E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ! সন্তান বিক্রির টাকা লোপাট

২০২৩ অক্টোবর ২৫ ২২:২৭:০৮
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ! সন্তান বিক্রির টাকা লোপাট

যশোর প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় ভারতের জেলে ২ বছর ধরে বন্দী এক ব্যাক্তির স্ত্রীর অবৈধ সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সন্তান জন্ম ও বিক্রির একমাস পর গত ২৪অক্টোবর (মঙ্গলবার) ওই নারীকে গ্রামের এক যুবকের সাথে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে জোর পূর্বক বিয়ে দেওয়া এবং সন্তান বিক্রির টাকা চৌগাছা থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার নামে নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য, গ্রামের পুলিশের সোর্স ও সন্তান ক্রয়কারীর বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দুলিয়া গ্রামে।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) স্বরেজমিনে উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের আবু সাঈদের বাড়িতে গেলে তিনি নববিবাহিতা স্ত্রীকে পাশে বাসিয়ে বলেন, "গ্রামের এক ব্যক্তির (ভারতের জেলে ২ বছর ধরে বন্দি) স্ত্রী সোনিয়ার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোনিয়ার সাথে গ্রামের মেম্বার মহিদুলসহ আরও কয়েকজনের সম্পর্ক ছিলো। সোনিয়ার পেটে সন্তান আসার ৪-৫মাস পরে তার শশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতে পারলে সোনিয়া পুড়াপাড়া বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠে। সে আমাকে ফোন করে বলে আমার পেটে বাবু। এই বাবুর বাবা তুমি। এদিকে আমার জন্য পরিবার মেয়ে দেখতে শুরু করে। পরে গত একমাস আগে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোনিয়ার একটি মেয়ে সন্তান জন্ম হয়। সেখানে সন্তানের বাবা হিসেবে আমার পরিচয় ব্যবহার করা হয়। এসব কিছুতে মধ্যস্থতা করে গ্রামের রকি নামে পুলিশের এক সোর্স এবং স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের মুকুল হোসেন। পরে বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে মুকুলের বাড়িতে ছয়দিন থাকে সোনিয়া। এরপর রকির মধ্যস্থতায় নিঃসন্তান মুকুল ছয়দিনের মেয়েকে ৭০ হাজার টাকায় স্টাম্প করে কিনে নেয়। এরপর সোনিয়া ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে নিজের শশুর বাড়িতে যায়। এরপর গ্রামের পুলিশ সোর্স রকি ও চৌগাছা থানার এক উপ-পরিদর্শক আমার বাড়িতে আসে। এ বিষয় নিয়ে থানার মামলা ঠেকাতে এবং উপরের মহলকে দেওয়ার জন্য রকি ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।"

আবু সাঈদ আরও বলেন, 'মঙ্গলবার বাচ্চাটি ক্রয়কারী মুকুল, গ্রামের মেম্বার মহিদুল চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক আশিকসহ চারজন পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। সোনিয়াকে আমার বিয়ে করতে হবে বলে হুমকি দেয় তারা। আমি প্রথমে রাজি না হলে মুকুল আমাকে দুই দফা বেদম মারপিট করে। চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক আশিকও আমাকে লাঠি দিয়ে একটা বাড়ি দেয়। পরে বিয়েতে রাজি হলে একজন কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থানার উপ-পরিদর্শক আশিক আমার বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।'

আবু সাঈদের বাবা জালাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মাঠে কাজ করে সংসার চালাই। আমার একমাত্র ছেলে না হয় অন্যায় করেছে। সে তো বিয়ে করেছে। এরপরও পুলিশ আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি অনেক হাতে পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় রাজি করায়। এরপর গ্রামের একজনের কাছ থেকে ধার করে ১৫ হাজার টাকা মেম্বার মহিদুল ইসলামের কাছে দিয়েছি। আরও দশ হাজার টাকা দিতে হবে।

সোনিয়া বলেন, আমি ফোনে কয়েকজনের সাথে কথা বলতাম। তবে সন্তানটি আবু সাঈদের। তাহলে বিক্রি করে দিলেন কেন প্রশ্নে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তখন তো আমাদের বিয়ে হয়নি। এছাড়া মুকুল জোর করে স্টাম্প করে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিয়ে করতে রাজি হওয়ার পরও পুলিশ আমাকে ও আবু সাঈদকে বাড়ি থেকে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে যায়। বলে, ধর্ষণ মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসাবে। পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমার শশুর (জালাল উদ্দিন)-শাশুড়িসহ পুলিশ ও মেম্বারের হাতে-পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় মিমাংসা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গ্রামের ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সাংবাদিক যাওয়ার সংবাদ শুনেই শিশু মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় নারী পাচারকারী, মাদক, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামী ও শিশুটিকে ক্রয়কারী মুুকুল হোসেন।

তবে মুকুলের পিতা আব্দুল মান্নান খা বলেন, তার ছেলে নিঃসন্তান। সন্তান তার আর হবেনা। তাই ৭০ হাজার টাকায় তার ছেলে মেয়েটিকে কিনেছেন। তিনি নিজেও মেয়েটির মা এবং বাবা পরিচয়দানকারী দুজনকে ১হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ওরা সন্তান ফেরত নিতে চাইলে আমরা ফেরত দিয়ে দেব।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসএমএ/এএস/অক্টোবর ২৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test