E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাট

২৫০ ব্যবসায়ীর ভবিষ্যত পথে কিংবা রাস্তায়

২০২৩ জুলাই ১৫ ১৬:০৫:২৭
২৫০ ব্যবসায়ীর ভবিষ্যত পথে কিংবা রাস্তায়

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া ২৫০ ব্যবসায়ীর ভবিষ্যত এখন পথে কিংবা রাস্তায় রাস্তায়। পুনরায় তাঁরা স্ব স্ব দোকানঘর ফেরতের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলেও গত ৩ মাস যাবত কোন দফতরের কানে পৌঁছায়নি। বিনা নোটিশে তাঁদের দোকানঘর গুড়িয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ)।

এতে উপজেলার ব্রিজঘাট এলাকায় ছিলো তিনটি ব্যবসায়ি সংগঠন। এদের একটি হলো পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদ। কাগজে কলমে যাদের সদস্য সংখ্যা ৮২ জন। দ্বিতীয়ত রয়েছে পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। যাদের সদস্য সংখ্যা ১১২ জন। তৃতীয়ত রয়েছে ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। যাদের সদস্য সংখ্যা ৯২ জনের অধিক। তিন সমিতিতে মোট সক্রিয় ব্যবসায়ি রয়েছে প্রায় ২৫০ জন মতো।

এদের অনেকেই ব্যাংক কিংবা সমিতির লোন নিয়ে দোকানের পজিশন কিনে ব্রিজঘাটে ব্যবসা করে আসছেন প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে। কিন্তু হঠাৎ সিডিএ অভিযান চালিয়ে দোকানঘর ভেঙে দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে ব্যবসা হারালেন তাঁরা। কোথাও বসার জায়গা পাচ্ছে না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই আবার খোলা আকাশের নিচে চেয়ার-টেবিল রেখে কোন রকমে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করছেন।

এরমধ্যে সরকারের নানা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বাজার পরিদর্শন করে নানা আশ্বাস দিলেও মূলত কেউ পাশে নেই ২৫০ ব্যবসায়ির পাশে। এসব ব্যবসায়িরা এখনো জানে না ব্রিজঘাটে কি হতে যাচ্ছে। বাতাসে নানা কথা ছড়াচ্ছে। যেমন-ব্রিজঘাট বাজারের জমিটি এস আলমের হাতে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, ব্রিজঘাট বাজারের জমিটি সরকার খাস করে ফেলেতেছে। আবার অনেকেই কানাঘুষা করছেন বাজার কখনো আর স্থায়ী ভাবে বসবে না। বরং ১৫ ফুট করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করবেন সিডিএ। আগের রাস্তা তাঁরা সিডিএ মাঠের সাথে সংযুক্ত করে ফেলবেন। ফলে, কাঁচা বাজার মোড় হতে ব্রিজঘাট যাত্রী ছাউনি এলাকা অদৃশ্য হয়ে যাবে। এতে আনোয়ার সিটির মার্কেট ঘেঁষে নতুন সড়ক নির্মাণ হবে। এটা সোজা চলে যাবে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেঁষে হাজী টাওয়ারের সামনে দিয়ে নদী তীরে। ওটাই হবে নতুন রাস্তা।

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা দাবি করেন, সিডিএ’র জমিতে ব্যবসায়িরা অবৈধ ভাবে দোকান করেনি। অনেকেই জমির মূল মালিক থেকে ভাড়ায় দোকান নিয়েছেন। সিডিএ সংস্থাও অনেকের কাছ থেকে তিনশ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প নিয়েছেন। তারপরেও বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করেছেন। সিডিএ ভাসমান সেতু করার জন্য এলএ মামলা নং-১২/৬৭-৬৮ সালে জমি অধিগ্রহণ করলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। সুতরাং জমির মূল মালিকেরা তাঁদের জমিও আবার ফেরত চান।’

কেননা ২৫০ ব্যবসায়িরা বলেছেন, ‘হঠাৎ উচ্ছেদে সকল ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। তাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সিডিএ দোকান ভাঙেনি, ভেঙেছে গরিব মানুষের স্বপ্ন। জাতীয় নির্বাচনের আগে কাদের ইন্ধনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের পেটে লাথি মেরেছে? কেন উচ্ছেদ করেছেন? আমরা এই অনিয়মের বিচার চাই। এই দোকান ঘর উচ্ছেদের নামে ৪ কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে জামানতের টাকা, দোকানের ডেকোরেশন ও ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল বাবদ অনেক ক্ষতি হয়েছে। সিডিএ’র পূনর্বাসন করা দরকার বলে অনেকেই দাবি তোলেছেন।’

পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান বলেন, ‘২৬ বছর ধরে যাবত ব্রিজঘাটে দোকান করছি। ২৬ মিনিটও সময় দেয়নি। হুট করে উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের ব্যবসায়িদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ ও সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বলেন, ‘সিডিএ’র পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়িদের জন্য স্থায়ী কিছু দোকান ঘর নির্মাণের। মূলত খাস সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এসব উচ্ছেদ করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘কর্ণফুলীতে সিডিএ’র জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। অনেকেই ফোনে জানিয়েছেন এতে স্থানীয় গরিব মানুষজন যারা দোকানপাট করতেন তাঁদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে দোকানদারদের জন্য স্থায়ী কিছু করার চিন্তা করব।’

চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) এর অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা পুরাতন ব্রীজঘাট বাজারটির ইজারা দরপত্র আহ্বান করেছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়। কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, উপজেলায় যেকোন জায়গায় বাজার বসলে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় তা ইজারা দিতে পারেন। দীর্ঘদিন পর মূলত কাঁচাবাজারটি ইজারা দেওয়ায় কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন ও সিডিএ’র মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি হলেও সমাধানের কোন সুরানা হয়নি। ফলে, বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে ২৫০ ব্যবসায়ি ও তাঁদের পরিবার।

(জেজে/এসপি/জুলাই ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test