E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাভার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ছিনতাই, অবশেষে গ্রেপ্তার ৪

২০২৩ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৭:৩৫:১৫
সাভার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ছিনতাই, অবশেষে গ্রেপ্তার ৪

তপু ঘোষাল, সাভার : ঢাকা জেলার সাভারে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের টার্গেট করে একের পর এক ছিনতাইয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারী চক্র। ব্যাংকের ভিতর থেকে টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহককে অনুসরণ করত চক্রের এক সদস্য। এরপর তার দেওয়া তথ্যে চক্রটির বাকি সদস্যরা টার্গেট করা ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিতো প্রাইভেটকারে। তারপর নির্যাতনের পর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগীকে ফেলে রেখে যেত সড়কের পাশে। অবশেষ এই ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাইকৃত নগদ টাকা, ডিবি পুলিশের পোশাক, ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা জেলার সাভারের আশুলিয়া থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা এসব তথ্য জানান।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আর দুপুরে আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় উত্তরা ব্যাংকের সামনে মো. ইউসুফ নামে এক গ্রাহককে মারধর করে তার কাছে থাকা ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। গত তিন মাসে সাভার ও আশুলিয়ায় আলাদা দুটি ঘটনায় ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ছিনতাই হয় একই কায়দায়।

গ্রেপ্তাররা হলেন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার মাসুদ করিম (৫০), একই এলাকার রবিউল করিম সুলভ (৩০), পাবনার চাটমোহর থানার আব্দুল খালেক (৩৪) ও নাছির উদ্দিন (২৯)।

বলিভদ্র এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার পরিবহন কোম্পানির ম্যানেজার মো. ইউসুফ বলেন, ‘দুপুরে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াই। এ সময় সাদা রঙের প্রাইভেটকার এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। তারা ডিবি পুলিশের কটি, হাতে ওয়ারলেস, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল নিয়ে এসেছিল। তারা জোর করে আমাকে গাড়িতে ওঠাতে চায়। কিন্তু আমি গাড়িতে না ওঠায় আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়। এক পর্যায়ে আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায় তারা। আমি দ্রুত আশুলিয়া থানায় এসে বিষয়টি জানালে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। থানা পুলিশ আশুলিয়া বাজার এলাকায় ট্রাফিক পুলিশকে জানালে তারা চারাবাগ এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় চার ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। তবে আমার ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা এখনও পাইনি।’

পুলিশের দেওয়া তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়ার নবীনগর সোনালী ব্যাংকে ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন মাদ্রাসা শিক্ষক হাবিবুর রহমান। এ সময় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য শাহিন ব্যাগ কাঁধে ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে তাকে অনুসরণ করছিল। মূলত শাহিন ছিনতাইকারী দলের সোর্স হিসেবে কাজ করে। হাবিবুর টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে নবীনগর এলাকা থেকে বাসে উঠেন সাভারের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় ব্যাংকে হাবিবুরকে অনুসরণ করা ব্যক্তি একই বাসে দৌঁড়ে উঠছেন।

পুলিশ আরও জানায়, বাস থেকে সাভার স্ট্যান্ডে নেমে অটোরিকশা যোগে রাজাশন আইচা নোয়াদ্দা এলাকার নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হয় হাবিবুর। এ সময় শাখা সড়কে সাদা রঙের প্রাইভেটকার অটোরিকশার গতিরোধ করে। পরে প্রাইভেটকার থেকে ডিবি পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই ব্যক্তি তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে নির্যাতন চালাতে থাকে প্রাইভেটকারে থাকা চারজন। পরে তার কাছে থাকা ৯ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর এলাকায় ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান সাভার মডেল থানায় মামলা করেন।

একই কায়দায় গত ২২ জুন আশুলিয়ার ডেন্ডাবর কবরস্থান রোড থেকে রোস্তম আলীকে প্রাইভেটকারে তুলে নির্যাতন চালায় ছিনতাইকারীরা। পরে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা তার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ধামরাইয়ের বাথুলি এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানায় গিয়ে আটক চার ছিনতাইকারীকে সনাক্ত করেছেন সাভারের বাসিন্দা ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান। তিন মাস আগে আশুলিয়ার কবরস্থান রোড এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার রোস্তম আলীও তার ঘটনায় এই ছিনতাইকারীদের সনাক্ত করেন।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) জামাল সিকদার জানান, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছে থেকে ছিনতাইকৃত ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, ওয়াকিটকি, ডিবি পুলিশের পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীরা সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও চন্দ্রা এলাকায় ছিনতাই সংঘটিত করার কথা স্বীকার করেছে। তারা মূলত ব্যাংক থেকে বেশি টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের টার্গেট করে তাকে অনুসরণ করে ছিনতাই করে। এ জন্য ব্যাংকে তাদের একজন সোর্স হিসেবে কাজ করে। আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test