E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরনদীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের রমরমা অবৈধ বাণিজ্যের শিকার সাধারণ রোগীরা

২০২৪ জানুয়ারি ২৮ ১৭:৩৯:৫৪
গৌরনদীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের রমরমা অবৈধ বাণিজ্যের শিকার সাধারণ রোগীরা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বরিশালের গৌরনদীতে বে-সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিকদের রমরমা ব্যবসায় চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা। নরপোটিক্স লাইসেন্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও পোস্ট ওপারেটিভ রুম না থাকার  অভিযোগে সম্প্রতি গৌরনদীতে বে-সরকারি ২টি হাসপাতালে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বে-সরকারি ক্লিনিকের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত কাঠামো, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক।

সূত্রমতে, ১০ বেডের একটি ক্লিনিকের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শুধু রোগীর ওয়ার্ডের জন্য প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গার আবশ্যকতা রয়েছে। সেই সঙ্গে ওটি রুম, পোস্ট ওপারেটিভ রুম, ওয়াশ রুম, ইনস্ট্রুমেন্ট রুম, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমাণ রুম, অভ্যর্থনাকক্ষ, অফিস রুম, চেইনঞ্জিং রুম, স্টেরিলাইজার রুম, ভান্ডার রুমসহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তত ১৩টি রুম থাকতে হবে। এছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (বিল্ডিং তিনতলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওটি রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধ সমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিন জন ডিউটি ডাক্তার, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে।

স্থানীয় ও আগত রোগীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ১০ থেকে ১২টি ও গৌরনদী বন্দর রোড, টিএন্ডটি মোড় এলাকায়, বাটাজোর হাট, বাকাই হাট ও হোসনাবাদ লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় প্রায় ৪০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।

এমনকি অলিগলিতে ব্যাঙের ছাড়ার মতো গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের প্রাচীর ঘেঁষেই ৮/১০টির মতো ডায়াগনিস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা ও প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই। অধিকাংশ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। বলতে গেলে প্রয়োজনীয় চাহিদার নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই এসব বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে। তার পরও এসব প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন পেয়েছে, নবায়নও হচ্ছে। আর এর সুবাদে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা করছে এসব মানহীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকারি নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট ৮/১০ রুমের বাসাবাড়িতে ক্লিনিক গড়ে তুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চলছে হরদম। স্বাস্থ্য বিভাগের মদদে গড়ে ওঠা মানহীন এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ডসহ গ্রামাঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা করছে প্রতিনিয়ত।

গৌরনদী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওহাব শিকদার বলেন, গৌরনদীর বেসরকারি ১৬টি হাসপাতাল ও ১৪টি গায়াগনিস্টিক সেন্টার আমাদের এসোসিয়েশনের সদস্য। সরকারি বিধিমোতাবেক যে সব হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র সঠিক আছে তাদেরকেই আমাদের এসোসিয়েশনের সদস্য করা হয়। সরকারি নিয়ম নীতি অনুযায়ী ঢাকার পপুলার হাসপাতালও চলতে পারে না। সেখানে উপজেলা পর্যায়ে সম্পূর্ণ সঠিক কি করে চলবে? উপজেলা পর্যায়ে পোস্ট ওপারেটিভ রুম থাকার বাধ্যবাধকতা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান জানান, রেজিষ্ট্রেশন ও নাবায়ন বিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। নরপোটিক্স লাইসেন্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, পোস্ট ওপারেটিভ রুম না থাকার গত ৩ ডিসেম্বর গৌরনদী গ্রিন লাইফ হস্পিটালকে ২০ হাজার টাকা ও বাটাজোর ন্উি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ডক্তরস্ চেম্বারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test