E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বোয়ালমারীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের মানববন্ধন 

২০২৩ জুলাই ১৮ ১৯:০৭:০৪
বোয়ালমারীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের মানববন্ধন 

কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা, ফরিদপুর সিভিল সার্জন এবং বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে অশ্লীল, মানহানিকর স্লোগান দেয়ার প্রতিবাদে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। 

দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাখাওয়াত হোসেন এবং মো. জিল্লুর রহমান ওই তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার তিনটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্লিনিক তিনটি হলো- হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বস্থ সরকারি কলেজ রোড সংলগ্ন দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল রোডস্থ আল আমিন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এবং উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত স্বর্ণা ক্লিনিক। অভিযান পরিচালনার সময় সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টরা ক্লিনিক তিনটিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পান। এ সময় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকারীরা ক্লিনিকগুলোর সার্বিক পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন এবং অপারেশন থিয়েটারের বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও নষ্ট দেখতে পান।

এ প্রেক্ষিতে রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনা করে বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর না করা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বন্ধ রাখার এ নির্দেশনার প্রতিবাদে 'দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার' এর শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল সোমবার বিকেলে বোয়ালমারী পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ওই ক্লিনিকের কর্মচারীসহ ২৫-৩০ জন অংশ নেয়। মিছিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.মো. ফরিদ হোসেন মিঞার নাম জড়িয়ে আপত্তিকর ও মানহানিকর স্লোগান দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় কর্মঘণ্টা শেষে মানববন্ধন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বোয়ালমারী উপজেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ মোরতুজা আলী তমাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, যারা ডা. ফরিদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিছিলসহ বিভিন্ন অপপ্রচার করেছেন আমি তাদের প্রতি ঘৃণা এবং নিন্দা জানাই। বোয়ালমারী উপজেলার কোনো মানুষের কোনো সমস্যা হলে হাসপিটালে ভর্তি, উন্নত চিকিৎসা, অর্থনৈতিক সমস্যা বা স্বাস্থ্য বিভাগে কোন সুপারিশ- ফরিদ ভাই সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছেন। যুবলীগ নেতা রাহাদুল আখতার তপন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জনের বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কে এম মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের কেউ গতকালের ঘটনায় জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের দাবি তাদের ক্লিনিক বন্ধের পেছনে ডা. ফরিদ হোসেন মিঞার হাত আছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, এটা জেলা সিভিল সার্জনের রুটিন ওয়ার্ক। জেলার ক্লিনিকগুলোর সার্বিক অবস্থা তদারকি করা তার কাজ। ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন বোয়ালমারী উপজেলার তিনটি ক্লিনিকে সোমবার অভিযান চালিয়ে কিছু ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। সে মোতাবেক তিনি (সিভিল সার্জন) ওই সকল ত্রুটি দূর করে ক্লিনিক পরিচালনা করতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ঘটনার সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি বোয়ালমারীর কোন ক্লিনিকের সাথে জড়িত নই। অথচ আমাকে জড়িয়ে দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে মানহানিকর স্লোগান দেয়া হয়েছে, যা আপত্তিকর। আমি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাহিদ আল রাকিব মিডিয়া কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) স্যার কোন ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব চেয়েছিলেন বা কোন ক্লিনিকের মালিক আছেন এমনটি আমার জানা নেই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বোয়ালমারীতে বন্ধ ঘোষিত ক্লিনিকের চেয়েও নোংরা পরিবেশে ক্লিনিক পরিচালিত হচ্ছে এমনটা আমার জানা নেই। বোয়ালমারীতে ডজনখানেক ক্লিনিক থাকতে (অভিযানে বন্ধ ঘোষিত) মাত্র তিনটি ক্লিনিকেই কেন অভিযান চালানো হলো? এ প্রশ্নের জবাবে ডা. নাহিদ আল রাকিব বলেন, এ তিনটি ছাড়াও হাসপাতাল গেটের আরো একাধিক ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

(কেএফ/এসপি/জুলাই ১৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test