E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিলেট সীমান্তের হালচাল

বেশিরভাগ ডিআই মিনি ট্রাকের নম্বর প্লেট নেই, নীরব ট্রাফিক পুলিশ

২০২৩ অক্টোবর ২৮ ১৮:২৬:৫৫
বেশিরভাগ ডিআই মিনি ট্রাকের নম্বর প্লেট নেই, নীরব ট্রাফিক পুলিশ

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেট সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাজারে শত শত ডিআই মিনি ট্রাকের নম্বর প্লেট লাগানো নেই। রহস্যজনক কারণে নীরব সিলেট জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। দুঃখজনক হলেও এটাই সিলেট সীমান্তের বাস্তব চিত্র।

এদিকে, সিলেটের হরিপুর থেকে দেদারসে সিলেট শহর হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে সরকারের রাজস্ন চোরাই পথে আশা ভারতীয় শাড়ী, চা-পাতা, চিনি ও কসমেটিকসসহ নানান ভারতীয় পণ্য। যা নিয়ন্ত্রনে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কিংবা শাহ পরান থানাধীন শাহ পরান তদন্ত কেন্দ্রের কোন উদ্যোগ তেমন পরিলক্ষিত হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় জৈন্তাপুর বাজার ও হরিপুর বাজারে দিনের বেলা শত শত ডিআই মিনি ট্রাক অপেক্ষমান থাকে যাদের বেশিরভাগেরই কোন নাম্বার প্লেট লাগানো নেই। কিন্তু এটা দেখভাল করার কোন লোক কি নেই সিলেট জেলা পুলিশেট ট্রাফিক বিভাগে?

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ডিআই মিনি ট্রাকগুলিই রাতের আধারে চোরাচালানের মালামাল লোড করে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। নাম্বার প্লেট না লাগানোর পিছনে যৌক্তিক কারন একটাই- যদি মাল লোড করার সময় কেউ গোপনে গাড়ীর নম্বর সরবরাহ করে ধরিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হলো চোরাকারবারিরা একে অপরের যোগসাজশে তাদের কারবারি করলেও একজন আরেকজনকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না।

গোপন সূত্রে জানা যায়, নম্বর প্লেট ব্যবহার না করার জন্য তারা থানা পুলিশ ও ট্রফিক পুলিশকে একটি নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাক মালিক জানান, 'ট্রাকের ব্যবসায় লাভ নাই ভাই, ছয় টাকা কামাই করতে সাত টাকা খরচ হয়।' -তাহলে এই ব্যবসা না করলেই পারেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, 'সব ঠিকঠাক ছিলো, পুলিশের টাকা দিতে দিতেই আমরা শেষ ভাই।' আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'যতই লেখেন কোন লাভ নাই, কোন কাজ হবেনা।'

যদিও থানা পুলিশ চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। তবে স্থানীয় সাধারণ জনতা মনে করেন নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে সবকিছু। কিন্তু বিড়ালের গায়ে ঘন্টা বাধিবে কে?

সিলেটের সচেতন মহল মনে করেন, জৈন্তাপুর থানা পুলিশ হরিপুর বাজার কিংবা চিকনাগুল বাজরে টহল বসিয়ে ডিআই মিনি ট্রাক, বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক, বিভিন্ন কভার্ড ভ্যানগুলো তল্লাশী চালালে ও শাহ পরান তদন্ত কেন্দ্রের আওতাধীন সুরমা গেইটে তল্লাশী চালালে এবং গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ কানাইঘাট থেকে গোলাপগঞ্জ ঢুকার রাস্তায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করলে শতকরা ৮০ ভাগ মালামাল উদ্ধার করা যেমনি সম্ভব হবে, তেমনি চোরাচালানও অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু তা না করে পুলিশ আর চোরাকারবাীদের গোপন আতাতে চলছে রমরমা চোরাকারবারি বানিজ্য বলেও মনে করেন সিলেটের সাধারণ জনগণ ও সচেতনমহল। তারা সবাই এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তা না হলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাবে।

এসব বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, 'এসব দেখার দায়িত্ব জেলা ট্রাফিক বিভাগের, থানা পুলিশের নয়।'

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ওসব ডিআই ট্রাক বেশির ভাগই পরিপূর্ণ কাগজপত্র নেই। বেশির ভাগ ট্রাকগুলোই বিভিন্ন মামলা খেয়ে বসে আছে। অনেক ট্রাকেরই ইনসুরেন্সের কাগজ নাই।'

ট্রাকগুলোর পিছনে নম্বর প্লেট না লাগানোর প্রসঙ্গে তিনি জানান, 'এসব প্রশ্নের উত্তর ট্রাকের মালিকরা ভালো দিতে পারবেন।'

ওসব ডিআই মিনি ট্রাকগুলোতে চোরাকারবারিরা ব্যরহার করেন কিনা, এবং নম্বর প্লেট দেখার দায়িত্ব আপনাদের কিনা?এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট জেলা ট্রাফিক বিভাগের এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, 'হতে পারে! আর হ্যা! অবশ্যই এটা (নম্বর প্লেট) দেখার দায়িত্ব আমাদেরই। আমি এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবো।'

নম্বর প্লেট না থাকার প্রসঙ্গে সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ জিল্লু মিয়া বলেন, 'আপনি ফোন দিছেন আমি সবাইকে লাগিয়ে নিতে বলবো। কিছুদিন আগে আমি সবাইকে ডেকে বলে দিয়েছি, 'কেউ যেন বুইঙাদের (চোরাকারবারি) ভাড়া না মারেন।'

(আরআই/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test