E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটার খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদ আবারো উত্তপ্ত 

সুপ্রিম কোর্টে এক সপ্তাহ পেছালো রিভিউ পিটিশনের শুনানি

২০২৪ জানুয়ারি ০৪ ১৮:৩১:০৭
সুপ্রিম কোর্টে এক সপ্তাহ পেছালো রিভিউ পিটিশনের শুনানি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির এক হাজার ৩১৮ বিঘা জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনের রায় এর বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ দাবিদারদের রিভিউ পিটিশনের শুনানী এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার রিভিউকারী আনছার আলীদের পক্ষের আইনজীবী মধু মালতী চৌধুরী বড়ুয়া নির্বাচনের কারণে সময়ের আবেদন করায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শুনানির দিন আগামি সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেন।

এদিকে ২০১০ সালে পারুলিয়ার জসীমউদ্দিনের দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ -২য় আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেড ডিভিশনে হেরে যাওয়ার পর রিভিউকারি (রিভিউ -১৬৮/২১) আনছার আলী. নজরুল ইসলাম, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, আব্দুল আজিজসহ কয়েকজন রায় বিপক্ষে যাবে এটি নিশ্চিত হয়ে তড়িঘড়ি করে সন্ত্রাসী সাবেক ইউপি সদস্য মোকারম শেখ ও সালাম চেয়ারম্যানের ছেলে আজিজুরের নেতৃতে আকরাম হোসেন, কালু ডাকাত, সাইফুল মনির হোসেন ওই জমি গত সোমবার সন্ধ্যায় দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বুধবার সন্ধ্যায় তারা আবারো ওই জমি দখলে নিলে বেগতিক বুঝে ওই জমির একাংশ কাজী গোলাম ওয়ারেশ, ডাঃ নজরুল, রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের কাছ থেকে নলতার চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, কাশীপুরের মিলন, নোড়ার আনারুল, তার শ্যালক রবিউলসহ কয়েকজন বুধবার রাতে পিছনের তারিখ দেখিয়ে নাম কা ওয়াস্তে লিজ নেয়। ওই কাগজ মূলে নলতার চেয়ারম্যান, মাছ আনারুল, মিলন এর ভাড়াটিয়া লোকজন অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আজিজ, মোকারম শেখ, আকরাম হোসেন ও কালু ডাকাত, সাইফুলসহ দখলদারদের ধাওয়া করে। এ সময় নোড়ার আনারুলের বাড়ির পাশে।সখীপুরের সালাম চেয়ারম্যানের ছেলে আব্দুল আজিজকে তারা পিটিয়ে জখম করে। তবে এখনো উভয়পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আগামি সপ্তাহে সিভির রিভিউ পিটিশন ১৬৮/২১ এর শুনানীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১নং আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড এমডি. নুরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রকাশ থাকে যে, খলিষাখালিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৩১৮ বিঘা জমিতে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাপমারা খালের দু’পাশের ভূমিহীনসহ এক হাজারের বেশি পরিবার বসবাস শুরু করে। এরপর থেকে ওই জমির মালিক দাবিদাররা ভূমিহীনদের নামে থানায় একের পর এক ফৌজদারি মামলা দেন। ওই জমি খাস জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবিতে খলিষাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, অ্যাড, ফাহিমুল হক কিসলু, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, সিপিবি নেতা আবুল হোসেনসহ বিভিন্ন বামপন্থী নেতাগণ আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন।

২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান খলিষাখালির ৪৩৯দশমিক ২০ একর জমি নিয়ে পারুলিয়ার জসীমউদ্দিনের এসএ রেকর্ড সংশোধন ও খাস জমি হিসেবে পরিণত করার দেঃ ১৮/১০ নং টাইটেলশুটের মামলায় সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ আদালত-২ এর বিচারক এসএম মাহাবুবর রহমান ওই জমি লাওয়ারিশ জমি হিসেবে ঘোষণা করে খাস সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে দেখভাল করার জন্য ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ভূমি সচীব ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কে নির্দেশ দেন মর্মে সভায় উপস্থাপন করেন।

