E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে এক সপ্তাহের মজুত বিরোধী অভিযানে সরবরাহ কমে বেড়েছে ধানের দাম

২০২৪ জানুয়ারি ২৪ ১৫:০১:১০
দিনাজপুরে এক সপ্তাহের মজুত বিরোধী অভিযানে সরবরাহ কমে বেড়েছে ধানের দাম

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখলে দিনাজপুর প্রশাসনের এক সপ্তাহের মজুত বিরোধী অভিযানেও কোন কাজ হয়নি ভোক্তাদের।

বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করেছে চালের। ধান-চাল সিন্ডিকেট খ্যাত মজুতদারের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন।পরিত্যক্ত ভিন্ন ভিন্ন গোডাউন ও বাসা-বাড়িতে মজুত রেখেছেন ধান।ফলে অভিযান চালিয়েও কাজ হচ্ছেনা প্রশাসনের।

১৮ জানুয়ারি প্রথমদিন অভিযানের পর দাম কমলেও গত দুইদিন ধরে ধানের বাজার গুলোতে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। পরিবর্তন নেই চালের বাজারের।
চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ১৭ জানুয়ারি খাদ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দিনাজপুরে ১৮ জানুয়ারি থেকে অভিযান শুরু করে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। অভিযানের শুরুর দিনেই বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারী) বিরল উপজেলার পাইকপাড়া বাজ এলাকায় ওরিয়েন্টাল এগ্রো হাস্কিং মিলের গুদামঘরে অভিযান চালিয়ে গুদামঘর সিলগালা করে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। অভিযান সাড়া পড়ে যায় ধানের এই জেলায়। এতে করে পরের দিনই দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানের হাটে অস্বাভাবিক বেড়ে যায় ধানের সরবরাহ। বস্তা প্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম কমে যায় ৩'শ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। টানা চারদিনের অভিযানের পর সোমবার থেকে ধানের বাজার আবারও ফিরতে শুরু করেছে আগের অবস্থায়।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিরল বাজার এবং কাশিডাঙ্গা চৌরঙ্গী ধানের হাট সরজমিনে দেখা যায় ধানের সরবরাহ তেমন একটা নেই। কেমে যাওয়া সব ধরণের ধানের বস্তা আবারও ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা করে বেড়েছে। একই চিত্র ছিলো মঙ্গলবার (২৩জানুয়ারি) চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি হাটে।

এর আগের সোমবার (২২ জানুয়ারি) দিনাজপুর সদর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের হাট গোপালগঞ্জের চিত্র ছিলো ভিন্ন। অভিযান শুরুর পরের দিন শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এই হাটে ২৬'শ থেকে ২৭'শ বস্তা ধান উঠলেও সোমবার (২২ জানুয়ারি) ধান আসে মাত্র ৮'শ থেকে ৯'শ বস্তা। গোপালগঞ্জ হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি বিপ্লব কুমার নাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযানের আগের দামের চেয়ে এখনো বস্তা প্রতি দেড়শ থেকে ২০০ টাকা কম রয়েছে।

বিন্যাকুড়ি হাটে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় (১৯ জানুয়ারি) তুলনায় মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ৩'শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা পর্যন্ত। অভিযান শুরুর পর বিআর-৩৪ জাতের ধান প্রতিবস্তা ৫৪'শ টাকা থেকে নেমে ৪৯'শ টাকায় বিক্রি হয়। সেই ধান মঙ্গলবার বিক্রি হয় ৫২'শ টাকা বস্তা দরে। অনুরূপভাবে বিআর-৫১ ধান ২২'শ টাকা থেকে ২৩'শ টাকায়, বিআর-১১ ধান ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩'শ টাকায় সুমন স্বর্ণ ধান ২৩২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৪'শ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থ্যাৎ সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তিন দিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ।

