E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়ায় মধুমতীর রুদ্র রূপ, নিঃস্ব মানুষদের মানবেতর জীবনযাপন 

২০২৩ অক্টোবর ০২ ১৬:১০:২৯
লোহাগড়ায় মধুমতীর রুদ্র রূপ, নিঃস্ব মানুষদের মানবেতর জীবনযাপন 

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া : নড়াইল জেলার লোহাগড়ার উপজেলার মানচিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মধুমতী নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে লোহাগড়ার ভৌগলিক অবস্থান। প্রতি বছর মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভিটেমাটি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব মানুষের হাহাকারে ভারী হচ্ছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। অথচ, রাকুসী মধুমতীর ভাঙ্গনরোধে নেই কোন স্থায়ী পরিকল্পনা। এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। 

লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের মধুমতী নদীর পূ্র্বপাড়ে পার আমডাঙ্গা এবং পশ্চিম পাড়ে লোহাগড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া গ্রাম। এই দুই গ্রামে মাত্র দু'সপ্তাহের ব্যবধানে রুদ্ররুপী মধুমতীর ভয়াল ভাঙ্গনে কমপক্ষে ২০০ টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার। সহায় সম্পদ হারিয়ে নি:স্ব মানুষেরা মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

পার আমডাঙ্গা গ্রামের সবুর খান, নুর আলম মাস্টার, সোহাগ মাস্টার, ও জাহেদা বেগম, রাসেল মোল্যা, রাজীব মুন্সী জানান, আমাদের গ্রামের শতবর্ষের মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ শত শত ঘরবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে আমরা এখন পথে বসেছি। আমরা সরকারি ভাবে কোন সহযোগিতা পাই নাই। এলাকাবাসী সরকারের কাছে ভাঙ্গনরোধে স্হায়ী ব্যবস্হা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনের দাবী জানান।

এলাকাবাসী আরো বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য প্রায় দুই বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমি এমপি থাকি বা না থাকি আপনাদের নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নদীতে বালুভর্তি ব্যাগ ফেললেও তা আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙন কবলিত লোহাগাড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া গ্রামের মাতুব্বর মমিন মোল্ল্যা, জাফর মোল্ল্যা, আমিনুর মোল্ল্যা ও শাহানুর মোল্ল্যা বলেন, 'মধুমতী নদীর করাল গ্রাসে ফি বছর ঘরবাড়ীসহ সহায় সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ, ভাঙনরোধে নেই কোন স্থায়ী উদ্যোগ বা পরিকল্পনা।

ভাঙন তীব্র হলেই জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন, ভাঙনরোধে দেন নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কিছুই হয় না। ভাঙ্গনরোধে তারা স্থায়ী পরিকল্পনার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমীন খন্দকার বলেন, ' ছাগলছেড়া গ্রামের উত্তর অংশে মধুমতী নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের দাবী জানান।

কথা হয় লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের সাথে। তিনি জানান, গত বছর নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৮২ জনকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তিনি ভাঙ্গনরোধে স্হায়ী পরিকল্পনার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন জানান, ২০২০/২১ অর্থ বছরে নদী ভাঙন রোধে ৭০ লক্ষ টাকা ব্যায় করা হয়। কিন্তু সেটিও এখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ওই এলাকার ভাঙ্গনের বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পুনরায় নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হবে।

এ ব্যাপারে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো: আসফাকুল হক চৌধুরী নদী ভাঙ্গনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে পূনর্বাসনের ব্যাবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ০২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test