E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুইবার ধর্ষণের পর হত্যা করে সৎ পিতা

যশোরে অজ্ঞাত কিশোরী হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ

২০২৩ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৮:৫০:৪৮
যশোরে অজ্ঞাত কিশোরী হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোরে রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। সৎ পিতা দুই বার ধর্ষণের পর চলন্ত ট্রেন থেকে শ্বাসরোধ করে ওই কিশোরীকে হত্যা করে। পরে চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। ধর্ষণের কথা গোপন রাখতেই পরিকল্পিতভাবে সৎ পিতা এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই কিশোরীকে হত্যার মামলায় আসামি সৎ পিতা মিন্টু সরদারকে (৩৯) গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। ওই কিশোরীর নাম আঁখি খাতুন (১৪)। তার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের দড়িয়াপুর গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সকালে যশোর সদরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাত এক কিশোরীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার মুখমন্ডল রক্তাক্ত ছিল। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই কিশোরীর ছবি ছড়িয়ে পড়লে তার পরিচয় শনাক্তের জন্য সকলে সহযোগিতা করে। ফেসবুকে ছবি দেখে মহেশপুর থেকে এক ব্যক্তি নিহতকে শনাক্ত করতে পারেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কিশোরীর পরিচয় পাওয়ার পরে সন্ধেহভাজন হিসাবে তার সৎ বাবা মিন্টুকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।

মিন্টু পুলিশকে জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সৎ মেয়ে আঁখিকে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রভোলন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। মেলায় ঘুরাঘুরি শেষে রবিবার যশোর শহরের রেলস্টেশন এলাকার বৈকারী হোটেলের একটি কক্ষে উঠেন। সেখানে আঁখির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে প্রথমবার ধর্ষণ করে সৎ বাবা মিন্টু। পরের দিন রাতে ট্রেন যোগে বাড়ী ফেরার সময় যশোর রেল স্টেশনের ঝোপজাড়ের মধ্যে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে। এদিন রাত ১১ টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেস যোগে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চলন্ত ট্রেনে গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মিন্টু। এর পর তিনি বাড়িতে এসে তরুণীর দুই পায়ের একজোড়া নুপুর একটি সিগারেটের প্যাকেট ভর্তি করে তার বসতঘরের পাশে আবর্জনার মধ্যে পুতে রাখে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, আঁখির মা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে সাতক্ষীরাতে বিয়ে হয়েছিলো। সেই দম্পতির সন্তান আঁখি। পরবর্তীতে সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে করেন নুরজাহান। এর আগে মিন্টুও দুই বিয়ে হয়েছিলো। এর মধ্যে এক স্ত্রী মিন্টুকে ছেড়ে চলে যায়; অন্যটি মারা যায়। মিন্টু ও নুরজাহানের সংসারে একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। এই ঘটনায় আঁখির মা নুরজাহান বেগম বাদি হয়ে খুলনা রেলওয়ে থানাতে মামলা করবেন। মিন্টু দিনমজুরের কাজ করে।

এদিকে, অভিযুক্ত আসামি মিন্টুকে সংবাদ সম্মেলনে আনা হলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনুতপ্ত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে বড় ভুল করেছি। আমার মেয়েকে মেলাতে ঘুরানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছি। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুইবার ধর্ষণ করেছি। এমন ভুল জীবনে আর করবো না। আমার মতো এই ভুল যাতে কেউ না করে। এই কথা ভাবতে গেলে আমি কিছু খেতেও পারছি না। কিভাবে কি করে ফেললাম ভাবতে পারছি না। মারার সময় মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-১ ডিএসবি) মামুন খান, জেলা ডিবি (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ডিবি পুলিশের এস আই মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।

(এসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test