E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বকশীগঞ্জে নদী ভাঙনে ফসলি জমি বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব গ্রামবাসী

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৫:৩৪:১৭
বকশীগঞ্জে নদী ভাঙনে ফসলি জমি বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব গ্রামবাসী

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। বারবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে এসব এলাকার মানুষজন।

জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপত্র নদ ও দশানী নদী। সেই নদ ও নদী বরাবরের মতোই চিরচেনা রূপে ফিরেছে আবার। উপজেলার ১০টি গ্রামে নদ-নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। সম্প্রতি বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নদী ভাঙনের তীব্রতাও।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া, চর আইরমারী, চর কামালের বার্ত্তী, মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা, আউল পাড়া , সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ কুশল নগর ও সাজিমারা গ্রামে নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

এসব পরিবার বারবার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিলাখিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামে নদী ভাঙনের খবর নিতে গেলে দেখা যায়, দশানী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় একটি কাঠের বাগান কেটে ফেলছেন জমির মালিক জিয়াউর রহমান।

তিনি জানান, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের গ্রামে ভাঙন রোধে দুই শ মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলেছে কিন্তু নদীর পানির তীব্র স্রোত ও ভাঙনে ২০ মিটার পর্যন্ত স্থাপিত জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে গেছে। পাশাপাশি দুই শ মিটারের বাইরেও নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামকে বাঁচাতে আরও দুই শ মিটার জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া ও আইরমারী খান পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই দুটি গ্রামের অন্তত ২০ টি পরিবার দশানী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

বাংগাল পাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদী ভাঙনে নিঃস্ব। এই পরিবারের কমপক্ষে ৬ জন বসতভিটা হারিয়ে ঢাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি জানান, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাপ-দাদার ভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, তার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই মানুষ বসতভিটা ও ফসলি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে গ্রামগুলো বিলীন হতে পারে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন রোধে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সিসি ব্লকের একটি প্রকল্প সাবমিট করা হবে। আশাকরি প্রকল্পটি পাশ হলে নদী ভাঙন রোধকল্পে স্থায়ী সমাধান হবে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

(আরআর/এএস/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test