E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাভারে দুই হিজড়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে খুন হন শাওন

২০২৩ অক্টোবর ২৭ ১৩:৪২:২৮
সাভারে দুই হিজড়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে খুন হন শাওন

তপু ঘোষাল, সাভার : ঢাকা জেলার সাভারের আশুলিয়ায় চম্পা হিজড়ার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতেন রাকিব হাসান শাওন (৩২)। পরে রিপা হিজড়ার সঙ্গে রাকিবের প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কের কথা জানতে পেরে শাওনকে হত্যা করে পালিয়ে যান চম্পা। হত্যাকাণ্ডের আড়াই বছর পর ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের হাতে চম্পা হিজড়া গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। ২০২১ সালে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে শাওনের লাশ উদ্ধার করেছিল আশুলিয়া থানা-পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টবর) দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার।

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর গাইবান্ধা থেকে চম্পা হিজড়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পরে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। গাইবান্ধায় স্বপ্না হিজড়া নামে পালিয়ে ছিলেন চম্পা। তাঁর নাম মূলত মো. নওশাদ মিয়া (৪১)। তিনি জামালপুর সদরের বাসিন্দা।

হত্যার শিকার রাকিব হাসান শাওন বরগুনার বামনা থানার মো. শাহ আলমের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার এনায়েতপুরে বসবাস করে আসছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে লাশ উদ্ধার হলেও মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পায় পিবিআই। পরে পরিবারকে খুঁজে বের করে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রায় ১১ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে বেকার জীবন যাপন করতে থাকেন নওশাদ। তাঁর ১২ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে দেলু হিজড়া নামে একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে চিকিৎসকের সহায়তায় অপারেশন করে মেয়ে হিজড়ায় পরিণত হন নওশাদ। তখন তিনি চম্পা নাম ধারণ করেন। দেলু হিজড়ার অধীনে চার-পাঁচ বছর হিজড়া বেশে জীবন যাপন করেন দেলু। পরে আশুলিয়ার এনায়েতপুরে বসবাস শুরু করেন।

আশুলিয়ায় এসে শাওনের সঙ্গে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী সেজে বাসা ভাড়া নেন। চম্পা আয় করে শাওনের যাবতীয় খরচ বহন করতে থাকেন। ২০২১ সালের ১ জুন শাওনের মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে চম্পা জানতে পারেন শাওনের সঙ্গে রিপা নামে আরেক হিজড়ার প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শাওনকে হত্যা করেন চম্পা। পাঁচ দিন ঘরের ভেতর শাওনের লাশ রেখে সুযোগ বুঝে রাতে বাসার পাশে একটি ঝোপে বস্তাবন্দী লাশ রেখে পালিয়ে যান চম্পা। ৮ জুন অজ্ঞাতপরিচয় লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।

তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই জানতে পারে, যে স্থানে লাশ পাওয়া গেছে তার পাশের বাড়ির নিচতলার এক তৃতীয় লিঙ্গের ভাড়াটিয়া বাবার অসুস্থতার কথা বলে গ্রামের বাড়ি গেছে। এরপর আর ফিরে আসেননি। সন্দেহ হলে সেই ভাড়াটিয়ার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর বাবা-মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সেই সূত্র ধরে নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়াকে খুঁজতে শুরু করে পিবিআই। পরে তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই জানতে পারে, চম্পা হিজড়া নতুন নাম স্বপ্না হিজড়া ধারণ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হিজড়াদের সঙ্গে বসবাস করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, চম্পা প্রথমে পালিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। পরে ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। গোপন সূত্রে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গাইবান্ধায় তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারের পর তিনি সব স্বীকার করেন ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যে পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে চম্পা হিজড়া হয়েছেন, তাঁকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চম্পা হিজড়া যার মাধ্যমে হিজড়া হয়েছেন, সেই দেলু হিজড়া মূলত একজন পুরুষ। তিনি কোনো সার্জিক্যাল পরিবর্তন করেননি। তবু তিনি মেয়ে সেজে অন্য হিজড়াদের সঙ্গেই থাকতেন। তারও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।

(টিজি/এএস/অক্টোবর ২৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test