E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যশোরে ৫২ বছর পর 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' প্রতীকী স্মৃতিচারণ

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২২ ২২:৫৩:৪৭
যশোরে ৫২ বছর পর 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' প্রতীকী স্মৃতিচারণ

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পর সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড দেখল যশোরবাসি। শুক্রবার বিকেলে যশোর-বেনাপোল রোডে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের কালজয়ী ইংরেজি কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের আয়েজনে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে পাঁচ শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গসহ যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে সেপ্টেম্বরে কলকাতা হয়ে যশোরে এসেছিলেন মার্কিন সাংবাদিক ও কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। ফিরে গিয়ে লেখেন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড। তার কবিতায় ফুটে ওঠে যশোর রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেওয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র। কবিতার সঙ্গে সুর দিয়ে এটিকে গানে রূপ দিয়েছিলেন তিনি। আমেরিকায় তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যান্য বিখ্যাত গায়কদের সহায়তায় এই গান গেয়ে কনসার্ট করেছিলেন।এভাবেই বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন গিন্সবার্গ। ৫২ বছর পর প্রতীকী পদযাত্রায় সেই ঐতিহাসিক সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড স্মরণ করলো যশোরবাসী। প্রায় ২৫ মিনিটে এক কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন যশোর রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধবিভীষিকা, অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।

৫২ বছর আগের গৌরবোজ্জ্বল প্রতীকী স্মৃতিচারণে একদিকে যেমন অনেকের হৃদয়ে শিহরণ জাগিয়েছে; অন্যদিক আবেগতাড়িত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরা হলো। যশোর রোডের এই প্রতীকী পদযাত্রা শহরতলী পুলেরহাট বাজার থেকে শুরু হয়। প্রায় পাঁচ শতাধিক কলাকৌশলী যশোর রোডে শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র ঘটনার প্রবাহ প্রতীকী উপস্থাপনাতে ফুটিয়ে তোলেন। কাঁধে করে এক বয়স্ক পিতাকে তার ছেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন আশ্রয়ণ শিবিরে। যাওয়ার পথে পাকিস্তানি মিলিটারিদের ভয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেই বৃদ্ধ পিতাকে ফেলে রেখে যান গাছের নিচে। পরবর্তীতে একটি শিয়াল সেই বৃদ্ধের অসাড় দেহটির বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলে। এ সময় বৃদ্ধটি মারা যায়। আবার একমাত্র সন্তানের মরদেহ নিয়ে হেঁটে চলার এমনও দৃশ্য ফুঁটে উঠে। শত শত ক্ষুধার্থ শরণার্থীদের খাবার দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই প্রতীকী পদযাত্রা উপস্থাপনাতে অংশ নিয়েছিলেন অনুসূয়া নামে এক সাংস্কৃতিক কর্মী । তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। বাবা মায়ের মুখে শুনেছি। অভিনয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে শরণার্থীদের যে দুর্দশা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সে এক অসাধারণ সময়ের সাক্ষী হয়ে গেলাম।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার খবর বিশ্ববাসীর কাছে পোঁছে দিয়েছিলেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের চরিত্রায়ন করেছেন যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মী শফিকুল আলম পারভেজ। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন যশোর রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা, অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ রচনা করেছিলেন কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। এটি শুধু একটি কবিতাই নয়, বাঙালির আত্মত্যাগের একটি মূল্যবান উপাখ্যানও। তার সেই চরিত্রটি সেভাবে করতে পারেনি। তবে তার সেই চরিত্র করতে যেয়ে আমি ফিরে গেছিলাম গৌরবজ্জ্বল অতীতে।

এই প্রতীকী পদযাত্রা নির্দেশক কামরুল হাসান রিপন বলেন, পাঁচ শতাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা সেপ্টেম্বর অন যশোর রোডের গৌরবজ্জ্বল প্রতীকী স্মৃতিচারণে অংশ নেয়। এই সড়কের শুরু থেকে শেষ স্থান কৃষ্ণবাটি গ্রাম পর্যন্ত তারা নিজ নিজ চরিত্রে ডুবে ছিলেন।

২০২৩ সালের আজকের এই দিনটা যেন সবাই ফিরে গিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের সেই সেপ্টেম্বর মাসে। যশোর সদর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দুদুল বলেন, ৭১ আমরাও এই সড়ক দিয়ে ওপারে গেছিলাম। সেই দৃশ্য আমাদের চোখে আজও ভেজে উঠে। প্রতীকী যাত্রা আর সুনিপুণ অভিনয়ে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।

পদযাত্রা শেষে স্থানীয় কৃষ্ণবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের এই আয়োজনে নতুন প্রজন্ম তাদের ইতিহাসকে নতুনভাবে জানতে পারলো। প্রতিবছরই এভাবে আমরা সেই ঐতিহাসিক রোডকে স্মরণ করতে চাই। একইসঙ্গে এই রোডকে সংরক্ষণে আমরা পদক্ষেপ নেব।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যশোর রোডের নাম জড়িত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীরা এই যশোর রোড দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবার এই সড়ক দিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়ে ছুটতে থাকে। শরণার্থীদের নিয়ে মার্কিন কবি সড়কটি নিয়ে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামে একটি কবিতাও লিখেছিলেন, যেটি সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ও সড়কটিকে স্মরণ করতে এই আয়োজন।

(এসএমএ/এএস/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test