E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জৈন্তাপুর থানার ওসির নামে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে চাঁদা তোলার অভিযোগ

২০২৩ অক্টোবর ২৭ ১৮:২৭:১১
জৈন্তাপুর থানার ওসির নামে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে চাঁদা তোলার অভিযোগ

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেট সীমান্তের সবচেয়ে বেশি চোরাচালান ঢুকে সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর থানা দিয়ে। অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ওই থানার ওসি মোঃ তাজুল ইসলামের নামে চাঁদা তোলে কিছু লাইনম্যান। স্থানীয় চোরাকারবারিরা যাকে বলে লাইনের টাকা। টাকা দিলে চোরাকারবারিদের লাইন ক্লিয়ার না দিলে আটক, এমনিভাবে দিন-রাত চলে সিলেট সীমান্তের চোরাচালান, চাঁদাবাজির নাটক। যে নাটকে রাজস্ব হারায় রাষ্ট্র, পকেট ভরে কিছু দায়িত্বে থাকা চাঁদাবাজদের।

আনন্দ বাজার থেকে শেওলা খালের মূখ পর্যন্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন স্থানীয় শিল্পপতি মকবুল মিয়া। তিনি নাকি জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ তাজুল ইসলাম থেকে লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন, এমনটিই স্ব গর্বে জানিয়েছেন বালু তোলার কাজে নিয়োজিত মকবুলের লোকজন।

গত ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শেওলা খালের মুখে বালু উত্তোলন করতে গেলে বুধিগাও এলাকার লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। অল্পের জন্য কোন বড় ধরনের মারামারির ঘটনা ওইদিন ঘটেনি। স্থানীয় লোকজন দাবি করেছে, লিজ দিলে জৈন্তাপুর থানার পুলিশ বসিয়ে রেখে মুকবুল মিয়া বালু উত্তোলণ করবেন। কারণ তিনি নাকি ওসি থেকে লিজ নিয়েছেন। মুকবুল মিয়াকে ওসি নদী লিজ দিয়েছেন এমন খবরও এলাকার সবার মূখে মূখে শোনা যাচ্ছে এখন। বুধিগাও এলাকার লোকজন বারবার বলছে আগে পুলিশ নিয়ে আসুন, পরে বালু তুলুন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। বিষয়টি এখনো কোন সমাধান হয়নি। বালু উত্তোলণ নিয়ে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে অন্যান্য বালুর নৌকার ক্ষেত্রে নৌকা প্রতি পাঁচশত টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে পুলিশের নামে চাঁদা তোনেন মুজিব ও শিমুল নামের দুই লাইনম্যান। মুজিব নৌকার মালিকদের নিয়ে জৈন্তাপুর থানার চত্ত্বরে বসিয়ে রেখে মুস্তাফিজ নামে থানার এক উপ-পরিদর্শকের মাধ্যমে ওসির সাথে দেনদরবার করে এই টাকা ঠিক করে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে এক বালু ব্যবসায়ী। তিনি জানান, 'আমরা চারশত টাকা করে নিতে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু মুস্তাফিজ স্যার বলে, ওসি স্যার পাঁচশত টাকার নীচে মানবেন না।'

অন্যদিকে জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাতে ১২'শ থেকে ১৩'শ গরু-মহিষ ঢুকায় চোরাকারবারিরা। লোকমুখে প্রচার আছে প্রতিটি বড় মহিষ ও গরু জৈন্তাপুর থানার সীমানায় প্রবেশ করলেই বর্তমান ওসি তাজুলকে দিতে হয় এক হাজার টাকা আর ছোটগুলোর জন্য গুনতে হয় পাঁচশত টাকা করে। এই টাকা তোলার দায়িত্বে থাকেন একজন লাইনম্যান। এমনি যেদিন ওসি লাইন দেন সেদিন বাজারে ঢুকে হাজার হাজার গরু-মহিষ, জৈন্তাপুর বাজার থাকে সারারাত সরগরম। আর যেদিন ওসি লাইন না দেন, সেদিন বাজারে ঢুকে না কোন কিছুই। সেই সাথে বাজারেও নেমে আসে পিনপতন নিরবতা।

প্রতিটি আইটেমের জন্য ওসি সাহেবের রয়েছে আলাদা আলাদা লাইনম্যান যেমন গরু মহিষের দায়িত্বে আছেন জনৈক রহিম, অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়িত্বে আছেন জনৈক শিমুল ও মুজিব এবং চিনি-চাপাতা,কসমেটিক লাইন চালান অবস্থায় পরিপেক্ষিতে ওসি নিয়োজিত একাধিক লোক।

উক্ত অভিযোগের বিষয় নিয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি মোঃ তাজুল ইসলাম দৈনিক বাংলা ৭১ কে জানান, 'আমার বিরুদ্ধে আনিতো এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।' এক প্রশ্নের জবাবে ওসি তাজুল আরো জানান, 'আমার দায়িত্ব আইন শৃংখলার কাজ করা লিজ দেয়া নয়।' তিনি আরো জানান, 'আমার নামে কেউ টাকা তুললে তাকে আপনারা কারো মাধ্যমে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসেন, আমি ব্যবস্থা নিবো।'

এদিকে, গত ১৩ অক্টোবর শুক্রবার ভোর ৪ টা ৩০ মিটিটের দিকে সিলেট সিআইডির পরিদর্শক (ওসি) আব্দুল আওয়াল-এর নেতৃত্বে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় মাদক ও চোরাচালান রোধে অভিযান চলে। এসময় সিলেট সিআইডির কর্তব্যরত পুলিশের উপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনাস্থল থেকে একটি ভারতীয় চা পাতা ভর্তি একটি ডিআই পিকআপ গাড়িসহ আজগর আলী (৩৫) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। এই বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে যা দেখভাল করছে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। কিন্তু স্পর্শকাতর এই মামলাটি ব্যাপারে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতারে নেই দৃশ্যমান কোন তৎপরতাও। যদিও স্থানীয় একটি বাজারে ওই মামলা দুটির একাধিক আসামীর সাথে পৃথক পৃথকভাবে মিটিং করতে দেখে গেছে ওসি তাজুলকে। এবিষয়ে তিনি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে ছাড়া অন্য কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, পুলিশ পরিদর্শক মোঃ তাজুল ইসলাম সিলেট জেলায় যোগদানের পর প্রথম পোষ্টিং পান সীমান্তবর্তী কানাইঘাট থানার ওসি হিসাবে। সেখানে ২ বছর অতিক্রম করার পর তার বদলী হয় সিলেটের অপেক্ষাকৃত দূর্বল থানা বিয়ানীবাজারের ওসি হিসাবে। কিন্তু সেখানে তিনি নিজেকে বেমানান মনে হওয়ায় মাত্র ০৬ মাসের মাথায় তিনি কায়দা করে বাগিয়ে নেন সিলেটের সীমান্তবর্তী ক্রাইমজোন হিসাবে পরিচিত জৈন্তাপুর থানার ওসির চেয়ার। যেখানে এখন তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন বলে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test