E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপাসিয়ায় আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন প্রতিমন্ত্রী রিমি

২০২৪ জানুয়ারি ২০ ০০:০৩:২৭
কাপাসিয়ায় আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন প্রতিমন্ত্রী রিমি

সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান দরদরিয়ার প্রত্নস্থান ‘দরদরিয়া দূর্গ বা রানির বাড়ি’ খনন কাজে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খনন শুরুর একমাসের মধ্যেই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি টিম শুক্রবার বিকালে সমবেত হাজারো লোকজনের সামনে খননে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুর আনুষ্ঠানিক উপস্থাপন করেছেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সূফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ২৫ জন শিক্ষার্থী গত ২৬ ডিসেম্বর ওই খনন কাজ শুরু করেছিলেন।

খননে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. নুহ্-উল-আলম লেলিনের সভাপতিত্বে অধ্যাপক ড. সূফি মোস্তাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন ইতিহাস ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক আফরোজা খান মিতা, স্থানীয় রায়েদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সফিকুল হাকিম মোল্লা হিরন প্রমুখ।

ঐতিহাসিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্নতত্ত্ব স্থান সমৃদ্ধ কাপাসিয়ায় পদ্ধতিগত ভাবে ইতঃপূর্বে যথেষ্ট প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান ও খননকাজ হয়নি। বিভিন্ন সাহিত্যিক, সূত্র, কথ্য ইতিহাস এবং খননে আবিষ্কৃত বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর ধরন থেকে জানাযায়, কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন প্রত্নস্থান রানির বাড়ি দরদরিয়া, রাজা বাড়ি, টোক, হানগড়, লোহাদিয়া, কর্ণপুর দূর্গ, জোড়া দিঘি, রাণীগঞ্জের নীলকুঠি, টোকের সুলতানপুরে দরগাপাড়া শাহী জামে মসজিদ সহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাবে অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ব স্থানের প্রামাণিক ইতিহাস সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না। খ্রীস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মিশরীয় জোতির্বিদ ও ভৌগোলিক টলেমির গ্রন্থে তোগমা, এন্টিবোল, হাতিবন্ধ প্রভৃতি শহর বা নগরের উল্লেখ রয়েছে। কোন কোন ঐতিহাসিক কাপাসিয়ার টোক নামক স্থানে তোগমা শহরের অবস্থান ছিলো বলে মনে করেন।

জেমস্ টেলর ১৮৪০ সালে তাঁর একটি গ্রন্থে তোগমা বা টোক শহর ব্রম্মপুত্রের তীরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে তোগমা বা টোক শহর রাজা শিশুপালের সময়ে বন্দর ছিল। জেমস্ টেলর তাঁর গ্রন্থে কাপাসিয়ার দরদরিয়ায় বানার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত একটি দূর্গের কথা উল্লেখ করেছেন। বলা হয়, দূর্গটি বানিয়া রাজা কর্তৃক নির্মিত হয়েছে।

দূর্গটির বহিঃস্থ প্রাচীর মাটি দ্বারা নির্মিত। প্রচীরের উচ্চতা ১২-১৪ ফুট। প্রাচীরের পরিধ প্রায় দুই মাইল এবং পরিখা প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ত। দূর্গের ৫টি প্রবেশদ্বার ছিল, তবে ইট বা পাথর নির্মিত প্রবেশদ্বার বা তোরণের কোন চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। প্রাচীরটি অর্ধচন্দ্রাকারে নির্মিত। এই প্রাচীরের কিছুটা দূরে আরেকটি প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। দুটি ইটদ্বারা নির্মিত প্রাচীর। এই প্রাচীরটিও অর্ধচন্দ্রাকারে নির্মিত।

অনুমান করা হয় যে এই প্রাচীরে তিনটি প্রবেশদ্বার ছিল। দূর্গটি রানির বাড়ি নামে পরিচিত। বলা বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর রানী ভবানী ১২০৪ খ্রীস্টাব্দে মুসলিম অভিযানের সময় এই দূর্গে বসবাস করেছিলেন। জেমস্ টেলরের মতে, এটিই ঐতিহাসিক একডালার দূর্গ।

বাংলার দ্বিতীয় স্বাধীন সুলতান শামস্উদ্দীন ইলিয়াস শাহ্ ১৩৫৩ খ্রীস্টাব্দে দিল্লীর সূলতান ফিরোজ শাহ্ কর্তৃক আক্রান্ত হলে এই একডালা দূর্গে অবস্থান নেন। দিল্লীর সূলতান ফিরোজশাহ্ তুঘলক ২২ দিন অপেক্ষা করেও বাংলার দ্বিতীয় স্বাধীন সূলতান শামস্উদ্দীন ইলিয়াস শাহ্কে পরাস্ত করতে পারেনি।

ইতিহাসে একডালা দূর্গের কথা উল্লেখ থাকলেও আজ পর্যন্ত তা সুনির্দিষ্ট ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বলা হয়ে থাকে যে মসলিন কাপড়ের উৎপাদনের কাঁচামাল কার্পাস তূলার প্রসিদ্ধ স্থান হলো কাপাসিয়া। অথচ আজ পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে তা প্রমাণ করা হয়নি।

উল্লেখ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ২০০০ সালে তাদের পরিক্ষার অংশ হিসাবে এক সংক্ষিপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন রিপোর্ট প্রকাশ করননি।

(এসকেডি/এএস/জানুয়ারি ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test