E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগরে বালুখেকোদের রাজত্ব

নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে চরম ভাঙন আতংক

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২০ ১৯:০২:৫২
নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে চরম ভাঙন আতংক

বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের কেদারখোলা মৌজায় মেঘনা নদীতে সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ইজারাদারের লোকজন নদী থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদারের লোকজন সরকারের শর্ত না মেনে ও সীমানা লংঘন করে অন্যত্র গিয়ে নিয়মবর্হিভূতভাবে দিনে ও রাতে এসব বালু উত্তোলন করছে।

ফলে এর প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে এলাকাবসির অভিযোগ।

লোকজন জানান, উদ্ভুত এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বীরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. সালেক আহমেদ পরিস্থিতি সরজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে উল্টো ইজারাদারের লোকজনের পক্ষ নেওয়ায়, স্থানীয় জনতার হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে ওই তহশিলদার বীরগাঁওয়ের সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমেদনহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় 'সরকারি কাজে বাঁধা দেয়া'র অভিযোগ এনে একটি মামলাও করেন। খবর পেয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রুহুল আমীন ও নবীনগরের ইউএনও পরদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম এ মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর ভৈরব নৌ পথের মেঘনা নদীতে কেদারখোলা মৌজার ২০ একর জায়গা থেকে গত ৯ জুলাই ড্রেজারের মাধ্যমে বৈধভাবে বালু তোলার (বালুমহাল) সরকারি অনুমতি পায় মো. বরকত উল্লাহর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহানারা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স।

কিন্তু এলাকাবাসির অভিযোগ, সরকারি নিয়ম ও শর্ত অনুযায়ি সর্বোচ্চ ১০টি খনন যন্ত্রের (ড্রেজার) মাধ্যমে নির্ধারিত কেদারখোলা মৌজা এলাকায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও, সেই নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ইজারাদারের লোকজন ১৫/১৬ টি খননযন্ত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে দাসকান্দি ও বীরগাঁও নামে আরও দুটি মৌজা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু তুলছে ইজারাদারের লোকজন। শুধু তাই নয়, সূর্যাস্তের পর বালু তোলা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও, ১৫/২০ টি খনন যন্ত্র (ড্রেজার) প্রচন্ড শব্দে চালিয়ে সারারাত বালু তোলা হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসি।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ইজারাদারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা জোটবদ্ধ থাকায়, লিখিত অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা এলাকাবাসি।

এ অবস্থায় বালু তোলার প্রতিকার চেয়ে এলাকার সাবেক মেম্বার শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত একটি আবেদন করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে শফিকুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি।

তবে এ বিষয়ে বীরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমেদ বলেন, 'সরকারিভাবে শুধু কেদারখোলা মৌজায় বালু তোলার ইজারা পেলেও, ইজারাদারের লোকজন সরকারি নিয়ম নীতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এবং নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে আরও দুটি বড় বড় মৌজা থেকে দিনে রাতে প্রতিদিন সমানতালে লাখ লাখ টাকার নদী থেকে বালু তুলছে। ফলে এলাকার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।'

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ টাকার অধিক বালু উত্তোলনের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী রাঘব বোয়াল জড়িত রয়েছে। তাই এসব অবৈধ কাজে এলাকাবাসি বাঁধা দেওয়ায়, এখন আমিসহ অনেকেই তহশিলদারের হাস্যকর একটি মিথ্যা মামলায় আসামি হয়েছি।'

এ বিষয়ে মূল ইজারাদার বরকত উল্লাহ সাগরের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও, তিনি কল রিসিভ করেন নি। তবে বীরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন নিজেকে ইজারাদারের 'পার্টনার' দাবী করে বলেন, 'এক বছর মেয়াদে প্রায় তিন কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা দিয়ে বালু মহালটি ইজারা আনা হয়েছে। আমরা সরকারের সব শর্ত মেনে ও সম্পূর্ণ নিয়মনীতি মেনেই নির্ধারিত সীমানা থেকে বালু উত্তোলন আমরা করছি। মূলত: বিগত দিনে এই ব্যবসায় যারা জড়িত ছিলেন, এবার তারা যুক্ত হতে পারেন নি বলেই, এসব মিথ্যে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।'

এ বিষয়ে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ফরহাদ তানভীর আজ বুধবার বলেন, 'উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এডিসি স্যারসহ আমি ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছি। কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে ইজারাদারকে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সূর্যাস্তের পর নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে এবং ১০টি খনন যন্ত্রের বেশী নদীতে পাওয়া গেলে, কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুরো বিষয়টি ডিসি স্যারকেও অবগত করা হয়েছে।'

এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে এলাকাবাসির দাবি, নদী ভাঙনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর হাতিয়ার নদী থেকে এই অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন সহসা বন্ধ করা না হলে, মেঘনা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসি।

(জিডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test