসনের ন্যায় বিচারের আশ্বাস

শ্রমিক সংগঠনের স্বার্থের কাছে অসহায় নিহত শহিদুলের পরিবার

২০২৩ জুলাই ০৯ ১৮:১৩:৫৬
শ্রমিক সংগঠনের স্বার্থের কাছে অসহায় নিহত শহিদুলের পরিবার

মোঃ জসিম উদ্দিন জুয়েল, টঙ্গী : ক্যান্সার আক্রান্ত শহিদুলের স্ত্রী কেমো দিয়েছেন সবেমাত্র। কাপাসিয়া রাজারবাড়ি মিঠালু গ্রামের মেঠো পথ ধরে আমরা পৌঁছে যাই নিহত শহিদুলের বাড়ি। বাড়িভরা শত মানুষের ভীড়। সবাই বলছেন শহিদুলের স্ত্রী-পরিবারকে সমবেদনা  জানাতে এসেছেন। নিজেদেরকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সঙ্গগঠনের নেতাকর্মী পরিচয় দেন তারা। এরিমধ্যে শতশত লোক জড়ো করে নিহত শহিদুলের জন্য জ্বালাময়ী প্রতিবাদ আন্দোলন করেছেন তারা। শহিদুলের পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তারই সংগঠন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার। দুই সন্তান নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত শহিদুলের স্ত্রীর চিকিৎসা ও সন্তানদের লালনপালন নিয়ে উৎকণ্ঠা ও অসহায়ত্বের মধ্যে ঘটনাকে পুজি করে চলছে মাঠ গরমের খেলা। 

গত ২৫ জুন ঈদ-উল-আযহার পূর্বে গাজীপুরা সাতাইশে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিঃ কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে যান সংগঠনটির গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫)। অভিযোগ উঠে, আলোচনা শেষে বেরিয়ে আসার পর ফ্যাক্টরীর মুল গেটের বাহিরে বিশ-পঁচিশজন আতর্কিত হামলা করে শহিদুল এবং তার সঙ্গে থাকা তিন জনের উপর। হামলায় আহত শহিদুলকে স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় আহত হন শহিদুলের সাথে আসা বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ মোস্তফা, জাতীয় নিট ডাইং গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফ ও আক্কাস নামের এক শ্রমিক নেতা।

এ বিষয়ে ঘটনার পরের দিন ২৬ জুন সকালে টঙ্গী পশ্চিম থানায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদি হয়ে ১. মাজাহারুল (৩৫), ২. আকাশ (৩৮), ৩. রাসেল (৩২), ৪. রিপন (২৭), ৫. সোহেল (২৬), ৬. ম্যানাজার হানিফসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনের নামে মামলা করেন।

উল্ল্যেখ্য যে, মামলার দিনই দিবাগত রাতে প্রধান আসামি মাজাহারুলকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রেফতার করে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ। মাজাহারুলকে বিজ্ঞ আদালত হাজির করলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে অধিকতর তদন্তের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে মামলার আসামি এবং মামলার আসামীদের পরিচয়সহ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে শহিদুলের পরিবারের কেউ অবগত না। নিহত শহিদুলের ৪ ভাই দুই বোন। এদের মধ্যে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের প্রতিনিধির সাথে কথা হয়, শহিদুলের বড় ভাই মোঃ সোলেমান (৫৫), বাড়ির সার্বিক দায়িত্বে থাকা নিহত শহিদুলের একমাত্র ভাগীনা কাজল বেপারী, চাচা আঃ মান্নান (৭০)সহ নিকট আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে।

সরেজমিনে জান যায়, মামলার বাদী ফেডারেশন নেত্রী কল্পনার বাদি হওয়া এবং মামলার সার্বিক বিষয়ে অবগত না করায় সন্দেহ ও এর ফলে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন আত্মীয়-স্বজনসহ নিহতের আপন বড় ভাই।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সাথে কথা হয় বাদি কল্পনার। নিজেকে শুধু নেত্রী নয়, শহিদুলের বোনের মতো দাবি করে বলেন, নিহত শহিদুলের সাথে থাকা আহত শ্রমিক নেতাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের নাম উল্লেখ করেই মামলা করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু নিহত শহিদুলের স্ত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত এবং দুই ছেলে সন্তান নাবালক সেহেতু আমি মামলা করি। মামলার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট না হলেও তিনি কোনো চাপ বোধ করছেন না। এদিকে শহিদুলের সাথে থাকা শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। তারা জানান, শতভাগ চিনেই আসামিদের নাম দিয়েছি আর ২০/৩০ জনের মতো ছিলো যাদের চিনি না।

উল্লেখ্য যে, শ্রমিক নেতা শহিদুলকে যারা কিলঘুষি মারধর করে হত্যা করেছে বলে অভিযুক্ত তারা সকলেই আবার অন্যান্য নামীয় শ্রমিক সংগঠনেরই নেতা। সাক্ষীদের একজন বলেন, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৮ থেকে ৯ ঘটিকার সময় ফ্যাক্টরীর গেটের বাহিরে আসলে প্রথমে বাকবিতন্ডা হয় এবং পরে মুল গেটের দেয়ালের পাশেই তাদের ৪ জনকে মারধর শুরু করে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের ৫ জন এবং এতে আরো অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন হাজির হয়। এখন মামলা পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর শ্রমিক নেতাদের নানামূখী কথা আসছে যা পরস্পর বিরোধী বলে তথ্য আছে।

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী দোকানদার ফারুক, গার্মেন্টস শ্রমিক সাব্বির ও পাশের একটি প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান আনোয়ারের বক্তব্য অভিন্ন পাওয়া গেছে। তারা জানান, শ্রমিক নেতাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের পর উত্তরে গাছামূখী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো শহিদুল ও তার সাথে কজন। পথে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা গেটের কাছে আসলে শহিদুল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন। তখন তার মাথায় পানিও ঢালা হয় এবং পরে তাকে রিক্সাযোগে হাসপালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে তাদের তিন জনের কেউই হামলা হতে দেখেননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের সাথে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলা তদন্তকারী টঙ্গী পশ্চিম থানা কর্মকর্তা উৎপল কুমার সাহা জানান, মামলাটি বর্তমানে ইডাস্ট্রিয়াল পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

আজ রবিবার বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ৬ নাম্বার আসামী ম্যানাজার হানিফ ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের হেফাজতে আছে। বিজ্ঞ আদালত এরিমধ্যে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তার বিষয়ে তদন্তের স্বার্থেই এর বেশি তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পরিদর্শক মোঃ ওসমান আলী জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য ভিসেরার নমুনা ঢাকার ফরেনসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের উর্ধতন সকল কর্মকর্তা বিষয়টি সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠে কাজ করছে। এবিষয়ে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটনসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিতে আমরা সবাই বদ্ধপরিকর।

এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিটিয়ে হত্যাসহ বিভান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে। অথচ কারো বক্তব্যে লাঠিসোটা ও অস্রের কথা নেই। পুলেশের কর্তব্যে অবহেলাসহ বিশেষ একটি মহলকে সূত্র ছাড়াই টার্গেট করারও চেষ্টা হচ্ছে যা ঘটনায় সাক্ষী, পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের সাথে কোনো মিল নেই।

(জেজে/এসপি/জুলাই ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test