পুলিশ সুপার আরো বলেন যে, ওই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, হাইকোর্টে হেরে যান জমির মালিক দাবিবদাররা। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে এপিলেড ডিভিশনে ২৫৬৮/১৭ আপিল মামলার রায় ডাঃ নজরুল ইসলাম, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদসহ অন্যদের বিপক্ষে যায়। ওই জমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশন। কথিত জমির মালিকরা ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬৮/২১ নং রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। জমির মালিক দাবিদারদের সুপ্রিম কোর্টের সিভিল রিভিউ মামলাটি শুনানী না হওয়া পর্যন্ত তাদের জমিতে কোন স্বত্ব নেই দাবি করে সেখানে বসবাসরত আট শতাধিক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করা যাবে না মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , পুলিশ সুপারের মতামতকে উপেক্ষা করে বিশেষ সুবিধাভোগী সরকারি কৌশুলী শম্ভুনাথ সিং এর মতামত অনুযায়ি ওই জমি কথিত জমির মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রেজুলেশন করা হয়। বাধ্য হয়ে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি খলিষাখালি ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আনারুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সাতজনকে বিবাদী করে মহামান্য হাইকোর্টে ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানী শেষে আদালত ওই জমি থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ না করে ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি খলিষাখালির ভূমিহীনদের উচ্ছেদের জন্য দুই প্লাটুন পুলিশ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। স্থিতাবস্থা থাকালিন নবাগত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে কথিত জমির মালিকরা ৭৮৫ টি ভূমিহীন পরিবারের ঘরবাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে বিরান ভূমিতে পরিণত করে। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় কোন মামলা করতে পারেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীনরা জানান,আন্দোলন সংগ্রামের একপর্যায়ে নোড়ারচকের ভূমিহীন মুজাহিদ ও পারুলিয়ার প্রাইভেটকার চালক আনারুল ইসলামকে মোবাইল কোর্টে আটক করে দেবহাটা থানায় রাখার হকি স্টিক দিয়ে মুজাহিদের ডান পা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লার বিরুদ্ধে। ভূমিহীন ফজলু মোড়ল ও বাবলুকে রাতে যথাক্রমে খলিষাখালি ও নোড়ারচকের বাাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পরদিন সকালে পারুলিয়া জেলেপাড়া এলাকা থেকে ৫৪ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠান দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ। খলিষাখালির ভূমিহীন সাইফুলকে আশাশুনির রদরতলা মাছের সেট থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর ৮০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়।

২০২২ সালের ৩ নভেম্বর আশাশুনির বদরতলা মাছের সেট থেকে ব্যবসায়ি ইউনুস আলীকে দেবহাটা থানার পুলিশ জোরপূর্বক মোটর সাইকেলে করে তুলে এনে দেবহাটার পারুলিয়া জেলেপাড়ার পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটার পাশ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও দুই রাউগুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওইদিন জেলে পাঠায় দেবহাটা থানা। খলিষাখালির জমির মাালিক দাবিদারের দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের মামলায় ৩ নভেম্বর খালাস পাওয়া ভূমিহীন ও স্বেচ্ছাস্বেক লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও মুর্শিদকে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল কোর্টের তিনতলা থেকে ডেকে এনে নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে ডিবি পুলিশ কোর্ট চত্ত্বর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। বিকেলে তাদেরকে দেবহাটা থানায় নিয়ে রাত ১২টার দিকে দেবহাটার অনিল স্বর্ণকারের পরিত্যক্ত আমবাগানে ডাকাতির চেষ্টাকালে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে একটি ওয়ান শুটার গান ও সাত রাউ- গুলিসহ অস্ত্র আইনে ও ডাকাতির চেষ্টার পৃথক মামলা দিয়ে ৪ নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। এসব ঘটনা সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ তার পত্রিকা দৈনিক বাংলা’৭১ এ প্রকাশ করেন। যদিও পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার বিষয়টি সর্বদাই অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে ওইসব মিথ্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

