E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবাসীর স্ত্রী-শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৭:৩৩:২৩
প্রবাসীর স্ত্রী-শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩

নবী নেওয়াজ, পাবনা : পাবনা ডিবি পুলিশের অভিযানে চাঞ্চল্যকর চাটমোহর থানার প্রবাসীর স্ত্রী ও শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার ৩ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এসময় একটি স্বর্ণের চেইন (১২ আনা), একজোড়া হাতের বালা, একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল (৬ আনা), একজোড়া স্বর্ণের কানের রিং, দুই জোড়া রুপার নুপুর (৮ ভরি), একটি রুপার পায়েল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা, এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত টিন কাটার কেচি ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মাফলার এবং ওড়না উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- সাদ্দাম হোসেন (২৬), হোসেন আলী (৩৭) ও হুমায়ন মিজী ওরফে হৃদয় (২৮)।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পাবনা জেলার চাটমোহর থানাধীন দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ গত ৭ বছর যাবত মালয়েশিয়া থাকেন। প্রবাসী আব্দুর রশিদ এর স্ত্রী ডিসিস্ট লাবনী খাতুন তার বাড়ী নির্মাণের জন্য গত কয়েক দিন আগে প্রায় ২৫ হাজার ইট ক্রয় করে এবং ব্যাংক হতে নগদ অর্থ উত্তোলন করে বাড়িতে রাখে। ডিসিস্ট লাবনী খাতুন সহ তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদ গত ইং ২৫/০১/২০২৪ তারিখ দিবাগত রাতে খা্ওয়া দা্ওয়া শেষে নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পরের দিন সকাল সাগে ৮ টার দিকে ভিকটিমের ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাব পত্র এলোমেলো দেখে সবাই খোঁজাখুজি শুরু করে। এক পর্যায়ে ভিক্টিম লাবনীর মৃতদেহ ছাগল রাখার ঘরে এবং ১০ বছরের ছেলে রিয়াদের মৃতদেহ বাড়ির পাশে পুকুর পারে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চাটমোহর থানার মামলা নং-২২ তারিখ ২৬/০১/২০২৪ইং ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ রজু হয়।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসীর নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা পাবনা সহ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) গোলাম রসুল সহ উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং চুরি হ্ওয়া মালামাল উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, আসামী হোসেন আলী এবং ভিকটিম লাবনী খাতুন একই গ্রামে বসবাস করেন। আসামী হোসেন লক্ষ্য করেন যে, ভিকটিম লাবনী বাড়ি করার জন্য বেশ কিছু নতূন ইট নিয়ে এসেছে এবং ঘটনার ২ দিন আগে ভিকটিম চাটমোহরে গিয়েছিল ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর জন্য। তার ধারণা ছিল ভিকটিমের কাছে বেশ কিছু নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকার রয়েছে। এই তথ্যটি সে তার আপন ছোট ভাই সাদ্দাম কে দেয়। সাদ্দামের বাড়ি দিঘলিয়া গ্রামে হলেও সে দীর্ঘদিন যাবত শ্বশুর বাড়ি গোপালগঞ্জে বসবাস করে এবং পেশায় একজন দূর্ধর্ষ চোর এবং ছিনতাইকারী। এই তথ্য পাওয়ার পরে ফরিদপুর জেলায় বসবাস রত আর এক চোর হুমায়ুন কবির @ হৃদয় কে সাথে নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারী সকালে ফরিদপুর থেকে রওনা দেয়।

আসামী সাদ্দাম এবং হৃদয় টেবুনিয়াতে অবস্থান করে অপর আসামী হোসেন ভিকটিমের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে থাকে। রাত গভীর হলে হোসেন ফোন করে সাদ্দাম এবং হৃদয় কে ডেকে নিয়ে আসে এবং আনুমানিক রাত ১ টার দিকে আসামী সাদ্দাম এবং হৃদয় ডিসিস্ট লাবনী খাতুন এর বসত বাড়ীতে গাছ বেয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে বাহিরে মেইন দরজা খুলে রেখে ঘরের পিছনে টিন কেটে ঢোকার চেষ্টা করলে ভিকটিম ঘুম থেকে জেগে উঠে এবং কিসের শব্দ ছিল তা জানার জন্য ঘরের দরজা খোলা মাত্রই আসামীরা তাকে ধরে ফেলে এবং কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেরে ফেলে। ইতোমধ্যে তার ১০ বছরের শিশু রিয়াদ ঘুম থেকে উঠেই ভয়ে চিৎকার শুরু করতে থাকলে আসামী সাদ্দাম তাকে পুকুর পাড়ে নিয়ে মাফলার পেঁচিয়ে মেরে ফেলে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য রিয়াদের লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে।

পরবর্তীতে আসামী সাদ্দাম এবং হৃদয় মিলে পুনরায় ভিকটিমের বাড়ীতে এসে ডিসিষ্ট লাবনী খাতুন এর কোমড়ে থাকা চাবি এবং কানে থাকা স্বর্ণের রিং নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে স্টিলের ট্রাংকে থাকা স্বর্ণের চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দুইজোড়া রুপার নুপুর, রুপার পায়েল নিয়ে বাড়ীর পিছন দিয়ে আসামী হোসেন এর বাড়ীর পিছনে লিচু বাগানে যায় এবং অপর আসামী হোসেন এর সাথে দেখা করে তার কাছে ডিসিষ্ট লাবনী খাতুন এর কানের স্বণের রিং রেখে আনুমানিক রাত ৩ টার দিকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা করে। আর এভাবেই মাত্র কিছু স্বর্ণ ও টাকার লোভে ২ টি তরতাজা মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় ৩ জন দূর্ধর্ষ ছিনতাইকারী।

উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারকৃত আসামী সাদ্দাম হোসেন গত অক্টোবর/২০২২ সালে চাটমোহরের ফৈলযানা এলাকায় একজন সিএনজি ড্রাইভারকে (ইসমাইল) শ্বাধরোধ করে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল আসামী ছিল। এ মামলায় সে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা বিচারাধীন আছে।

(এন/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test