ঝিনাইদহে সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ : দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ও পরিবহন ব্যবসায়ী আবু সেলিম মিয়ার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেরিনা খাতুন ও রিপা কর্মকার নামে দুই যুবতীকে জন্য আটক করেছে। মেরিনা খাতুন মাগুরার শালিখা উপজেলার সামিয়ারপাড়া গ্রামের মন্টু মণ্ডলের মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। 

অন্যদিকে আরেক স্বামী পরিত্যক্তা রিপা কর্মকার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের রবি কর্মকারের মেয়ে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবারে এই দুই যুবতী নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানার পরিচয় দেন। এদিকে এ ঘটনায় আরো এক নারীকে খুঁজছে পুলিশ। রহস্যজনক ওই নারী সেলিমের দুর্ঘটার খবরটি মেরনা ও রিপাকে প্রথম ফোন করে জানায়।

প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ শহরের হামদহ আলফালাহ হাসপাতালের সামনে এক নারীর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে মাথায় আঘাত করে দ্রুত গতিতে চলে যায়। এরপর থেকে আবু সেলিম মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। তার স্বজনরাও বিষয়টি নিয়ে ছিল অন্ধকারে। সেলিমের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেরিনা ও রিপার গতিবিধি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। প্রথমে তারা নিজেদের ভুল ঠিকানার পরিচয় দেন।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেলিমের হামদহ এলাকার ফ্লাটে পাশাপাশি বসবাস করতেন এবং অজ্ঞাত এক নারীর মোবাইল পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞান ও মুমুর্ষ অবস্থায় সেলিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান। অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে সেলিমের কেন এবং কি নিয়ে বাদানুবাদ হলো তা নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন থাকার কথা কিন্তু সেলিমের শরীরে মাথার পেছনে গভীর আঘাত ব্যতিত আর কোন ক্ষত চিহ্ন নেই বলে পুলিশ জানায়।

নিহতের জামাই ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বগুড়া থেকে ফিরে এসে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আলফালাহ হাসপাতাল এলাকায় যান তার শ্বশুর। কাজ শেষে করে রাস্তা উপরে তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে কে বা কারা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাত দুইটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্ত্রী মমতা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যা করা হতে পারে। তিনি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নিত করার দাবী জানান। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ও আশপাশের সিসি ক্যামেরা যাচাই করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হবে।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় মেরিনা ও রিপা নামে দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। আরো এক নারীকে আমরা খুজছি। আশা করছি দ্রুত মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার হবে। এ ঘটনায় নিহত’র স্ত্রী মমতা খাতুন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র মনে করছে ব্যবসায়ীক শত্রুতা অথবা নারীঘটিত কারণে সেলিম মিয়াকে হত্যা করা হতে পারে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০২৩)