E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরার নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে আব্দুল মালেক

২০২৩ ডিসেম্বর ০৩ ১৮:৪৯:০৮
জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে আব্দুল মালেক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের নবারুন বালিকা উচ্চ বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোঃ আব্দুল মালেক গাজীর দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে। ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোঃ আজাহারুল ইসলাম সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ অভিযোগ করেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৯১ সালে আব্দুল মালেক গাজী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ও ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষা বর্ষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে স্নাতকের সাময়িক সনদ অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ জুন সাতক্ষীরা শহরতলীর বাটকেখালির কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটর) হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় তার কোন কম্পিউটার সার্টিফিকেট ছিল না। যোগদানের পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি তিন মাস মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করলেও তিনি ছয় মাসের সনদ অর্জণ করেননি।

শিক্ষক নিয়োগের পর আবেদন সাপেক্ষে বিষয় অনুমোদনের পর এমপিও ভুক্তি হতে হয়। কিন্তু ২০০১ সালের ২০ নভেম্বর স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার বিষয় খোলার আবেদন করেন। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক নবম ও দশম শ্রেণীতে কম্পিউটার বিষয় খোলার চিঠিতে সাক্ষর করেন । এর আগেই নিয়ম বহির্ভুতভাবে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর আব্দুল মালেক গাজী এমপিওভুক্ত হন। এ যেন রাম জন্মানোর আগেই রামায়ন লেখা।
বেসরকারি শিক্সা প্রতিষ্ঠান নীতিমালার জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ি সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার), (সরকারি নিয়ম অনুযায়ি কম্পিউটার শিক্ষা প্রবর্তিত হলে) হতে হলে তাকে এসএসসি, এইচএসসি ও ¯œাতক সকল শ্রেণীতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস থাকতে হবে। তাকে নট্রামস বা সরকার অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সনদ সংগ্রহ করতে হবে। পরে তিনি ২০০৫ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক পাশ করেন। চাকুরিতে যোগদানের ১২ বছর পর ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করা নিয়োগকালিন শিক্ষাযোগ্যতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বেআইনি।

একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে তাকে অবশ্যই ১২ বছর শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু সহকারি শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১০ বছর ১০ মাস আট দিন শিক্ষকতা করার পর তিনি অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন।

বিএড পাশ না থাকলে একজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সূযোগ না থাকলেও ২০০৬ সালে কালো তালিকায় ওঠা ও সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড সনদ ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করে যাচ্ছেন আব্দুৃল মালেক গাজী। এমপিও শীট ও বিদ্যালয়ের রেজুলশেনে তার নাম আব্দুল মালেক হলেও শিক্ষা সনদে তার নাম আব্দুল মালেক গাজী। যাহা ১৯ বছরেও সংশোধন না করায় ওই দুই নাম একই ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০৮০ জন ছাত্রীর প্রত্যেকের নিকট থেকে ভর্তি ফি এক হাজার ২০০ টাকা,সেশন চার্জ এক হাজার ২০০ টাকা, মাসিক বেতন শ্রেণী হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বছরে দুটি পরীক্ষার ফি ৩৩০ থেকে ৪০০ টাকা নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রধান শিক্ষক ৪৯ লাখ ৩৯ হাজার ৪২০ টাকা হিসেবে নয় বছরে প্রায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮০ টাকা পকেটস্ত করেছেন। এ ছাড়া খন্ডকালিন ২৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে গও ঘ বিভাগ খুলে তাদেরকে দিয়ে কোচিং ক্লাস খুলে নিয়ম বহির্ভুতভাবে কোচিং নিতে বাধ্য করিয়ে বহু টাকা উপার্জন করেছেন আব্দুল মালেক গাজী। ওইসব খ-কালিন শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাবদ প্রতিজনকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকার ফর্মে সাক্ষর করিয়ে দিয়েছেন নাম মাত্র টাকা।

এ ছাড়া ২০২০ সালে দুদকে অভিযোগ করলে সেখান থেকে মাউশির নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি তদন্ত প্রতিবেদন ওই বছরের নভেম্বর মাসে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে অনিয়ম ও দূর্ণীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দৃুল মালেক গাজী রবিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ১০ বছর ধরে এ ধরণের অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় করা হচ্ছে। তিনি ওইসব দপ্তরে যথারীতি তার কাগজপত্র দাখির করে যাচ্ছেন।

নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজনীন আরা নাজু রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি দুই মাসেরও বেশি সময় রোটারী ক্লাবের কাজে ঢাকায় অবন্থান করছেন। আব্দুল মালেক গাজীর বিরুদ্ধে আনীত এ ধরণের অভিযোগ তার জানা নেই। তিনি বিদ্যালয়ের সামগ্রিক সম্মানের বিষয় খেয়াল রেখে আগামি ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী সাতক্ষীরায় এসে পরিচালনা কমিটির সকলের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।

সাতক্ষীরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহজাহান কবীরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার ফোন ব্যস্ত পাওয়া যায়।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test