E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ভৈরবে ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজের অনিয়মের অভিযোগ

২০২৩ ডিসেম্বর ১৩ ১৪:৫২:৪১
ভৈরবে ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজের অনিয়মের অভিযোগ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কাজে না আসলেও আমরা তাদের হাজিরা তুলে দিই এমনটাই বললেন ১১নং অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প মানিকদী পূর্বকান্দা প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। তিনি আরো বলেন, আমার প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৫ জন কাজ করে এরই মধ্যে ছালেহা মেম্বারের ঘরের ২ জন আছে। তাড়াতো কোনো কাজ করে না। তাদের হাজিরাও আমার এখানেই উঠে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের আওতায় প্রথম পর্যায়ের ৪০ দিনের কর্মসূচীর মধ্যে ১৯টি মাটিকাটার প্রকল্প শুরু হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ দিন যাবত মাটিকাটার কাজ চলছে। এসব কাজের জন্য জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি ৪শত টাকা করে। এ কর্মসূচীর আওতায় মোট ১ হাজার ২৩ জন শ্রমিক কাজ করবেন। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৬৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। সকল প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় বাধ্যতামূলক সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও কোনো প্রকল্পেই সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। কাজ করতে গিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মেন্দিপুর এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জন্য ১শত ১১ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান প্রকল্পের সর্দার আদম খাঁ।

এ বিষয়ে সাদেকপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরকার মোহাম্মদ সাফায়েত উল্লাহ মুঠো ফোনে বলেন, এ রাস্তাটি ছিল আমার নির্বাচনী ওয়াদা। তাই শ্রমিকের সাথে ভ্যাকুসহ কাজটি সম্পন্ন করছি। তিনি আরো বলেন, ভ্যাকু দিয়ে কাজ করতেছি। ভ্যাকুর বিল এখান থেকে যে কোন ভাবে একটা মিলমাল করে পরিশোধ করব।

এ দিকে আগানগর ইউনিয়নের ৩নং প্রকল্প লুন্দিয়া চরপাড়া এলাকায় মাটি ভরাটের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জামাল শিকদারকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আগামীকাল এখানে এসে আমার সাথে দেখা করুন। পরক্ষণেই একই ইউনিয়নের আরেকটি ২নং প্রকল্প আগানগর উত্তরপাড়া এলাকায় কোন শ্রমিক কাজ করতে যায়নি। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, শ্রমিকরা আজ কাজে আসেনি। আগানগর ইউনিয়নের অপর ৪নং প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য হামিদ মিয়ার সাথে কাজের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। যদি বন্ধ না রাখি তাহলে কিছু খরচপাতি জোগানো সম্ভব হয় না।

শিমুলকান্দি ইউনিয়নের প্রকল্প নং ৫ রাজাকাটা আমিন নগর ও ৬নং প্রকল্প গোছামারা সহ ৭নং প্রকল্প মধ্যেরচর রাজ্জাক চেয়ারম্যানের মাদ্রাসার সামনে এবং ৮নং প্রকল্প চাঁনপুর তেলু মিয়ার বাড়ি চকবাজারের রাস্তা নির্মাণের মোট ১৪৩ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও এ ৪টি প্রকল্পের কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে ইউপি সদস্য আলামিনের সাথে দেখা হলে সাংবাদিকদেরকে চেয়ারম্যানের অফিসে যেতে বার বার অনুরোধ করেন তিনি।

গজারিয়া ইউনিয়নের ৯নং প্রকল্পের কাজ দেখতে গেলে সেখানেও কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। পরে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য রাশিদ মিয়ার সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শ্রমিকরা কবরস্থানের কাজ করতেছে। একই ইউনিয়নের ১০নং প্রকল্পের রাস্তায় গিয়ে কাজের কোনো অস্তিত্ব না মেলায় প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য বাদল মিয়াকে ফোন করলে তিনি জানান, তার প্রকল্প অন্য জায়গায় চলতেছে।

শিবপুর ইউনিয়নের ১৬নং রঘুনাথপুর এলাকায় রাস্তা নির্মাণের ৫০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে ১৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। একই প্রকল্পের লীল মিয়া মেম্বারের বাড়ি হতে মোছা মিয়ার বাড়ি ভায়া সুজনের বাড়ি পর্যন্ত মাটি ভরাটের কথা থাকলেও সেখানে কাঁচা রাস্তার পরিবর্তে রয়েছে পাকা রাস্তা যেখানে এ প্রকল্পের কাজ করার কোন সুযোগ নেই। ১৭নং প্রকল্পের শিবপুর ইউনিয়নের আওয়াল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ৫৫ জন শ্রমিকের কাজের পরিবর্তে এখানে ২৫ থেকে ৩০ জনের মত লোক কাজ করে থাকে এর বেশি হয় না।

শ্রীনগর ইউনিয়নের সর্দার আবুল হক বলেন, ১৮নং প্রকল্পে ১৩ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেলেও একই প্রকল্পে মোল্লা বাড়ি হতে সোলায়মানপুর পর্যন্ত কাজের কোন আলামত মেলেনি। ১৯নং প্রকল্প বাউসমারা হতে সোনারামপুর ভায়া কবরস্থান হয়ে শ্রীনগর পর্যন্ত রাস্তা মাটি ভরাটে ৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকতের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছু বলবো না। পরে আবারো যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোনে করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তালিকা অনুযায়ী কাজ না করলে শ্রমিকদের কাজ ছাড়া বিল নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যে সব প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু করে নাই সেই প্রকল্পের কোন বিল দেয়া হবেনা। পাশাপাশি প্রকল্প গুলো তদন্ত করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বদলি জনিত কারণে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

(এসএস/এএস/ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test