E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ভৈরবে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ

একটি মন্দিরসহ অর্ধশত দোকান বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট

২০২৩ ডিসেম্বর ২৫ ১৭:১৬:৪৫
একটি মন্দিরসহ অর্ধশত দোকান বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশত বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষে সদ্য নির্মিত গৌর গোবিন্দ মন্দিরের টিনের বেড়া কুপিয়ে খুলে নিয়ে যায়। তাছাড়া রাস্তার পার্শ্ববর্তী হিন্দু বাড়িগুলিতেও ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তাদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা গুরুতর। 

গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌর শহরের পঞ্চবটি বউ বাজার ও জগন্নাথপুর গাইনহাটি এলাকার মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম, ভৈরব পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ।

খবর পেয়ে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে পঞ্চবটি ও জগন্নাথপুর গাইনহাটির মধ্যে কাঠেরপুল এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের পঞ্চবটি পুকুর বউবাজার এলাকার আপন মিয়া ও জগন্নাথপুর গাইন হাটি এলাকার রায়হান মিয়ার মধ্যে ২৩ ডিসেম্বর শনিবার রাত ১১টায় গাইনহাটি এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে ঝগড়া হয়। পরে ২৪ ডিসেম্বর রোববার রাত ১টায় গাইন হাটির এলাকার রায়হান ও হুসেনসহ ১০/১২ জন ও পঞ্চবটি এলাকার আপন ও রাজনসহ ৪/৫ জনের আবারো মারামারি হয়। ২৪ ডিসেম্বর রোববার বিকালে দুইপক্ষের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মিমাংসা করে দিলে পরক্ষণেই উভয় পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পঞ্চবটি ও গাইন হাটি এলাকার ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গাইনহাটি এলাকার জাহাঙ্গীরের অবস্থা গুরুতর। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষে আহতরা হলেন গাইনহাটি এলাকার জাহাঙ্গীর, জুনায়েদ, নাহিদ, লিটন, নাহিদ, লাদেন, দিলু, লিলু, খুরশিদ, শুক্কুরসহ ১৫ জন ও পঞ্চবটি এলাকার মাইনউদ্দিন, আপন, রাহুল, রিফাত, রাজিব, সাগর, নিরব, রাকিব, আশিক, শাহজালাল ও রাহাতসহ ১৫ জন।

স্থানয়ীরা জানান, ২৩ নভেম্বর রাতে দুই যুবকের ঝগড়া হয়। পরদিন বিকালে মিমাংসা হলেও তারা উভয়পক্ষ দা, বল্লম, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে নিরপরাধ ৫০টি বাড়িঘর দোকাপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

অটো গ্যারেজ মালিক লিটন মিয়া বলেন, দুই এলাকার ঝগড়া আমার কি অপরাধ? আমার দুইটি অটো রিক্সা ও ব্যাটারীসহ মোট দুই লক্ষ টাকার মালমাল নিয়ে গেছে সংঘর্ষকারীরা। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। তারা এলাকার অর্ধশতাধিক দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা নিরপরাধ মানুষ কিছু বখাটেদের কারণে আজ না খেয়ে মরবো।

পঞ্চবটি এলাকার আপন ও রাজন বলেন, ‘গাইনহাটি এলাকার রায়হান ও হুসেনসহ কিছু বখাটে যুবক আমাদের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে বাধা দেয় আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে মারধোর করে। পরদিন বিকালে সালিশ দরবার করতে গেলে তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।

গাইনহাটি এলাকার নজরুল মিয়া জানায়, রাতের ঝগড়ায় গাইনহাটির হুসেন আলী প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর হামলা করে আপনসহ তার বন্ধুরা। বিকেলে নজরুল মিয়ার চা দোকানে দরবার শালিশ শেষে উভয় পক্ষের যুবকরা উত্তেজিত হয়ে একজন আরেকজনের উপর চড়াও হলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

ভৈরব উপজেলা পূজা উদযাপনর কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস জানান, এলাকায় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু সদ্য নির্মিত মন্দিরটি ভাঙ্গার বিষয়টি দুঃখজনক।

ভৈরব পৌর ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র মমিনুল হক রাজু বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষ। স্থানীয়রা মীমাংসাও করে। পরে সন্ধ্যায় শুনি সংঘর্ষ হচ্ছে। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সংঘর্ষকারীরা সদ্য নির্মিত একটি মন্দির, হিন্দু সম্পপ্রদায়ের বাড়ি ঘরসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর করে।

(এসএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test