E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে প্রাণঘাতী পার্থেনিয়ামের ভয়ংকর বিস্তার

২০২৩ আগস্ট ৩১ ১৮:১২:৪২
ঝিনাইদহে প্রাণঘাতী পার্থেনিয়ামের ভয়ংকর বিস্তার

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় প্রাণঘাতী আগাছা পার্থেনিয়ামের ভয়ংকর বিস্তারে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। অজ্ঞ ও সচেতনতার অভাবে গ্রামের মানুষ এই আগাছার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। ফলে গ্রামের সর্বত্রই এখন প্রাঘাতী পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি চোখে পড়ে। রাস্তার দুইধারে ও ফসলের ক্ষেতে সাদা ফুলে পুরে আচ্ছাদিত পার্থেনিয়াম। দেখে মনে হবে সবুজের সমারোহ। কিন্তু এই সবুজ প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছে পশু ও মানবদেহের জন্য বিষাক্ত উপাদান। ঝিনাইদহ অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে এই আগাছার বিস্তার দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের অভাবে ভয়ংকর এই আগাছার বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গড়ে উঠেনি। 

ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলের বাজারগোপালপুর, চোরকোল, গোবিন্দুপর, মোহাম্মদপুর, বংকিরা ও আসাননগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার দু-ধারে, ধানক্ষেত, মরিচ ক্ষেত, পুকুরের পাড় ও ক্ষেতের আইলে পার্থেনিয়ামের আগাছা। বিষাক্ত এই গাছ থেকে গরু, ছাগল, শেয়ালম, কুকুর ও মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ চড়িয়ে পড়েছে। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ঝাও ফুল আবার ‘গাঁজার গাছ’ বলেও চেনেন। গাছগুলি সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়। ছোট ছোট ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। অথচ বিষাক্ত এই গাছ সম্পর্কে কৃষকদের নুণ্যতম কোন ধারণা নেই।

কৃষিবিদরা বলছেন, পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ জাতীয় গাছ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এটি বাঁচতে সক্ষম। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেত কিংবা রাস্তার দুধারে এ আগাছাটি বেশি জন্মে। বেঁচে থাকতে তাদের কোন যত্ন প্রয়োজন হয় না। পার্থেনিয়াম উপমহাদেশীয় অঞ্চলের নিজস্ব কোন উদ্ভিদ নয়। ভারত থেকে দানাদার খাদ্য কিংবা গরু খুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে। বর্তমান বিষাক্ত পার্থেনিয়াম সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে শুধু ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় অন্তত ১০ হেক্টর পতিত জমিতে এই পার্থেনিয়াম বংশ বিস্তার করেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চান্দুয়ালী গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান এই আগাছাটির নাম বা গাছটি ক্ষতিকর কিনা তা আমরা কিছুই জানি না। তবে গ্রামের ক্ষেত খামারে গাছটি চড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দীন সেতু জানান, গাছটি খুবই ক্ষতিকর, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। গাছটির বিষয়ে সরকারের এখন থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বংকিরা গ্রামের বাবুল বিশ্বাস জানান লোকমুখে শুনেছি এই পার্থেনিয়াম গাছটি নাকি খুবই বিষাক্ত এবং ক্যান্সারের জীবাণু বহন করে। কেটে ফেললেও আবার সেখান থেকে নতুন করে জন্ম নেয়।

সাধুহাটী গ্রামের যুবক আব্দুস সালাম জানান, ইউটিউব থেকে জানতে পেরেছি এই গাছটি মানুষ এবং গরু-ছাগলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে বিষাক্ত এই গাছগুলো নিশ্চিহ্ন করতে এখনই পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। বাজার গোপালপুর গ্রামের মনুজর জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই বিষাক্ত পার্থেনিয়াম আগাছা নিধনের জন্য পদক্ষেপ না নিলে এক সময় জেলাব্যাপী এই আগাছা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ নবী বলেন, মানবদেহ এবং গবাদি পশুর জন্য এই উদ্ভিদ খুবই বিপৎজনক। পার্থেনিয়াম গাছে হাজার হাজার ফুল থাকে। যে কারণে পরাগ রেনু যদি বাতাসের মাধ্যমে মানুষ অথবা কোনো প্রাণীর শরীরে পড়ে সেখানে চর্মসহ ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। এই আগাছার বীজ বাসাতের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, এটি শুধু বিষাক্তই নয়, যেকোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। যদি কোনো ক্ষেতে পার্থেনিয়ামের বিস্তার ঘটে তাহলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

(একে/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test