E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে যে কারণে জনপ্রিয় এমপি মনোরঞ্জনশীল গোপালের পরাজয়

২০২৪ জানুয়ারি ০৮ ১৮:৫৭:২৪
দিনাজপুরে যে কারণে জনপ্রিয় এমপি মনোরঞ্জনশীল গোপালের পরাজয়

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর (বীরগঞ্জ-কাহারোল)-০১ আসনের চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরিচিত মুখ মনোরঞ্জন শীল গোপাল এবার নৌকার পাল তুলতে পারেননি। নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছেই তাকে হারতে হয়েছে। তার এই পরাজয় নিয়ে দলটির নেতাকর্মী এছাড়াও অনেকে অবাক হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপটে তিনি হেরেছেন।

দিনাজপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে দিনাজপুর(বীরগঞ্জ-কাহারোল)-০১ আসনে ট্রাক প্রতীকে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.জাকারিয়া এক লাখ ১৫ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোরঞ্জনশীল গোপাল পেয়েছেন এক লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ ভোট।
এছাড়াও লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাহীনুর ইসলাম ৪৮৬ ভোট,বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির আব্দুল হক ৩৩৭ ভোট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো.জহুরুল ইসলাম পেয়েছেন ২৮৭ ভোট পেয়েছেন।

এ আসনে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮২৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়াগ করেছেন, ২ লাখ ২৫ হাজার ৭২৭ জন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৬০২ ভোট। ভোট প্রদান ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
মনোরঞ্জশীল গোপালের উত্থান নিয়ে অনেক চড়াই উতরাই ও চমকপ্রদ কাহিনী রয়েছে।

মনোরঞ্জন শীল গোপাল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ( জাগপা) করতেন। ২০০৫ সালের ৫ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দিনাজপুর-১ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত অষ্টম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মনোরঞ্জন শীল গোপাল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির আবদুল হক পেয়েছেন ২৪ হাজার ৮৭৩ ভোট। সে সময়ে এই আসনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। মোট ভোট পড়ে ৪১.৮০ শতাংশ।

দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (হুঁকা প্রতীক) হয়ে জয় পেয়েছিলেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল। নির্বাচিত হয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে। অটোরিকশায় চড়ে একজন সংসদ সদস্যের অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার বিষয়টি সেদিন বিভিন্ন গণমাধ্যম ঘটা করে প্রচার করেছিল। সেই নেতা এখন চড়েন ৪০ লাখ টাকার গাড়িতে। হয়েছেন জমি ও প্লটের মালিক। গত ১৫ বছরে এই সংসদ সদস্যের আয় বেড়ে ২২ গুণ হয়েছে। নগদ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯৬ গুণ। পাশাপাশি তাঁর স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোরঞ্জন শীল তাঁর হলফনামায় স্থাবর সম্পদ বলতে কেবল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের দিনাজপুরের কাহারোলে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছিলেন। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় কৃষি ও অকৃষি মিলিয়ে ১৬ একর জমি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য এর মধ্যে ৬ একর কৃষিজমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। এ ছাড়া রাজউকে ৯ কাঠার একটি প্লট আছে তার।

দিনাজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালকে মনোনয়ন না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ২০১৮ সালে ওই আসনের আওতাধীন বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের কতিপয় নেতা।

বীরগঞ্জ-কাহারোল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের ব্যানারে সেই সময় এনিয়ে বীরগঞ্জের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে তারা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের তিনি পুনর্বাসন করেছেন।

সেই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বীরগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঈশ্বর চন্দ্র রায়, কাহারোল উপজেলা কমিটির সম্পাদক নির্মল চন্দ্র রায়।

উপস্থিত ছিলেন প্রভাস চন্দ্র রায়, দিনবন্ধু রায়, দেবেন কুমার সরকার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কাহারোল শাখার সভাপতি বিজয় মহন্ত, সম্পাদক শ্যামাকান্ত দেবশর্মা ও মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র রায় সহ অন্যরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নীতি এবং বিএনপির বর্জনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.জাকারিয়া জাকার কৌশলে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেশি ছিলো এই আসনে।

এবার এ আসনে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮২৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়াগ করেছেন, ২ লাখ ২৫ হাজার ৭২৭ জন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৬০২ ভোট। ভোট প্রদান ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যা দিনাজপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। জনপ্রিয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপালকে পরাজিত করতে বিএনপি এবং জামায়াতের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া জাকাকে ভোট দিয়েছেন।

তাছাড়া, মনোরঞ্জনশীল গোপাল ভেবেছিলেন,তিনি ছাড়া তার আসনে স্থান দখল করার আর যোগ্য ব্যক্তি নেই। এ কারণে তিনি মিডিয়ার লোকজনদেরকে তেমন কর্ণপাত করতেন না। এমনটাই বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনাজপুরের একজন বর্ষিয়ান সাংবাদিক।

এজন্য বড় মাশুল দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মনোরঞ্জন শীল গোপালকে।
নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবং জামায়াতের কিছু অংশ ভোটারের সমর্থন এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং চারবারের সংসদ সদস্য জনপ্রিয় ব্যক্তি মনোরঞ্জন শীল গোপালকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া জাকা।

কিন্তু ট্রাক প্রতীকের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া জাকার সমর্থক তা উড়িয়ে দিয়েছেন।বলেছেন,এবার নির্বাচনের রায় হয়েছে অন্যায়-জুলুম-দুর্বৃত্তয়ানের বিরুদ্ধে। সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ ভোট হওয়ায় সাধারণ ভোটারেরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পেরেছেন।

(এসএস/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test