E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভয়ানক ঝুঁকিতে রেল যোগাযোগ

২০১৪ এপ্রিল ৩০ ১৫:০১:২৬
ভয়ানক ঝুঁকিতে রেল যোগাযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি ট্রেন-দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগ রুটের যাত্রীরা চলন্ত অবস্থায় বগি উল্টে যাওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন। গত ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-দিনাজপুর রুটসহ দেশের বিভিন্ন রুটে ছোট-বড় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এসকল দুর্ঘটনার মধ্যে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, যমুনা সেতুতে ৯টি বগি লাইনচ্যুত, চাঁদপুরে তেলবাহী ট্যাংক এবং বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যাত্রী হতাহতের ঘটনা উল্লেখ্যযোগ্য।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি দুর্ঘটনার পরপরই রেলপথ মন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশে গুরুত্বসহকারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এবং কমিটির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ দেয়া হলেও এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় খুব কমই বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে একসময়ে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা রেলযাত্রা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে সাধারণ যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এ দিকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক ও যুগোপযোগী যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী ২০ বছর মেয়াদি একটি মাস্টারপ্লান তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এই প্লানের আওতায় ৪৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসবের বেশির ভাগ প্রকল্পে মনিটরিং না থাকায় নানা কৌশলে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো সেক্টরে লুটপাট হচ্ছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থানে ট্রেনটির ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঝড়ে কখনো ট্রেন পড়ে যায় এমনটি শুনিনি। তার পরও ওই ট্রেনের বগিগুলো যদি দক্ষিণে কাত না হয়ে উত্তরে কাত হয়ে পড়ত তাহলে ৯টি বগিই পানিতে পড়ে যেত। তখন ৯ বগির সহস্রাধিক যাত্রীর হতাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

ট্রেনের চালক জমির উদ্দিন জানান, সেতুতে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার চালানোর কথা। কিন্তু ওই সময় ১০ কিলোতে চলছিল। ট্রেনের গতি কম থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে লালমনি এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন। জানা গেছে, ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ৩টা ১০ মিনিটে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। ১০ মিনিট পর বিপরীতে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২ নম্বর লাইন দিয়ে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সরাসরি এক নম্বর লাইনে ঢুকে পড়ে। এতে এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে এটির সংঘর্ষ হয়। এতে একতা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের পেছনের বগিটি ইঞ্জিনের ওপর উঠে পড়ে। পেছনের দিকের আরো তিনটি বগি ও লালমনি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে একতা এক্সপ্রেসের দুই যাত্রী বগিতে চাপা পড়ে মারা যান।

উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের লাইনম্যান আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, লালমনি ট্রেনটি থামার পর লাল বাতি সিগন্যাল দেয়া ছিল। এই সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও একতার চালক ট্রেনটি চালিয়ে যান। ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আখাউড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ৩০ অক্টোবর আখাউড়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হলে দুইজন ঘটনাস্থলে নিহত ও ৩০ জন আহত হন। এভাবে গত ছয় মাসে দেশের বেশির ভাগ স্থানে শতাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রেলভবন সূত্রে জানা যায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত তিন বছরে পূর্বাঞ্চল রেল ক্রসিংয়ে তিন শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হন।

এদিকে দিনকে দিন চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের ঢিল ছোড়া, ছিনতাই, চুরি ডাকাতি বেড়েই চলেছে। গত ৮ মার্চ তারাকান্দা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর অগ্নিবীণা ট্রেনে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ১৯ এপ্রিল কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের যাত্রীরা ভোগান্তি নিয়ে তিন ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছান।

সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসলে ট্রেন দুর্ঘটনা বাড়েনি; বরং দিন দিন কমে আসছে। আমরা এটিকে আরো কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যমুনা সেতুর দুর্ঘটনা হিউম্যান ফেইলুর নয়, মেকানিক্যাল ফেইলুরও নয়। বাতাসের কারণে বগি লাইনচ্যুত হয়ে থাকতে পারে। দুর্ঘটনা কমাতে লাইন (ট্রাক) পুনর্বাসনের কাজ চলছে। তবে এগুলোর জন্য সময় দরকার। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ট্রেনে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি অনেক কমে গেছে। আমার জানা মতে, গত ছয় মাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।


(ওএস/এটি/এপ্রিল ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test