E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের আবিস্কৃত কৃত্তিম হাত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাশ্রয়ী মূল্যৈ বাজারজাত করা সম্ভব

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৭:৩৪:৫৭
আগৈলঝাড়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের আবিস্কৃত কৃত্তিম হাত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাশ্রয়ী মূল্যৈ বাজারজাত করা সম্ভব

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : রোবটিক আর্ম বা মানব দেহে সংযোজনের জন্য কৃত্তিম হাত তৈরী করে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় বরিশালে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে আগৈলঝাড়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল। এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রীতম আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের শিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও রাজিহার ইউপি সচিব গৌতম পাল ও গৃহীনি কাজলী পাল এর বড় সন্তান। প্রীতম গৈলা মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী।

গত ২৯ জানুয়ারি বরিশাল সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় রোবটিক আর্ম বা মানব দেহের জন্য কৃত্তিম হাত তৈরী করে তা প্রদর্শন করে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে প্রীতম। প্রীতমের এই এই সাফল্যর জন্য বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিথীকা সরকার এর স্বাক্ষরিত সনদপত্র তার হাতে তুলে দেন অতিথীরা।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম তার এই সাফল্যের জন্য দেখা স্বপ্নর পরিকল্পনা নিয়ে জানায়, একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখতে পায়যে, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধে একটি হাত হারিয়েছেন একজন সৈনিক। ওই সৈনিক একদিন ফিরলেন নিজের স্বজনদের কাছে বাড়িতে। বাড়ি ফেরার পূর্ব অপেক্ষায় স্ত্রী ও শিশু সন্তানেরা। দীর্ঘ দিন পরে বাবা বাড়ি আসছে তাই অধীর আগ্রহে তার অপেক্ষা করে পথ চেয়ে বসে আছে সন্তানেরা। কলিং বেল চাপতেই সন্তানেরা দরজা খুলে দিল। বাবা দাড়িয়ে রয়েছেন দরজার সামনে। সন্তানেরা অপেক্ষ করছে বাবা তাদের জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিয়ে আদর করবে। আবার সন্তানদের ভাবনা এলো বাবা ফুল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে একটি হাত হয়তো তার পিছনে রেখেছে সাপ্ররাইজ দেয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটলো না।

কিন্তু হতভাগ্য বাবা এর কোনটাই যখন করলেন না; তখন সন্তানেরা দেখতে পেল যে তাদের বাবার একটি হাতই নেই। কাটা গেছে। হৃদয় বিদারক দৃশ্যর এমন একটি ভিডিও চিত্র দেখে এমন হতভাগ্য বাবাদের কৃত্তিম হাত তৈরীর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তাদের জন্য কিছু করার। স্বপ্ন দেখা থেকে মানব কল্যানে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্র চিত্তে মনোযোগী হলো ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল। অধ্যাবসায়রে কারণে প্রীতমের সেই স্বপ্ন বাস্তবে ডানা মেলেছে।

প্রীতম আরও জানায়- হোস্টেলে থেকে তার বাবার কাছ থেকে আনা পড়া লেখার খরচ থেকে কিছু অর্থর সঞ্চয় করে প্রথমে এই উদ্ভাবনী কাজে মনোযোগ দেয় সে। কালক্রমে উদ্ভাবনী বিষয়টি তার সহপাঠী ও বাবাও জানতে পারে। বাবা তাকে উৎসাহিত করায় মাঝেমধ্যে বাবার কাছ থেকেও চেয়ে নিত অর্থ। নিজের সঞ্চয় ও পরিবারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় শুরু করে এই রোবটিক আর্ম এর পিছনে। নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের কারণে প্রীতমের দেখা স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয় তার মানব কল্যাণের উদ্ভাবনীতে।

শিক্ষার্থী প্রীতম জানায়- বিভিন্ন দূর্ঘটনায় সারাদেশসহ সারা বিশ্বে অনেক লোকদের তাদের হাত হারাতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য বাকী জীবন তারা কর্মহীন হয়ে পরে। গলগ্রহ হয় অন্যর উপর। এমন মানুষের জন্যই তার আবিস্কৃত রোবটিক আর্ম বা কৃত্তিম হাত মানবদেহে সংযোজন করা যেতে পারে। মানবদেহে এই কৃত্তিম হাত সংযোজন করলে যেখানে মানুষের হাত পৌঁছানো সম্ভব নয় এমন ভারী যান্ত্রিক স্থানেও এই কৃত্তিম হাত অনায়াসে কাজ করতে পারবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই হাত দুই থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম। হেভিওয়েট হাত হিসেবে এর স্থায়ীত্বও অনেক বেশী।

দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরা বিদেশ থেকে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে কৃত্তিম হাত আমদানী করে তার সংযোজন করে আসছেন। তবে ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের উদ্ভাবিত কৃত্তিম হাত তৈরীতে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন তথা মানব দেহে কৃত্তিম হাত সংযোজনের মাধ্যমে একজন মানুষকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য কৃত্তিম হাত বা রোবটিক আর্ম এর যুযোপযোগী উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী মূল্যৈ বাজারজাত করতে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্টপোষকতার জন্য তাঁর উদ্ভাবন নিয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম।

প্রীতমের বাবা ইউপি সচিব গৌতম পাল জানান, তার ছেলের উদ্ভাবন নিয়ে তিনি আনন্দিত। মানব কল্যানে কাজ করায় ছেলের আর্থিক চাহিদা পুরণ করে আসছেন তিনি। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেলে পড়া শুনার পাশাপাশি প্রীতম তার উদ্ভাবনীতে আরও সাফল্য পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের সাহায়-সহযোগীতা প্রার্থনা করেন তিনি।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test