E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগরে নির্বাচন পরবর্তী একাধিক হামলা-মামলার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত

২০২৪ জানুয়ারি ১৭ ১৬:৪০:২৮
নবীনগরে নির্বাচন পরবর্তী একাধিক হামলা-মামলার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত

বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর একাধিক হামলা ও মামলার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বাড়ছে। নির্বাচনোত্তর একাধিক হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত পরপর তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন গত ৭ জানুয়ারি উপজেলার বাশারুক গ্রামে সদ্য বিদায়ী সাবেক এমপি এবাদুল করিমের সমর্থক ও অনুসারি হিসেবে পরিচিত বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হাতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। এ হামলার ঘটনার পাঁচদিন পর সলিমগঞ্জে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে গত ১২ জানুয়ারি একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবেক এমপি এবাদুল করিম বুলবুলসহ তাঁর অনুসারি নেতা কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু সভা শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সলিমগঞ্জেই সাবেক এমপির গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাবেক এমপির পিএ সাইফুর রহমানের গাড়িটি ভাংচুরসহ সোহেলকে মারধর করা হয়। তবে সোহেলকে যারা ওইদিন মারধর করেছে, তাদের উপর সোহেলের লোকজনই বরং হামলা করেছে, এমন অভিযোগও তোলা হচ্ছে।

পরপর সংঘটিত এসব হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে মোট তিনটি মামলা করা হয়েছে। যার দুটি থানায় এবং অপরটি আদালতে করা হয়।

জানা যায়, ভোটের দিন হামলার পর গত ১৩ জানুয়ারি থানায় প্রথম মামলাটি হয়। এ মামলার বাদী হন সাবেক এমপির অনুসারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেন সাদেক। মামলায় ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারীসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

এরপর গত ১৪ জানুয়ারি সদ্য বিদায়ী সাবেক এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) সাইফুর রহমান সোহেল বাদী হয়ে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মোমিনুল হক সাঈদকে ১ নম্বর আসামি করে ১০ জনের নামে থানায় দ্বিতীয় মামলাটি করেন।

সবশেষে গতকাল ১৬ জানুয়ারি বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের অনুসারী মোমিনুল হক সাঈদের (দ্বিতীয় মামলার ১ নম্বর আসামি) পক্ষে মনির মিয়া (দ্বিতীয় মামলার ৮ নম্বর আসামি) বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুত বিচার আদালতে তৃতীয় মামলাটি করেন। এ মামলায় সাবেক এমপি'র পিএ সাইফুর রহমান সোহেলকে ১ নম্বর আসামি দিয়ে ৯ জনকে আসামি করা হয়।

নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম প্রথম ও দ্বিতীয় মামলা দুটি থানায় এবং তৃতীয় মামলার আইনজীবি রাকিব হোসেন আদালতে মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ আসনের সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য (দ্বিতীয়বার) ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদলের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বললে, তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন,' সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলাকার শান্তি শৃংখলা কেউ বিনষ্ট করতে চাইলে, কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।'

এ বিষয়ে প্রথম মামলাটির বাদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেকের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, 'গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নিজ এলাকা বাশারুকে ভোট দিয়ে ফেরার পথে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী আমার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। মূলত আমাকে হত্যার উদ্যেশেই এ হামলা করা হয়।' এ মামলায় বর্তমান এমপির অনুসারী লাউর ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারী লিয়াকত আলী জুয়েলসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

এদিকে দ্বিতীয় মামলার বাদী সাইফুর রহমান সোহেলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, 'উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গত শুক্রবার সলিমগঞ্জে একটি প্রতিবাদ সভা হয়। এতে সাবেক এমপি এবাদুল করিম বুলবুল প্রধান অতিথি ছিলেন। কিন্তু সভা শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সলিমগঞ্জ বাজারেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ নেতা, স্থানীয় বাসিন্দা মমিনুল হক সাঈদের হুকুমে তার সশস্ত্র ক্যাডাররা সাবেক এমপির গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এতে আমার গাড়িটি ভাংচুর ও আমাকে মারধর করা হয়।'

তবে এ মামলার ১ নম্বর আসামি কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমার কোন অনুসারী সোহেলকে মারধরের সঙ্গে সেদিন মোটেই জড়িত না। মূলত: সাবেক এমপির পিএ সোহেল বিগতদিনে এলাকার বহু মানুষের কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। টাকা প্রদানকারী ওইসব বিক্ষুব্ধ লোকজনই তার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে।'

তিনি জানান, শুক্রবার এলাকায় আমি সভা করতে আসার সময় আমার লোকজনের উপর সাবেক এমপির পিএ সোহেলের লোকজনই বরং হামলা চালায়। ফলে হামলার শিকার মনির মামলাও করে।'

এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, 'দুটি মামলার তদন্ত চলছে। পাঁচটি মটরবাইক জব্দসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাবেক এমপি'র পিএ সোহেলের মামলায় ১ নম্বর আসামি মোমিনুল হক সাঈদ ছাড়া বাকী সবাই ইতিমধ্যে জামিন নিয়েছেন। আর জাকির হোসেন সাদেকের মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে শুনেছি, আদালত থেকে এই মামলায়ও ৬/৭ জন জামিন পেয়েছে।’ তবে ওসি জানান, আদালতে দায়ের হওয়া তৃতীয় মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন।

(জিডি/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test