E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিশানবাড়িয়া গইয়ামতলা জঙ্গলে উজাড় হচ্ছে সুন্দরী গাছ

২০১৪ নভেম্বর ১২ ১৫:২৭:২১
নিশানবাড়িয়া গইয়ামতলা জঙ্গলে উজাড় হচ্ছে সুন্দরী গাছ

বরগুনা প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা বরগুনায় প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় সিডর আইলা ও মহাসেনের তান্ডব থেকে রক্ষাকারী সবুজ বেষ্টনির মূল্যবান সুন্দরী গাছ অসাধু কতিপয় বনকর্মকর্তার যোগসাজসে দিনদিন উজার করে দিচ্ছে। প্রকৃতিক লিলাভূমী নিশানবাড়িয়ার গইয়ামতলা জঙ্গল থেকে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের এসব গাছ।

বরগুনা তালতলী উপজেলার বন বিভাগের নিশানবাড়িয়া বন থেকে বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের জোগসাজসে ও স্থানীয় প্রভাবশালী দালালদের মাধ্যমে বন উজাড় করে নিজেদের পকেট ভারি করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বনের মূল্যবান গাছগুলো কেটে নেওয়ায় স্থানীয়রা বাধাঁদিলে তাদেরকে বন আইনে মামলা দেয়ার হুমকিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছেন অসাধু বন কর্মকর্তারা। বন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার জন্য চোরাকারবাড়িদের তথ্য দেয়া ও জড়িত বন কর্মকর্তাদের নাম উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর কারনে স্থানীয় সচেতন বাসিন্দা কালাম মিরের বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরি করেন বিট কর্মকর্তা কামাল হোসেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালতলীর নিশানবাড়িয়া সংরক্ষিত বন থেকে বন রক্ষিদের প্রত্যক্ষ জোগ সাজসে প্রতিদিন হাজার হাজার পিচ সুন্দরী গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। নিশানবাড়িয়ার বন থেকে গাছ কেটে ছোট ছোট নৌকায় করে প্রথমে নেয়াহয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিজামপুর গ্রামের পার্শবর্তী খালের মধ্যে। সুবিধামত সময় ঐখান থেকে দেশের বিভিন্ন যায়গায় সুন্দরী গাছ পাচার করা হয় বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।

জানাযায়, নিশানবাড়িয়া বনের ভিতর পর্যটন স্পট গইয়াম তলায় যিনি ডিউটিরত থাকেন তার কাছে বলে ভোর রাতে চোরা কারবাড়িরা বনের ভিতর ঢুকে গাছ কাটে ওখান থেকে বাহির হয় সন্ধার পর ঐ সময় আবার ওখানে ডিউটিরত বন রক্ষিকে গাছ দেখিয়ে বের হয়ে যান বনদস্যুরা। চোরা কারবাড়িরা গইয়াম তলার খাল ও ফেচুয়ার খাল দিয়া এসব গাছ ট্রলার ও বড় নৌকা যোগে মহিপুর কলাপাড়া ও পটুয়াখালী পাচার করছেন।

স্থানীয় ও বনের ভিতর অবস্থানরত জেলেদের সূত্রে জানাগেছে, পাচঁপিচ সুন্দরী গাছে একছেট যা চোরা কারবাড়িদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ছয়শত টাকায়। এসব গাছ বিক্রি করছেন বনবিভাগের নিশানবাড়িয়া বিটকর্মকর্তা কামাল হোসেন ও বনরক্ষী মিজানুর রহমান (বিএম)। চোরাকারবাড়িদের স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে গাছ বিক্রির টাকা লেনদেন করা হয় বলে জানা গেছে। সপ্তাহে যত গাছ পাচার করা হয় তার টাকা কালেকশন করা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলার মহিপুর বাজারে বসে। আর এ সব টাকা কালেকশন করছেন নিশানবাড়িয়ার বনরক্ষি মিজানুর রহমান (বিএম) ও তার ভাই মহিপুর বন বিভাগের বনরক্ষি নুরুল ইসলাম (বিএম)।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালতলীর নিশানবাড়িয়া সংরক্ষিত বন থেকে বন রক্ষিদের প্রত্যক্ষ জোগ সাজসে প্রতিদিন হাজার হাজার পিচ সুন্দরী গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, নিশানবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সিদ্দিক মেম্বার ও জলিল মিরার মাধ্যমে অসৎ বন কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জেলেরা এ সময় আরো বলেন, সিদ্দিক মেম্বার ফরেষ্টারদের ম্যানেজ করেন বিটঅফিসারের সাথে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আগে মেম্বারি করে পরিবার চালাত আর এখন বন উজাড় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান, স্থানীয় বাসিন্দা কালাম মীর।
এ ব্যাপারে নিশানবাড়িয়া বিট কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা বন থেকে সুন্দরী গাছ কাটছে তবে এ চক্রটি ধরতে আমাদের অভিযান বাড়ানো হয়েছে।
তালতলী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.আ.জলিল বলেন, বন রক্ষার্থে আমাদের জনবলসহ অনেক সমস্যা রয়েছে এ কারনেই বন দস্যুদের ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী উপকূলীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কান্তি দো বলেন, উপকূলীয় বন রক্ষার্থে যে পরিমান জনবলের প্রয়োজন তা আমাদের যথেষ্ট নয়। এ কারনেই চোরা কারবাড়িরা গাছ কাটতে পারে, তবে এ কাজে যদি অফিসের কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব।

(এমএইচ/এটিআর/নভেম্বর ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test