E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাজীপুরের সিয়াম হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামী আরাফাত গ্রেফতার

২০২৩ অক্টোবর ২৬ ১৮:৩৯:১৯
গাজীপুরের সিয়াম হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামী আরাফাত গ্রেফতার

ইন্দ্রজিৎ সাহা, কালিয়াকৈর : গাজীপুর জিএমপি, সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় সিয়াম(২০) কে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দীর্ঘদিনের পলাতক অন্যতম প্রধান আসামী আরাফাতকে লক্ষীপুর জেলার মান্দারীবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-১১।

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও র‍্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো কুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা ঘটনার দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে র‍্যাব সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ঘটনাসূত্রে জানা যায় যে, গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় জিএমপি, গাজীপুর সদর থানাধীন ছায়াবিধী সাকিনস্থ ফণিরটেক এলাকার নিরিবিলি মাঠের পূর্ব পাশে ধানক্ষেতের কাছে ১৯/২০ বছর বয়সের ০১ টি যুবক ছেলের হাতা-পা, গলা-মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা এবং সারা শরীর ডুরি, ছেন দিয়ে কোঁপানো অজ্ঞাত একটা লাশ উদ্ধার করে জিএমপি, সদর থানা পুলিশ। উক্ত লাশ জিএমপি, গাজীপুর সদর থানাধীন ছোট দেওড়া সাকিনস্থ মোঃ সফিকুল ইসলাম (৬৪) এর ছোট ছেলে সিয়াম(২০) বলে শনাক্ত করা হয়। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে এবং ভিকটিমের পিতা মোঃ সফিকুল ইসলাম(৬৪) জিএমপি, সদর থানার মামলা নং-৩৯, তাং-২৮/০৪/২০১৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে জিএমপি, সদর থানার পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের সহিত জড়িত ০৬ জন আসামী গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে আসামী অপশ সরকার জয় এবং সাক্ষী সেতু (ছদ্মনাম) বিজ্ঞ আদালতে এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আরাফাত (২২) কে উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামী গ্রেফতারের জন্য র‍্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আসামী মোঃ আরাফাত (২২) গ্রেফতারের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায়ঃ গত ২৫-১০-২৩ইং ১৭:২০ ঘটিকার সময় র‍্যাব-১, সিপিএসসি গাজীপুর এর আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে, সূত্রোক্ত মামলার প্রধান আসামী মোঃ আরাফাত (২২), পিতা-মোঃ মইনউদ্দিন, মাতা-খতিজা বেগম, সাং-দক্ষিণ হোয়াবিধী, থানা-সদর, জিএমপি বর্তমানে লক্ষীপুর জেলার মান্দারীবাজার এলাকায় আত্নগোপনে আছে। উক্ত সংবাদের ভিতিত্তে র‍্যাব-১, সিপিএসসি, কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ ইয়াসির আরাফাত হোসেন, বিপিএম (সেবা), পদাতিক এবং র‍্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার এ.কে.এম. মনিরুল আলম এর নেতৃত্বে লক্ষীপুর জেলার মান্দারীবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় আসামী মোঃ আরাফাত (২২) কে. ২৫ অক্টোবর ২০২৩খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ২০.৩০ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং তাহার দখল হতে ০১ টি টাচমুক্ত Redmi মোবাইল ফোন এবং নগন ৬০০/-টাকা উদ্ধার করা হয়। র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মোঃ আরাফাত (২২) এই হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত মর্মে স্বীকার করে এবং ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সেতু (ছদ্মনাম) নামে একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো । ঘটনার ০৫ দিন আগে সেতু(ছদ্মনাম) এর আত্মীয়ের বাড়ী জিএমপি, সদর থানাধীন ছোট দেওড়া এলাকায় তার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে গেলে ভিকটিম সিয়াম (২০) এর সাথে পরিচয় পূর্বক ফেইসবুক আইডি নেওয়া-নেওয়া হয় এবং তাদের মাঝে ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বন্ধুসুলভ চ্যাট হয়। অন্যদিকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আসামী আরাফাত (২২) তার প্রেমিকা সেতুর ফেইসবুক আইডি তার নিজ মোবাইলে লগ-ইন করে রাখে। এতে করে প্রেমিকা সেতু(ছদ্মনাম) ম্যাসেঞ্জার আইডি দ্বারা ভিকটিম সিয়াম (২০) এর সাথে তাদের যে কথোপকথন বা চ্যাট করতো তার বিস্তারিত আরাফাত (২২) এর নিজের মোবাইলে দেখতে পেতো। এভাবে নিহত সিয়াম (২০) এর সাথে সেতু (ছদ্মনাম) এর চ্যাট দেখতে দেখতে একসময় আসামী আরাফাত (২২) এর ভিকটিম সিয়াম (২২) এর উপর চরম ক্ষোভ / আক্রোশ জমতে থাকে এবং ভিকটিম সিয়ামকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬/০৪/২০১৩ ইং তারিখে রাত্রী আনুমানিক ১৯.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম সিয়ামকে কৌশলে তথা আরাফাত এর মোবাইল লগইন থাকা তার প্রেমিকা সেতু (ছদ্মনাম) এর ম্যাসেঞ্জারে আইডি থেকে আসামী মোঃ আরাফাত (২২) নিজেই তার পরিচয় গোপন করে সেতু (ছদ্মনাম) সেজে ভিকটিম সিয়াম এর সাথে চ্যাট করে এবং ঘটনাস্থলে এসে তার সাথে দেখা করতে বলে। সদ্য পরিচয় এবং নিজের ভাললাগা থেকে নিহত সিয়াম (২০) তার নতুন প্রেমিকা সেতু (ছদ্মনাম) দেখার করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে উল্লেখিত ঘটনাস্থলে আসে। পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামী মোঃ আরাফাত (২২) সহ (১০/১৫ জনের একটি ব্যাটে গ্রুপ আরাফাত এর নির্দেশে ভিকটিম এর হাত ও পা বেঁধে এলোপাতাড়ি ধারালো চাপাতি, সুইচ গিয়ার চাকু ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে এবং এমনভাবে কোপ দেয় যাতে তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব না হয়।

পরবর্তীতে নিহত সিয়াম এর মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামীরা যে যার মত চলে যায়। এবং ঘটনার পরের দিন সকালে সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ গেলে সেখানে হত্যাকারীরাও অন্যান্য উৎসুক জনতার সাথে ঘটনাস্থলের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিএমপি, সদর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে।

(আইএস/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test