৩ নভেম্বর ইউনুস আলী, শরিফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও মুর্শিদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ভিডিওসহ খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মোঃ মহিউদ্দিনকে পরদিন অবহিত করেন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ওই সাংবাদিককে রাতে হুমকি ধামকি দেন। ৫ নভেম্বর সাতক্ষীরায় পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে আদালত থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া খালাসপ্রাপ্ত আসামীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. অজয় সরকার, অ্যাড. মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী ও আইনজীবী সহকারি কবীর হোসেন সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় ইউএনডিপির কর্মশালা চলাকালে রঘুনাথ খাঁকে বিকেল তিনটা ১৩ মিনিট ও তিনটা ৩৯ মিনিটে মোবাইলে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি ও জীবননাশের হুমকিসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউ-েশন এবং আইন ও শালিস কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বড় বাজার থেকে কাচা সবজির বাজার করে পুরাতন সাতক্ষীরার কুদ্দুস আলীর মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার সময় দিবানৈশ কলেজ মোড় ও পিএন স্কুল রোডের মাঝামাঝি জায়গা থেকে সাতক্ষীরা সদর থানার তঃকালিন পুলিশ পরিদর্শক তারেক ইবনে আজিজ ও উপপরিদর্শক লোকমান হোসেন ওই সাংবাদিককে মোটরসাইকেল থেকে নামতে বাধ্য করেন। পরে তাকে পুলিশ বহনকারি মোটরসাইকেলে তুলে শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। এসময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল তারা কেড়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা একটি কালো রংয়ের প্রাইভেট কারে তুলে তাকে খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদ এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বিকেল ৩টার দিকে দেবহাটা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাতে রঘুনাথ খাঁ’র ছবি থানা লকআপ থেকে মোবাইলে ধারন করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত রঘুনাথ খাঁ’র সন্ধান না পাওয়ায় প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যাণার্জী, দৈনিক পত্রদূতের অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, আজকের পত্রিকার আবুল কাশেম, বাংলা ’৭১ এর সম্পাদক প্রবীর শিকদার ও ওই পত্রিকার বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি, এমএসএফ এর নির্বাহী পরিচালক বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. সুলতানা কামাল, আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, সিপিজে, ডয়েচ ভয়েল, আর্টিকেল নাইন্টিনসহ আন্তজার্তিক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, জাসদ নেতা প্রভাষক ইদ্রিস আলী, বাসদ নেতা শিক্ষক নিত্যানন্দ সরকার, শ্রমিক ফেডারেশন নেতা মকবুল হোসেন, বাবুলিয়া স্মৃতি সংসদের কাওছার আলী, সাংবাদিক চন্দন চৌধুরী, রেজাউল করিম ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠণের চেষ্টায় রঘুনাথ খাঁকে আটকের ১০ ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে সন্ধ্যায় খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদ থেকে রাস্তার উপর গাছের গুড়ি ফেলে ঘের লুটপাটের সময় ককটেলসহ গ্রেপ্তার করেছে মর্মে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাম নেতাদের অবহিত করেন।

২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রঘুনাথ খাঁ ও সমীরন সরকার নামের এক চেক ডিজঅনার মামলার আসামীকে একইসাথে পুলিশ পিকআপে তোলার আগে সামনে ও পিছনে হাতকড়া পরিয়ে বিভিন্ন স্টাইলে ভিডিওচিত্র ধারন করা হয়। এরপর তাদের দুজনকে পুলিশ পিকআপে তুলে রঘুনাথ খাঁ’র দুই চোখ বেঁধে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে একটি ঘরে নিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, ডিবি পুলিশের তৎকালিন ওসি বাবলুর রহমান খান ও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানসহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে চোখ বেঁধে দু’ পায়ের তলায় , মুখম-ল, ঘাড় ও হাতে নির্যাতন করা হয়। দুই কানে কয়েক দফায় ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে লিখলে কারাফটক থেকে ধরে এনে ট্রাকের চাকার তলায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান।

পরে বিকাল ৪টার পর দেবহাটার খলিষাখালির ঘেরের লুটপাট ও বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩), ২৫-ডি তৎসহ বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩/৪/৬ ধারায় একটি(৮নং) ও চাঁদাবাজির অভিযোগে(৯নং) আরও একটি মামলা দেওয়া হয়। সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক তারেক তার বহনকারি মোটর সাইকেল চালক কুদ্দুসকে ২৪ জানুয়ারি দু’ দফায় থানায় তুলে এনে ২৩ জানুয়ারি সকালে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ'কে তিনি খলিষাখালিতে নিয়ে যাননিসহ শিখিয়ে দেওয়া বিভিন্ন কথা ভিডিও করে নেন। বিকেলে তাকে নিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ না খোলার জন্য ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক শ্যামল চৌধুরী ও প্রিয় গোপাল বস্ত্রালয়ের মালিক জিতেন ঘোষ রঘুনাথ খাঁ’র বাসায় এসে দুই লাখ টাকা জারপূর্বক রেখে যান। পরদিন তারা রঘুনাথ খাঁর সঙ্গে জেলখানায় দেখা করে পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেন। ২৯ জানুয়ারি রঘুনাথ খাঁ’র জামিন হওয়ার পর ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শ্যামল চৌধুরী ও জিতেন ঘোষ ওই দুই লাখ টাকা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হন(ভিডিওসহ)।

একইভাবে তাদেরই উদ্যোগে রঘুনাথ খাঁ ২৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। নির্যাতনের কারণে মুক্তির পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত রঘুনাথ খাঁ সাতক্ষীরা কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test