মিল মালিক রেজাউল বলছেন, যারা বিপুল পরিমান ধান কিনে মজুদ রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের আড়াল রেখে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে শুধুমাত্র মিল মালিকদের মিল ও - গুদামে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ মজুদদাররা অভিযানের এই গতিবিধি পর্যালোচনা করেই ধান সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর এ কারনেই বাজারে আবারও সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ধানের 'দাম বাড়তে শুরু করেছে। এই অভিযানের সুফল বয়ে নিয়ে আসতে অবৈধ মজুদদারদের গুদামে অভিযান পরিচালনা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন মিল মালিকরা।

চৌরঙ্গী বাজার হাটে ক্রেতা লিয়াকত আলী জানালেন, কৃষকের ধান এখন লাইসেন্সবিহীন মজুদদারদের কাছে। ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় মিল মালিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে তারা বেশী দামে ধান কিনে মজুদ করেছেন। ধানের বিপুল মজুদ গড়ে এখন তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মিল চালু রাখতে মিল মালিকরাও তাদের কাছে জিম্মি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ১৩ মাইল গড়েয়া, কাহারোল বাজার, বীরগঞ্জ - পৌরসভা হাটখোলা, গোলাপগঞ্জ, কবিরাজহাট, উত্তর গড়েয়া, চিরিরবন্দর কারেন্টের হাট, ফাসিলা, বিরল, বোচাগঞ্জ, ভূষিরবন্দর, বিন্যাকুড়ি বাজারসহ বেশ কিছু এলাকার বিশাল বিশাল গোডাউন তৈরী করে অবৈধ মজুতদাররা হাজার হাজার বস্তা ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন।

খাদ্য বিভাগের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব স্থানে এই অভিযান যদি চালানো হয়, তাহলে বাজারে ধান-চালের দাম কমে আসবে। সাধারন মানুষ ও মিল মালিকদের স্বার্থে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবী জানান তিনি।

দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি-কিছু লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী আছে, যাদের চাল উৎপাদনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারা ধান কিনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তিনি বলেন, প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ মিলগুলোতে অভিযান চালানোর ফলে মিল মালিকরা ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও বেশী দাম দিয়ে ধান কিনছেন কারা ? এটি খুজে বের করতে না পারলে এই ধান আমাদেরকেই পরে বেশী দামে কিনতে হবে।

বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নাফে ধানসহ ভোগ্যপন্য মজুদ করছেন। বর্তমানে মিল মালিকদের চাইতে স্টক বালিকায় ব্যবসায়ীদের গুদামঘরে বেশি ধান আছে। মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে কিনে মজুদ করছেন। পরে মিল মালিকরাই এসব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আরও বেশি দামে কিনছেন।

এদিকে দিনাজপুরে গত ১৮ জানুয়ায়ী থেকে ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত ২০টি অভিযান চালিয়েছে খাদ্য বিভাগ ও প্রশাসন। এই ২০টি অভিযানই চালানো হয়েছে রাইস মিলে, কোন মজুতদারের গুদামে নয়। এই অভিযানে একটি মিলের গুদামে সিলগালা, ৬টি গুদামে ৫৫টি হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে খাদ্যবিভাগ জানিয়েছে, একটি ছাড়া অন্য কোন মিলে অতিরিক্ত মজুদ পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক বলেন, লাইসেন্সবিহিন অবৈধ মজুদদারদের আড়ালে রেখেই অভিযান চালানো হচ্ছে। যার ফলে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ কামাল হোসেন জানান, অভিযানের ফলে ধান বাজারে চলে এসেছে। চালের দাম কমতে শুরু করেছে । আগামী রমজান মাস পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে দিনাজপুর শহরের প্রধান চালের বাজারর বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চালের বাজার গত রোরবার যেমন ছিল তেমনি স্থিতিশীল রয়েছে। অভিযান শুরুর আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরেয় বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছিলো ৭ থেকে ৮ টাকা। পরে কমেছে কেজিতে ২ টাকা। অর্থ্যাৎ ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা।

এখনও তেমনি রয়েছে।কোন পরিবর্তন নেই চালের দামের।

(এসএএস/এএস/জানুয়ারি ২৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test