E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাছ কেটে জীবিকা

২০২৩ নভেম্বর ১৭ ১৫:৫৯:৫৩
মাছ কেটে জীবিকা

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : প্রাচীরের কোলঘেষে সারি সারি দোকান। ধরালো বটি নিয়ে বসে আছেন নারীরা। পাশে রাখা আছে ছাই আর স মিলের কাঠের গুড়া। ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ কিনে এনে তাদের কাছে দাঁড়াচ্ছেন। হাতে থাকা ব্যাগ ভর্তি মাছ তুলে দিচ্ছেন ওই নারীদের হাতে। মাছগুলো সযত্নে কেটে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। মাছ কেটে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে পারিশ্রমিক। এমন দৃশ্য দেখা যায় ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহরপাড়া সংলগ্ন কাঁচা বাজারে। এই বাজারে অন্তত ৬ জন নারী প্রতিদিন মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আয়ও তাদের ভালো।

উপ-শহরপাড়ার মুনজুরা খাতুন আগে বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। প্রতি মাসে তার যে আয় হতো তা দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শহরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি একটি ধারালো বটি কিনে উপ-শহরপাড়ার কাঁচা বাজারে বসে পড়েন। প্রায় তিন বছর তিনি এই পেশায় নিয়োজিত। এখন তার সংসার বেশ ভালই চলছে। মুনজুরা খাতুন খাতুনের মতো বাজারে মাছ কুটছেন আছিয়া খাতুন, বেদানা খাতুন, চলন্তিকা, ববিতা খাতুন ও রিজিয়া।

চলন্তিকা খাতুন জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ কাটলে তার আয় হয় তিনশ টাকা। কোন কোন দিন ৫০০ টাকাও আয় হয়। তবে শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকার কারণে মাছের চাহিদা বেশি থাকে। সরকারী কর্মকর্তারা বাজার থেকে বেশি বেশি মাছ কুটে বাড়ি নিয়ে যান বলেও চলন্তিকা জানান।

রিজিয়া খাতুন জানান, ছোট বড় সবার কাছে মাছ খুবই প্রিয়। অনেকেই ছোট বড় মাছ কিনতে চান কিন্তু বাড়িতে কুটতে ঝামেলা হয়। এ জন্য মাছ কিনে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি নিতে চান না। বেদানা খাতুন জানান, ছোট মাছ প্রতি কেজি তারা ৫০ টাকা করে কুটে থাকেন। এ ছাড়া বড় মাছ কুটে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি পারিশ্রমিক নেন।

মেহেদী হাসান নামের এক সরকারী কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি মানুষের সংসারে দৈনন্দিন কিছু না কিছু কাজ থাকে। বাসায় স্ত্রী ও কাজের বুয়ারা এখন আর মাছ কাটতে চান না। বিশেষ করে বর্তমান জামানার মেয়েরা মাছ কাটার মতো কাজ করতেই চান না। ফলে গৃহকর্তারা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে মাছ কেটে নিয়ে যান। এতে সংসারে শান্তিও বজায় থাকে।

কৃষি কর্মকর্তা মিলন ঘোষ জানান, এমনিতেই সারা দিন তাদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাসায় কাজের লোকের সমস্যা রয়েছে। মেয়েরা রান্নাবান্নার আর ঘর গৃহস্থলীর মতো জরুরি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই সময় বাঁচাতে তিনি বাজার থেকে মাছ কিনে কেটে নিয়ে যান। এতে করে বাড়তি কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না।

গৃহবধু মিনারা আসিফ জানান, এখন তো টাকা দিয়েও কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। তাই সময় বাঁচাতে বাজর থেকে কেনা মাছগুলো কেটে নিয়ে যান। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম মধু জানান, নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ কেটেও যে সংসার চালানো যায় এটা একটা নতুন আইডিয়া।

তিনি বলেন, নানা পেশায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। আগে স্ত্রী ও মা চাচিরা বাড়িতে মাছ কাটতেন, এখন সেটা বানিজ্যিকীকরণ হয়েছে। আগামীতে হয়তো মেশিনের মাধ্যমে মাছ কাটার প্রযুক্তি আবিস্কার হবে।

(একে/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test