E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারে কৌশলে চলছে অবৈধ এক্সচেঞ্জ ব্যবসা 

২০২৩ নভেম্বর ১৬ ১৭:২৬:১৬
মৌলভীবাজারে কৌশলে চলছে অবৈধ এক্সচেঞ্জ ব্যবসা 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : প্রবাসী রেমিটেন্সের উর্বর ভুমি পর্যটন সম্ভাবনার মৌলভীবাজার জেলা। ইউরোপ-আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর নানা দেশে বসবাস করছেন এই জনপদের বিপুল সংখ্যক রেমিটেন্স যোদ্ধা। যাদের পাঠানো রেমিটেন্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে দেশের অর্থনীতিতে। মৌলভীবাজার জেলার প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত দেশে আসছেন। সাথে করে নিয়ে আসছেন কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা।

সাধারনত নির্দিষ্ট ব্যাংক ছাড়াও জেলার মধ্যে সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ নামে একটিমাত্র বৈধ এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থাকায় এবং বৈধ একাধিক প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রবাসী গ্রাহক ও তাদের স্বজনরা ঝুঁকছেন অবৈধ পথের দিকে। দীর্ঘ সময়ে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় জেলা শহরসহ জেলার সব উপজেলা জুড়ে নিচ্ছিদ্র নেটওয়ার্ক তৈরি হয় অবৈধ মুদ্রা ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে প্রশাসনের অভিযানের পরও থেমে নেই তারা, ভিন্ন কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে সেনা শাষিত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজার শহরের বেড়ীরপারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় প্রশাসন। ওই ঘটনায় মামলাও হয়। এতে সাময়িক সময়ের জন্য অবৈধ এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা পড়েন বিপাকে। কয়েকমাস বিরতী দিয়ে ফের শুরু হয় এদের তৎপরতা। বর্তমানেও বেশ দাপটের সাথে চলছিলো তাদের ব্যাবসা।

চলতি বছরের শুরুর দিকে শহরের বেড়ীরপার কেন্দ্রিক রয়েল ম্যানশনে নাম সর্বস্ব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি। আর তাতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থানীয় এক এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন অবৈধভাবে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মতো বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে এসব অবৈধ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে। ফলে সরকার হাড়াচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।

গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিন গিয়ে শহরের বেড়ীরপার এলাকার রয়েল ম্যানশন ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নাম সর্বস্ব ব্যবসার আড়ালে গড়ে উঠা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাটার বন্ধ। তবে সূত্র বলছে দোকানের সাটার বন্ধ হলেও ফোনের মাধ্যমে অথবা নিজেদের নিয়োগ করা সোর্সের মাধ্যমে ঠিকই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মামলার ভয়ে পালিয়ে থাকা ব্যবসায়ীরা। দোকানের সাটার বন্ধ হলেও থেমে নেই অবৈধ এক্সচেঞ্জ ব্যবসা। এর বাহিরে রয়েল ম্যানশনে অবস্থিত এফ ইলেক্ট্রনিক্স নামের প্রতিষ্ঠানেও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় হয় বলে গুঞ্জণ রয়েছে। তবে জেলায় বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না থাকায় গ্রাহকরাও অবৈধ ব্যবসায়ীদের ধারস্থ হচ্ছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের তালিকা প্রস্তুত করে চলতি মাসেই তাদের ডাকা হবে। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তাকে দ্বায়িত্ব দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।

এদিকে জেলা শহরে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ এক্সচেঞ্জ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনৈতিক পন্থায় বৈদেশীক মুদ্রা লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সেল রয়েছে যা তদারকি করে বিভাগীয় শাখা। কিন্তু এ জেলা থেকে নাকি ওই রকম তথ্য তাদের কাছে না পৌঁছানোতে অভিযানে যায় না বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট টিম। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছে চক্রটি।

চলতি (নভেম্বর) মাসের প্রথম সাপ্তাহে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল বেরিরপাড় এলাকার রয়েল ম্যানশনে রাতে অভিযান চালায়। ওই অভিযানে অবৈধভাবে বৈদেশীক মুদ্রা লেনদেনের জন্য তিন ব্যবসায়ীকে আটক করে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সুত্রে জানা যায় যতাযত তথ্য উপাথ্যের ভিত্তিতে ওই তিনজন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে তারা আটক করেন। আটককৃতরা হলেন সৈয়দ কেনান আলী (৩৭) প্রো: সায়েক এন্টার প্রাইজ। মোঃ রুমান আলী (৪১) রুমান এন্টার প্রাইজ। মোঃ রনি মিয়া (২৫) রুমান এন্টার প্রাইজ এর কর্মচারী। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাউন্ড, ডলার, রিয়াল, দিরহাম, দিনার,বাথসহ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির বিভিন্ন নোটের বাংলাদেশী নগদ এক লক্ষ একানব্বই হাজার টাকা জব্দ করে। পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। আসামী হলেন সৈয়দ কেনান আলী (৩৭), মোঃ রুমান আলী (৪১), মোঃ রনি মিয়া (২৫) নোবেল তরফদার টিটু (৪২),আব্দুল কাইয়ুম (৩৪), মামুন (৩২), আলম (৪০), জমির মিয়া (৪০) এদের মধ্যে ৩ জন কারাগারে রয়েছেন আর অন্যরা এখনো রয়েছেন পলাতক।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় অবৈধ ওই ব্যবসার বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান অব্যাহত থাকবে।

(একে/এসপি/নভেম্বর ১৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test