E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের নাম গেজেট ভুক্ত করা ও শহীদ পরিবারের সরকারি স্বীকৃতির ন্যায়সঙ্গত দাবির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার

২০২৩ জুলাই ১৩ ১৬:১৪:৩৪
মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের নাম গেজেট ভুক্ত করা ও শহীদ পরিবারের সরকারি স্বীকৃতির ন্যায়সঙ্গত দাবির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ১৯৭১ শহীদ পরিবার শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি ফরিদপুরের উদ্যোগে প্রায় শতাধিক শহীদ পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নারী মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের সম্মান জানানো হয়েছে, তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সম্মানী।

গতকাল বুধবার বিকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানে সাংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান তালুকদার পিএএ। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা পিকে সরকার প্রবোধের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্য রাখেন যুদ্ধকালীন সাব সেক্টর কমান্ডার ও ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী নুর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলম সৈনিক ও শহীদ পরিবারের সন্তান প্রবীর সিকদার, বাদল মুন্সি, ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর মিত্র প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থানা ও শহরের প্রায় একশত পরিবারের সদস্যদের হাতে দুই হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন বাবুল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও কলম সৈনিক প্রবীর সিকদার, বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহা, চারুবালা বিশ্বাস, মনোয়ারা বেগমকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, এই প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বুঝতে পারবেন না মুক্তিযুদ্ধের মর্ম বেদনা। সেদিন কী নৃশংস ভয়াবহতা এ জাতির উপর চালানো হয়েছিল। ইতিহাস সংরক্ষণ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের তালিকা গেজেট ভুক্ত করা ও শহীদ পরিবারের সরকারি স্বীকৃতির দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আপনাদের এ দাবি ন্যায় সঙ্গত। আমি বিষয়টি অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করব। তিনি আরো বলেন, যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছিল, আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম, আমরা কোথায় আছি, এটা তো স্বীকৃতি সম্মাননা! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে আমাদের অধিকার আদায় সহ মুক্তি সংগ্রামের বিষয়ে বলে গেছেন। বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে। এটা দেশ স্বাধীন না হলে সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি তার আদর্শে হিমালয়ের মত বেঁচে আছেন। আমরা সব সময় আপনাদের সকল অধিকার আদায়ে পাশে থাকবো। যখন একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কিংবা শহীদ পরিবারের সন্তান দেখেন যে, সেদিন তার বাবাকে যারা হত্যার করেছিল সেই ব্যক্তি সমাজে মাথা উঁচু করে চলছে, তখন তার যন্ত্রনার মাত্রা কোন পর্যায়ে থাকতে পারে! আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সংরক্ষণে কাজ করতে হবে।

প্রবীর সিকদার তার স্মৃতি চারণে বলেন, যার বাবা নেই তিনিই বোঝেন বাবা না থাকার যন্ত্রণা। সেদিন আমি নদীতে পচা দুর্গন্ধ লাশ ঠেলে ঠেলে আমি আমার বাবাকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। আমার বাবাকে কোথায় সমাহিত করা হয়েছে সেটা আমি জানিনা। তাই পুরা বাংলাদেশটাকে আমার বাবার কবরস্থান মনে হয়। আর আমার বাবার কবরস্থানের উপর বসে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা আমি সহ্য করতে পারি না। এ পর্যন্ত অনেক দলই ক্ষমতায় এসেছেন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কেউ ভাবেননি। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভেবে তাদের সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তা না হলে আমাদেরকে কঠিন মুল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে, সেটা শুধরে নিয়েই আমাদেরকে তাদের সাথে কাজ করে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test