E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইল -১, ২, ৩ ও ৪ আসন

টাঙ্গাইলে নৌকায় ঈগলের ছোবল আর ট্রাকের ধ্বাক্কা

২০২৪ জানুয়ারি ০৪ ১৮:৪৩:০০
টাঙ্গাইলে নৌকায় ঈগলের ছোবল আর ট্রাকের ধ্বাক্কা

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও বিএনপি ও সমমনা দল গুলো নির্বাচন বয়কট করায় ভোটের মাঠে ঘরের মানুষের সাথে ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি সংসদীয় আসনে নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধে আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। তাদের কেউ ঈগল প্রতীকে আবার কেউবা ট্রাক প্রতীকে ভোট যুদ্ধ অবতীর্ণ। আর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারনে বিএনপি বা তাদের সমমনা দলগুলোর অনুপস্থিতিতে টাঙ্গাইলে ৫ থেকে ৬ টি আসন হারাতে পারে আওয়ামী লীগ। কারন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বা স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন।

টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী-মধুপুর) আসনকে টাঙ্গাইলের ৮ টি আসনের মধ্যে নৌকার 'সেইফ জোন' হিসাবে মূল্যায়ন করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্ভার রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক।এ আসনে দল ছুট পাখি আনোয়ারুল হক। প্রার্থী হওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এ কারনে তার সঙ্গে নেই স্থানীয় বিএনপির কোন নেতাকর্মী। মাইকে প্রচার ছাড়া তার কোন নির্বাচনী কার্যক্রম নেই। অপর তিন প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আলী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ফারুক আহাম্মেদ ও জাকের পার্টির রফিকুল ইসলাম নামে মাত্র নির্বাচনে আছেন কার্যত তারা মাইকিং ছাড়া আর কোন কার্যক্রম করছেন না। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৩ হাজার ৬৫১ জন। আর এ কারনেই টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসন কে নৌকার 'সেইফ জোন' হিসাবে মনে করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে মোট প্রার্থী ৬ জন। ৬ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য ছোট মনির (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদারের (ঈগল) সমর্থনে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছে নেতাকর্মীরা। ঈগলের ছোবল থেকে নৌকাকে রক্ষা করতে মরিয়া সংসদ সদস্য ছোট মণির সমর্থিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বিগত দিনগুলোতে স্ব স্ব এলাকার উন্নয়ন সাধারণ ভোটারদের মাঝে তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদারের (ঈগল) সমর্থনে ভোট প্রার্থনা করছেন সাধারণ মানুষ। আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ওরফে ঠান্ডু। তিনি গোপালপুর উপজেলা পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

বাকি আরো ৪ প্রার্থী

গণফ্রন্টের গোলাম সরোয়ার (মাছ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ রেজাউল করিম (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম (আম) ও জাতীয় পার্টির মো. হুমায়ুন কবীর তালুকদারের (লাঙ্গল) উল্লেখ যোগ্য কোন কার্যক্রম নেই।

এ আসনটিতে ঈগলের ছোবল বসতে পারে নৌকার পালে - এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৭ জন।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে মোট প্রার্থী ৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মো. কামরুল হাসান খান (নৌকা) এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনে জয় লাভ করলে ঘাটাইলের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলোর সম্পন্ন করা। ঘাটাইল উপজেলাকে সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তোলা ও জনসাধারণের প্রাণের দাবি পুরণে ঘাটাইলে একটি আইটি পার্ক স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বচনী মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া নৌকার প্রচারণায় ছোট পর্দা ও বড় পর্দার এক ঝাঁক জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন ডা. কামরুল হাসান খান।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা (ঈগল) সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর বাবা বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানকে নৌকা প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা খান পরিবারের অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। ফলে জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই।

আসনটিতে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও লড়াই হবে নৌকা আর ঈগলের মধ্যে। এরই মধ্যে দু'পক্ষের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, হুমকি-ধমকি সহ উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল হালিম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. জাকির হোসেন (নোঙ্গর), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) মো. সাখাওয়াত খান সৈকত (চাকা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. হাসান আল মামুন সোহাগ (আম) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলেও তেমন কোন কার্যক্রম নেই।

এ আসনটিতেও ঈগলের ছোবল বসতে পারে নৌকার পালে - এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯৮ হাজার।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে মোট প্রার্থী ৮ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার (নৌকা) প্রতীকে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এলাকায় 'ঠান্ডু ভাই ' হিসাবে সুপরিচিত। রাজনীতি তার ধ্যান-জ্ঞান আর আওয়ামী লীগ তার রসদ। তিনি কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তার সুদক্ষ নেতৃত্বেই সুসংগঠিত কালিহাতী আওয়ামী লীগ। তিনি মনোনয়ন পেয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সরাসরি তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী হওয়ায় গণসংযোগে পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (ট্রাক) মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি বলেছেন -কালিহাতীর মানুষ যারা লাঞ্ছিত হয়েছে-বঞ্চিত হয়েছে- তাদের ক্লান্তি দূর করবো। তাদের জন্য আমি সব আবর্জনা ট্রাকে তুলে ভাগারে ফেলে কালিহাতী পরিস্কার করবো। আমার যে’কটা দিনের জীবন আছে এই মাঠে দাঁড়িয়ে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি- আমি কোন অন্যায়ের কাছে, কোন অনিয়মের কাছে মাথানত করবোনা। বাংলার মানুষের অধিকার, বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং কালিহাতীর মানুষের শান্তির প্রয়োজনে আমার জীবন দান করবো।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা (ঈগল) সাবেক মন্ত্রী এবং মহান স্বাধীনতার ইশ্তেহার পাঠক প্রয়াত শাহাজাহান সিরাজের মেয়ে। শুক্লা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তাঁর বাবা শাহাজাহান সিরাজ ছাত্রলীগ, জাসদ, গণফোরাম, বিএনপি যখন যে দল করেছেন তার অনুসারীরা সেই দলেই ঠাই নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পরও রয়ে গেছে অনেক ভক্ত। শাজাহান সিরাজের অনুসারীদের সাথে নিয়ে সারওয়াত সিরাজ শুক্লা ওরফে শুক্লা সিরাজ ঈগল প্রতীকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা তার বাবা শাজাহান সিরাজের অনুসারীদের পাশে পেয়েছেন। তিনি শতভাগ আশাবাদী ভোট দিয়ে কালিহাতীর জনগণ তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করবে।

অপর ৫ প্রার্থী

জাকের পার্টির মোন্তাজ আলী (গোলাপ ফুল), জাতীয় পার্টির মো. লিয়াকত আলী (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. শুকুর মামুদ (একতারা) ও জাতীয় পার্টির(জেপি) প্রার্থী সাদেক সিদ্দিকী (বাইসাইকেল) নির্বাচনী মাঠে তেমন কোন কার্যক্রম নেই। তারা নির্বাচনী মাঠে তেমন কোন সাড়া ফেলতে চেষ্টা করেননি।

এ আসনটিতে ত্রিমুখী ভোট যুদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এ আসনটিতে ঈগলের ছোবল আর ট্রাকের ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে তো 'নৌকা'? এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫২ হাজার।

(এসএম/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test