E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামালপুরে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

২০২৩ ডিসেম্বর ২০ ১৩:৪০:০৪
জামালপুরে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের মাদারগঞ্জে সামিউল ইসলাম ডিপটি নামে এক সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে কৌশলে ব্যাংকচেকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা চাইতে গেলে নানা হুমকি-ধামকিসহ তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগে জানা গেছে, ঠিকাদারি কাজে যাতায়াতের মাধ্যমে সামিউল ইসলাম ডিপটির সাথে পরিচয় হয় জামালপুর পৌরসভার শেখেরভিটা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামছুল হকের ছেলে অভিযোগকারী রিফাত আল মামুন প্রিন্সের। সামিউল ইসলাম ডিপটি মাদারগঞ্জের চরপাকেরদহ ইউনিয়নের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি মাদারগঞ্জের চরপাকেরদহ ইউনিয়নের দিকপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে প্রধান শিক্ষক বলে পরিচয় দিতেন। দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকের পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাদারগঞ্জের সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) খুরশেদ আলমের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি (দুদক) মামলা চলমান রয়েছে।

ভুক্তভোগী ঠিকাদার রিফাত আল মামুন প্রিন্স বলেন, সামিউল ইসলাম ডিপটি পেশায় তিনি একজন শিক্ষক হলেও আমাদের কাছে পরিচয় দেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারী। তিনি নাকি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের চাচাতো ভাই। মন্ত্রণালয়ে তার অনেক ক্ষমতা, মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা নাকি তার কথায় উঠে বসে। তিনি কাজ পাইয়ে দিতে না পারলে আর কেউ পারবে না। তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকার একটি কাজ পাইয়ে দিতে পারবেন বলে জানান। আর এর জন্য তিনি আমাদের কাছে ১৬ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তিনটি চেকের মাধ্যমে তাকে ১০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।

প্রথম দেওয়া তিনটি চেকের টাকাও ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিয়েছে। গত ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর রিফাত আল মামুন প্রিন্সের তমালতলা শাখা অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব নং-০২০০০১৭৩৫৬২১৭ থেকে ২ লাখ টাকা, একই বছরের ১১ ডিসেম্বর মাসে মো. মনিরুজ্জামান মিলুর ব্র্যাক ব্যাংক জামালপুর শাখার হিসাব নং-২৩০১১০৫০৯৭৫২৯০০১ থেকে ৪ লাখ টাকা এবং একই বছরের ২১ ডিসেম্বর মাসে শামীম রেজা রিপনের ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাব নং-১১৭৫০০১০৪৭২৬১ থেকে আরও ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেন ডিপটি। এছাড়াও আরেকটি ৬ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয় তাকে। সেই চেকটিও কৌশলে ডিজওনার করায় ডিপটি। পরবর্তীতে কয়েক মাস পর ৬ লাখ টাকার চেকটি ফেরত দিলেও প্রথমবার নেয়া ১০ লাখ টাকা আজও ফেরত দেয়নি ডিপটি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন সামিউল ইসলাম ডিপটি একজন প্রতারক। আরো অনেকেই তার প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ডিপটি ভুক্তভোগী ঠিকাদার রিফাত আল মামুন প্রিন্সের টাকা ফেরত না দিতে একদিকে তালবাহানা অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে প্রিন্সকে হয়রানি করার জন্য উল্টো প্রিন্সের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ করেন। মেলান্দহের মাহমুদ ইউনিয়নের মির্জা আজম উচ্চ বিদ্যালয়ের বন্যা আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজটি করেন প্রিন্স তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ডিপটি তার পরিচিতি যুবলীগনেতা আরিফুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে সেই কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ডিপটির প্রতারণার শিকার আরিফুল ইসলাম সেই অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মির্জা আজম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, মেলান্দহের পিআইও ও ত্রাণ অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলীর সামনে অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে মির্জা আজম উচ্চ বিদ্যালয়ের বন্যা আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজটি তদন্ত করে সেই কাজে কোন প্রকার দুর্নীতি পান নাই মর্মে প্রতিবেদনও দিয়েছেন।

এদিকে ঠিকাদার রিফাত আল মামুন প্রিন্সের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে গত ১১ আগস্ট জামালপুর পিডিবি অফিসের মেলান্দহ উপজেলার চারবানিপাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ভুট্টু, নয়ানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন, মাদারগঞ্জের গুনারিতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সাজু ও জামালপুর পৌসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. হেলাল উদ্দিনসহ ৩০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে এক সালিস বৈঠকে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন সামিউল ইসলাম ডিপটি। ওই বৈঠকে ৩০ আগস্টের মধ্যে সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও আজও সেই টাকা ফেরত দেননি তিনি।

রিফাত আল মামুন প্রিন্সসহ তার ব্যবসায়ী পার্টনাররা অভিযোগ করে আরো বলেন, ডিপটির দেওয়া হুমকিসহ নানান বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা জামালপুর সদর থানা পুলিশকে বিস্তারিত জানাই। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি সামাজিকভাবে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসার কথা থাকলেও ডিপটি সাড়া দেয়নি। উল্টো তিনি আমাদের হয়রাণী করার উদ্দেশ্যে গত ৬ নভেম্বর জামালপুর কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। যার নং ১৫০০(১)২০২৩ সি.আর (অপহরণ)। ডিপটির কাছ থেকে টাকা আদায় করতে না পেরে এবং নানাভাবে তার অপকৌশলের শিকার হয়ে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শুধু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত নয়, নানা সময়ে ডিপটি আমাদেরকে নানাভাবে হয়রাণিসহ হুমকি প্রদান করছে। এতে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রতারক সামিউল ইসলাম ডিপটির কাছ থেকে আমাদের টাকাগুলো আদায়সহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার প্রধান শিক্ষকের পদে কোন গেজেট ছিলো না। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও ওই বিদ্যালয়ের নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করে একটি মামলাও করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, মাদারগঞ্জের দিকপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক সামিউল ইসলাম ডিপটির বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান থাকায় স্কুলসহ তিনি গেজেটভুক্ত হতে পারেননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সামিউল ইসলাম ডিপটি এ প্রতিবেদককে বলেন, ঠিকাদার রিফাত আল মামুন প্রিন্স বা কাউকে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি। এ ব্যাপারে কারো কাছে যদি প্রমাণ থাকে তাহলে মামলা করে টাকা আদায় করতে পারে তারা। আমি দিকপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করতাম। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি। হলে আমিতো চাকরি করবো। ওই বিদ্যালয় নিয়ে কোনো মামলা মোকদ্দমা নেই। আমাকে সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করার বিষয়টিও সঠিক নয়। মাদারগঞ্জের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার খুরশেদ আলমের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

(আরআর/এএস/ডিসেম্বর ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test